শিরোনাম
\ মো. মামুন ইসলাম \
রংপুর, ১ আগস্ট, ২০২৫(বাসস) : চব্বিশের ২ আগস্ট রংপুরসহ সারাদেশে কোটা সংস্কার ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক নতুন মোড়ে পৌঁছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা জানান শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
এতে চাপে পড়ে সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ে। জনতার ঢলে পিছু হটে গণগ্রেফতার অভিযান। আদালত থেকে একে একে জামিনে মুক্তি পান আটক শিক্ষার্থীরা।
গত বছরের ১ আগস্ট আলফি শাহরিয়ার মাহিম (১৬) জামিনে মুক্তি পায়। সে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষার্থী আবু সাঈদের হত্যা মামলায় তাকে পরিকল্পিতভাবে আসামি করা হয়েছিল।
পরদিন ২ আগস্ট রংপুরের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আরও ৯ শিক্ষার্থীকে জামিন দেন। এর মধ্যে দু’জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ওই দিনই মুক্তি পান সাতজন।
বাকি দু’জন মুক্তি পান ৩ আগস্ট।
জামিন পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন, মাওবিন হাসান মুহিন, রাকিব হোসেন, আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের, আমির হামজা আমির, তৌফিক ওমর ধ্রুব, পাভেল মিয়া, আল মারজান, নিয়াজ আহমেদ রকি ও সৌরভ মিয়া।
আন্দোলনের শুরুর দিকে শহরের বিভিন্ন থানায় দায়ের করা একাধিক মামলায় তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে, ২০২৪ এর ২ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) মূল ফটকের সামনে জড়ো হন। ব্যানার হাতে তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল ও পদযাত্রা শুরু করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকরা এতে সংহতি জানান ও সরাসরি অংশ নেন।
তারা আন্দোলনে নিহতদের বিচার দাবি করেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থী আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি তোলেন। তারা বলেন, সকল গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
সমাবেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তোলেন, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কীভাবে সহিংসতায় রূপ নিল? তারা বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শুধু আমাদের ন্যায্য দাবি তুলেছিলাম। কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ আমাদের ওপর হামলা চালায়, মারধর করে, ভয় দেখায়, এমনকি গুলিও চালায়।’
শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানানো হয়। তারা আবু সাঈদসহ সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করেন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকারকে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে এবং অবিলম্বে নিরাপদ ও সুষ্ঠু শিক্ষাঙ্গণ ফিরিয়ে দিতে হবে।
অন্যথায় এর সম্পূর্ণ দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।
অভিভাবকরা বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা ন্যায্য দাবিতে পথে নেমেছে। কেউ নিহত, কেউ আহত, অনেকে ভয়ে আছে। আমরা চুপ থাকবো না। আমরা তাদের পাশে আছি।’
সমাবেশ শেষে বৃষ্টির মধ্যেই পার্কমোড় থেকে শুরু হয় প্রতিবাদ মিছিল। শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে বৃষ্টিভেজা মিছিলে স্লোগান ওঠে প্রতিরোধের, প্রতিবাদের, আশা ও সংকল্পের।
এর একদিন আগে, ১ আগস্ট বিকালে বেরোবি ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। এর আগে তারা ক্যাম্পাসে নীরব মিছিল করেন। অন্তত ৪৫ জন শিক্ষক এতে অংশ নেন। তারা বলেন, আবু সাঈদসহ সব নিহতের বিচার করতে হবে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে হবে এবং শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হত্যা ও গুমে জনগণের অর্থে পরিচালিত বাহিনী ব্যবহার করেছে সরকার। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ যেভাবে নিজ হেফাজতে থাকা শহীদ আবু সাঈদের লাশ রাতারাতি দাফনের চেষ্টা করেছে, তা পাকিস্তানি আমলের অন্যায়ের কথাই মনে করিয়ে দেয়।’