বাসস
  ০১ আগস্ট ২০২৫, ১০:২১

ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয় কক্সবাজারের সড়ক-মহাসড়ক

ছবি : বাসস

ইব্রাহিম খলিল মামুন

কক্সবাজার, ১ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : ছাত্র-জনতার সম্মিলনে জনসমুদ্রে পরিণত হয় কক্সবাজারের সড়ক-মহাসড়ক। দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের হত্যার বিচারসহ ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে মাঠে নামে শিক্ষার্থীরা ।

১ আগস্ট বিকেল ৩ টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী কক্সবাজার শহরের কালুর দোকান ও হলিডে মোড় এলাকায় জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ কক্সবাজার শহরের বাস টার্মিনালে দীর্ঘ ২ ঘণ্টা কর্মসূচি পালন করেন। পরে সেখান থেকে তারা শহরের প্রবেশদ্বার লিংক রোডে যান। সেখানেও তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভ মিছিলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অংশ নেন অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নগ্নভাবে ব্যবহার এবং সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে এদিন নানা স্লোগানে প্রতিবাদ জানায় বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা।  

‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আমার ভাই খুন কেন, শেখ হাসিনা জবাব চাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’, ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার’, ‘বায়ান্নোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ ইত্যাদি স্লোগানে প্রকম্পিত হয়  কক্সবাজারের রাজপথ।

কক্সবাজার শহরের বাসটার্মিনাল ও লিংকরোডে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি  পালন করে ছাত্র-জনতা। তবে এদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মিছিল ও সমাবেশ স্থলের আশেপাশে নীরবে অবস্থান করতে দেখা যায়। 

কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা আয়ুবুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এক মেয়ে ও দুই ছেলেকে  শুরুতে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করেও আটকাতে পারিনি। এমনকি শেষ পর্যন্ত ১ আগস্ট আমি নিজেও তাদের সাথে আন্দোলনে অংশ নিই। কয়েক ঘণ্টা রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল করি।’ 

তিনি বলেন, ‘তখন পরিবেশটা এমন হয়েছিল, স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করে ঘরে বসে থাকাটা পাপ মনে হয়েছে।’ 

জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে কোটা আন্দোলনের শুরুতে কক্সবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ১৬ জুলাই বেলা ১১টার দিকে মিছিল করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কের লিংকরোড এলাকায় অবস্থান নেয় কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে পর্যটন শহরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ১ আগস্ট পর্যন্ত পৃথক ৭টি মামলায় ৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এসব মামলায় প্রায় ১৫০০ জনকে আসামি করা হয়। 

কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মুরাদ হাসান বলেন, ‘আন্দোলনের শুরু থেকে বাবার উৎসাহে আমরা দুই ভাই আন্দোলনে যোগ দেই। মিছিল শেষ করে বাসায় গিয়ে দেখি বাবা আমাদের জন্য গ্লাসে শরবত নিয়ে বসে আছেন। ১ আগস্ট বিকেলে শেষ পর্যন্ত বাবা নিজেই আমাদের সাথে নিয়ে কক্সবাজার শহরের কালুর দোকান এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন।’ 

কক্সবাজার সাহিত্যিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে সারাদেশ যখন আন্দোলনে উত্তাল, তখন কক্সবাজারে বিশেষ করে শহর এবং শহরতলীতে শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেন অধিকাংশ অভিভাবক। আন্দোলনে যোগ দিতে  দলীয় পরিচয় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।’