শিরোনাম
ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন
নাটোর, ৩১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নাটোরের রাজপথে আন্দোলন মুখর টগবগে তরুণ-তরুণীর রক্তে জোয়ার এনেছিল অসংখ্য স্লোগান। সে সময় শেখ হাসিনার সরকারের নির্দেশে পুলিশ আর ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তবে প্রতিরোধের মুখে বারবার সংগঠিত হয়েছিলেন জুলাই যোদ্ধারা। ছত্রভঙ্গ হয়ে বারবার ফিরে আসার শক্তিই ছিল যেন এসব স্লোগান। এসব স্লোগান ছিল ঐক্যের প্রতীক।
২০২৪ সালের ১৮ জুলাই নাটোরের রেড লেটার ডে। শ্লোগানে মুখর রাজপথে ঐদিন হয় সবচেয়ে বড় আন্দোলন। অনলাইন যোগাযোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ সকাল দশটা থেকে নাটোর প্রেসক্লাব চত্বরে জড়ো হতে থাকেন। ‘রাজপথে মিছিল করা যাবে না, স্লোগান দেওয়া যাবে না’- শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে সে সময় পুলিশ আর তার দলের ক্যাডার বাহিনীর এমন নির্দেশনা উপেক্ষা করেন অকুতোভয় যোদ্ধারা। বিনিময়ে জোটে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট আর হাজারো স্প্লিন্টারের আগ্রাসন।
ভয়ের সংস্কৃতি তৈরির সব ধরনের পদক্ষেপ তখন নিয়েছিল পুলিশ। রাজপথে সমবেত পুলিশ বাহিনীকে সেদিন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল-‘যা গুলি করা লাগে করবেন’।
কিন্তু ভয়কে জয় করে বারবার সংগঠিত হয়েছেন জুলাই যোদ্ধারা। সংগঠিত হয়ে দিয়েছেন রাজপথ কাঁপানো স্লোগান। জনপ্রিয় এসব শ্লোগানের মধ্যে অন্যতম-‘কোটা না মেধা, মেধা, মেধা’, তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’, ‘কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেব রক্ত’, ‘ভুয়া, ভুয়া’ ইত্যাদি।
এ দিন শহরের স্বাধীনতা চত্বরে শ্লোগানে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় কলেজ ছাত্র এ এস এম ইব্রাহীমকে। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্লোগান শুনে আন্দোলনকারীরা সাহস পেয়েছেন। বারবার ছুটে এসেছেন।’
টিয়ার শেল সরাসরি চোখে এসে আঘাত করার ফলে অচেতন হয়ে যাওয়া জুলাই যোদ্ধা মনি ইসলাম বলেন, ‘সে দিনের স্লোগান এখনো যেন শুনতে পাই।’
প্রেসক্লাব চত্বরের আন্দোলনকে বেগবান করতে অনন্য ভূমিকা পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু জাহিদ রাহী। ওইদিন গুলির আঘাতে ছায়াবানী রোডে লুটিয়ে পড়েন তিনি। শহরে প্রচার হয় নিহত হওয়ার খবর। অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও শরীরে এখনো চারশ’ স্প্লিন্টার নিয়ে ব্যথায় কাতর রাহী বলেন, ‘পুলিশের ধাওয়া খেয়ে আমরা রাজপথ থেকে সংযোগ সড়কে আত্মগোপন করেছি। আবার ফিরে এসেছি, স্লোগান দিতে দিতে।’
গণমাধ্যমকর্মী কামরুল ইসলাম বলেন,‘সেদিন আন্দোলনে শুধু ছেলেরাই নয়, মেয়েদেরও অনন্য ভূমিকা ছিল। তাঁরা রাজপথে থেকেছেন। বেলা ১২টার দিকে ছত্রভঙ্গ হয়ে কিছু মেয়ে শিক্ষার্থী নাটোর প্রেসক্লাবে নিরাপদ আশ্রয়ে থেকেছে, স্লোগান শুনে আবার রাজপথে নেমে এসেছেন।’
নাটোর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি আব্দুল মান্নাফ বলেন, ‘১৮ জুলাই রাজপথের স্লোগান আন্দোলনকারীদের উজ্জীবিত করেছে বহুগুণে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে এসব স্লোগান ছিল আন্দোলনের চালিকা শক্তি। ঐ স্লোগানগুলোর মাধ্যমে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হওয়া, অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ন্যায়বিচার ও মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবির কথা বলা হয়েছে। এসব স্লোগান ভবিষ্যতেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগাবে।