বাসস
  ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৩:৩৫

লক্ষ্মীপুরে ছেলেকে গ্রেফতার করায় আতঙ্কিত বাবার মৃত্যু

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সাইফ মোহাম্মদ আলী। ছবি: বাসস

।। আব্বাছ হোসেন ।।

লক্ষ্মীপুর, ৩০ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ২০২৪ সালের ৩০ জুলাই। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ১২টার কাছাকাছি। জেলা শহরের কালু হাজী সড়কে সামছুল আলম মামুন এর বাড়িতে হঠাৎ হানা দেয় পুলিশ। তারা দরজা খুলতে বললে পরিবারের পক্ষ থেকে কারণ জানতে চাওয়া হয়। পুলিশ জানায় তারা আসামি ধরতে এসেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হলেও জোরপূর্বক পুলিশ ঘরে প্রবেশ করে। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র সাইফ মোহাম্মদ আলীকে ঘুম থেকে তুলে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

পুলিশের উপস্থিতিতে পরিবারের অন্যান্যদের শোরগোল ও চিৎকারে ঘুম ভাঙে সাইফের বাবা সামছুল আলম মামুন (৫২)-এর। ছেলেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশকে বাধা দেন তিনি। কিন্তু পুলিশ তার বাধা উপেক্ষা করে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে সাইফকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এসময় আতঙ্কিত হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। ছেলের গ্রেফতার ও স্বামীর মৃত্যুর পর অসুস্থ হয়ে পড়েন সাইফের মা তাহমিনা আক্তার নাসরিনও। এতকিছুর পরও শিক্ষার্থী সাইফ মোহাম্মদ আলীকে ছাড় দেয়নি সেসময়কার পুলিশ । 

জানা যায়, সাইফের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা ছিল না। ছিল না কোন অপরাধ। ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার অপরাধেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। সাইফের বাবার মৃত্যুতে মানবিক আবেদন করেও মুক্তি পাননি সাইফ। বরং সদর থানার নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ওইদিন দুপুরেই মোহাম্মদ আলী সাইফকে আদালতে তোলা হয়। পরে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মো. নোমানের আদালতে সাইফ মোহাম্মদ আলীর জামিন আবেদন করে তার আইনজীবীরা।

সাইফকে আটক করায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে আশঙ্কা থাকলেও ওইদিন সকাল থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর দমনপীড়ন ও গণগ্রেফতার অব্যাহত থাকলেও সেনাবাহিনী শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেয়। সেদিন শহরের প্রতিটি সড়ক শিক্ষার্থীদের দখলে থাকলেও সেনাবাহিনী বাধা দেয়নি।  

সাইফ মোহাম্মদ আলীর মা তাহমিনা আক্তার নাসরিন সেদিনের স্মৃতি স্মরণ করে বাসসকে বলেন, সাইফ কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও ছিল না। পুলিশ জোরপূর্বক আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। এসময় সাইফের বাবা বাধা দিলে আতঙ্কিত হয়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। আমার ছেলের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে বিস্ফোরক ও নাশকতার মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সেই ভয় এখনো কাটেনি। এখনো আতঙ্কে থাকি। পুলিশ দেখলে অনেক ভয় হয়। 

তাহমিনা আক্তার এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করেন ।