শিরোনাম
\ আবুল কালাম আজাদ \
বগুড়া, ২৮ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত বছরের ২৮ জুলাই রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থেকেই কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন সমন্বয়করা। আন্দোলনের চরম মুহূর্তে এমন নির্দেশনায় পুরো দেশ থমকে যায়। সেই ধারাবাহিকতায় বগুড়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু মুহূর্তে তারা ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। নিজেদের দাবি থেকে এক চুলও সরেননি।
ওইদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বগুড়ায় গ্রাফিতি, দেয়াল লিখন ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করে। এর মাধ্যমে শুরু হয় অগ্নিঝরা প্রতিবাদ। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বগুড়ায় মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা ১০ দিন বন্ধ থাকার পর ২৮ জুলাই চালু করা হয়।
তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেবা বন্ধ রাখা হয়। এর মধ্যেই রাস্তায় নেমে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
গত বছরের ২৮ জুলাই বগুড়ায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে ভয়ের সংস্কৃতি জারি রাখা হয়। গ্রেপ্তারকৃদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), ছাত্রদল, জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা।
আন্দোলনকারীরা জানান, আজকের দিন সকাল থেকেই বগুড়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা মাঠে থেকে ছিলেন কড়া নিরাপত্তা দিতে। এর মধ্যেই শহরের বিভিন্ন মোড়ে বিক্ষিপ্তভাবে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। তাদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজপথ।
সারাদেশে অচলাবস্থার কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় চলমান এইচএসসির ২৮, ২৯, ৩১ জুলাই ও ১ আগস্টের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এর আগে, কোটা সংস্কার নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় প্রথমে ১৮ জুলাইয়ের, পরে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড।
এই সুযোগ কাজে লাগান বগুড়ার শিক্ষার্থীরা। তারা একযোগে আন্দোলনে যাওয়ার সুযোগ পান।
প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেই এদিন বগুড়া শহরের কলোনী থেকে পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট এলাকা শিক্ষার্থীদের দখলে ছিল। এই এলাকায় পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনেক সাধারণ মানুষ একাত্মতা জানান। সেখানে দিনভর তারা অবস্থান নেন। ফ্যাসিবাদ সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান চলতে থাকে। আন্দোলন চলা অবস্থায় বেশ কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।
চলে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, শটগানের ছররা গুলিবর্ষণ। ফ্যাসিবাদী সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীর ভয়ভীতিকে আঙ্গুল দেখিয়ে আন্দোলনকারীরা যে যার মতো শহরের মফিজ পাগলার মোড়, জলেশ্বরীতলা, সেউজগাড়ী, বড়গোলা এলাকায় জড়ো হয়। চলে ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া।
এসব ছাড়াও ফ্যাসিবাদ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো চালাচ্ছিল ঘৃনীত কর্মকাণ্ড। তারা আন্দোলনের ভিডিও, ছবি দেখে শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে চেষ্টা চালাচ্ছিল গণগ্রেপ্তার। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্দেশে অনেক অভিভাবককেও হয়রানীও করেছিল গোয়েন্দা সদস্যরা।
আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা গণসংহতির জেলা কমিটির সদস্য সাদিক রেজা জানান, জুলাইয়ের ২০ তারিখের পর থেকে আমরা সাতমাথায় যেতে পারিনি। ২৫ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচির ধরণ ছিল যার যার এলাকা ব্লক করে ফেলা। কারণ তখন কারও সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই।
তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনটা ছিল সামাজিক যোগাযোগমুখী। কিন্তু মোবাইল নেটওয়ার্কের সংকট থাকায় আমাদের এই স্ট্যাটেজি অনুসরণ করতে হয়। আর গুলিতে নিহত, গ্রেপ্তারের ভয় তো ছিলই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে জানা যায়, গতবছর আজকের দিন ডিবি পুলিশ কেন্দ্রীয় ছয় সমন্বয়ককে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা যায়। এই খবরে সবার মধ্যে অনেকখানি হতাশা ও অনিশ্চয়তা শুরু হয়। এরই মধ্যে রাতে ডিবি হেফাজতে তারা জানান কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘটনা।
৬ সমন্বয়ক স্বাক্ষরিত বার্তায় জানানো হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে আহত-নিহত হয়েছেন। এছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ সব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
এরপরেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন চেতনা জাগ্রত হয়। সবাই ফুঁসে ওঠে এক দফা দাবিতে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা নিয়তি সরকার বলেন, আসলে তখন পিছু হটার আর কোনো সুযোগ ছিল না আমাদের। এটা দেশের সব প্রান্তের আন্দোলনকারীরা বুঝে গিয়েছিল। বগুড়াতেও আন্দোলন নতুন গতি পায় ২৮ জুলাইয়ের পর থেকে।