শিরোনাম
\ বিপুল আশরাফ \
চুয়াডাঙ্গা, ২৮ জুলাই ২০২৫ (বাসস): কারফিউ জারির নবম দিন ছিল ২৮ জুলাই। সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়। দেশে কারফিউ জারি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছিল, তা কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়। সেদিন কারফিউ শিথিল করলেও বন্ধ ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সারাদেশের রেল যোগাযোগ।
এদিকে আন্দোলনের উত্তাল পরিস্থিতির প্রভাব চুয়াডাঙ্গায় খুব বেশি না পড়লেও জুলাইয়ের শেষ দিকে এসে মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে।
পুলিশের কঠোর নজরদারির কারণে আন্দোলনকারীরা মাঠে তেমন একটি সুবিধা করতে পারেনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মহড়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা সবসময় এক অজানা আতঙ্কে ছিল। সব মিলিয়ে চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি অনেকেটাই শান্ত ছিল। জেলার ৪ উপজেলায় বড় ধরনের কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
সেদিন শহরের শহিদ আবুল কাশেম সড়ক, কোর্ট মোড়, কেদারগঞ্জ নতুন বাজার এবং রেল বাজারের বেশিরভাগ দোকানপাট খুলে দেয়। সাধারণ মানুষ আগের মতো কেনাকাটাও করে। ইজিবাইক, পাখি ভ্যান ও লেগুনা চলাচল স্বাভাবিক ছিল। তবে চুয়াডাঙ্গা থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি।
অফিস-আদালত সব খোলা থাকলেও বন্ধ ছিল সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সারাদেশের মতই চুয়াডাঙ্গা থেকে সব রুটে ট্রেন চলাচল অষ্টম দিনের মত বন্ধ ছিল। এতে ট্রেন যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে।
টানা ১০ দিন বন্ধ থাকার পর চালু হয় মোবাইল ইন্টারনেট। ২৮ জুলাই বেলা ৩টার দিকে মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও হোয়াটসআ্যাপ বন্ধ ছিল। এসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ থাকায় মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছিল।
এর আগে ১৮ জুলাই চুয়াডাঙ্গা কাটপট্টিতে নাশকতার মামলায় পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনিসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখসহ ৪০/৫০ জনকে আসামি করা হয়।
ঘটনার দিন ১৮ জুলাই ইকবাল হোসেন ও ২০ জুলাই সিরাজুল ইসলাম মনিসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
এতে বিএনপির নেতা কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাবেক মুখ্য সংগঠক সজীবুল ইসলাম বাসসকে বলেন, ২৮ জুলাই আমাদের আন্দোলনের তেমন কোনো কর্মসূচি ছিল না। এদিন আমাদের ছেলেরা মাঠেও নামেনি। তবে কোটা বাতিলের দাবির পক্ষে ১৬ জুলাই চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। সেখানে উল্টো দিক থেকে জানিফের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি মিছিল এবং তিন গাড়ি পুলিশ এসে মানববন্ধনকারীদেরকে হটিয়ে দেয়। ১৬ তারিখে আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের বাসায় পুলিশ ফোন করে ও অনেকের বাসায় গিয়ে ভয় দেখিয়ে আসে। নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের নেতারা তুলে আনার জন্য বাড়িতে লোক পাঠায়।
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলন কোনও রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। এটা অধিকার আদায়ের আন্দোলন।এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। আমরা চাই এই কলঙ্কিত ইতিহাস থেকে আমরা সকলে শিক্ষা গ্রহণ করি। কেউ যদি আবার স্বৈরাচারী মনোভাব প্রদর্শন করে তবে আজ অথবা কাল তার পরিস্থিতিও একইরকম হবে।