বাসস
  ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৮

২৪ জুলাই : চিরুনি অভিযানে গ্রেফতার ১,৪০০, সারাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা, ২৩ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৪ জুলাই (বুধবার) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘চিরুনি অভিযান’ অব্যাহত রাখে। টানা পঞ্চম দিনের মতো সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল, তবে এদিন তা শিথিল রাখা হয়।

২৪ জুলাই সারাদেশে আন্দোলনকারীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ঢাকায় ৬৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে গত ৮ দিনে (১৭-২৪ জুলাই) সারাদেশে গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে চার হাজার। রাজধানীতে মোট ১ হাজার ৭৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। চট্টগ্রামে গ্রেফতার করা হয় মোট ৭০৩ জনকে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের অধিকাংশ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী। (সূত্র: প্রথম আলো, ২৫ জুলাই, ২০২৪)।

গ্রেফতারের বিষয়ে তৎকালীন ডিবি প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ দেখেই অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।’

৫ দিন পর ২৪ জুলাই রাতে সারাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করে বিটিআরসি। তবে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মেট্রোরেল এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ রাখা হয়।

এদিন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায়। নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয় বলে দুজনই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান।

ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে আহত হয়ে এদিন চিকিৎসাধীন আরও চারজনের মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন ও সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও পরবর্তী সংঘাতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ২০১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এ মৃত্যুর হিসাব হাসপাতাল, হাসাপাতালে মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তি ও স্বজনদের সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

ঢাকাসহ তিন জেলায় বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। অন্যান্য জেলায়ও জেলা প্রশাসকদের নির্ধারিত কয়েক ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকে। এদিন সরকারি অফিস ও ব্যাংক চার ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি রাস্তায় সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও টহল অব্যাহত ছিল। এছাড়াও এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকরা।

কারফিউ শিথিল হওয়ায় এদিন রাজধানী থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়। ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট) থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। এদিন অফিস-আদালত ও কলকারখানায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকার যেসব স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে মেট্রোরেলসহ কয়েকটি স্থাপনা সরকারের উদ্যোগে বিদেশি কূটনীতিকদের সরেজমিনে পরিদর্শন করানো হয়।

এ বিষয়ে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মোট ৪৯টি মিশনের প্রতিনিধিরা ধ্বংসযজ্ঞ চালানো কয়েকটি স্থাপনা পরিদর্শন করেছেন। তাদের মধ্যে ২৩ জন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। কূটনীতিকদের মেট্রোরেলের ধ্বংসযজ্ঞ, সড়ক ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিটিভি ভবন দেখিয়েছি।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৬ জুলাই ৬ জন নিহতের ঘটনা তদন্তে ২৪ জুলাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর বিষয়ে জানতে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জনগণের কাছে তথ্য চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তদন্ত কমিটি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়ার কথা জানায় এই কমিটি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় নিহত আটজনের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পড়ে থাকা মরদেহগুলো বুধবার বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।

পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীরা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, ‘জনমনে স্বস্তি না ফেরা পর্যন্ত কারফিউ চলবে।’

নরসিংদী কারাগার থেকে পালানো দুই নারী ‘জঙ্গি’ ইশরাত জাহান মৌসুমী ওরফে মৌ ও খাদিজা পারভীন মেঘলাকে গ্রেফতার করে পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট। এছাড়া পালিয়ে যাওয়া কারাবন্দিদের মধ্যে বুধবার পর্যন্ত ২৯২ জন আত্মসমর্পণ করেন।

সারাদেশে অবিলম্বে ইন্টারনেট চালু, কারফিউ তুলে দেওয়াসহ চার দফা দাবি জানিয়ে ২৩ জুলাই দুই দিনের আল্টিমেটাম দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একাংশ। অন্যদিকে, নিজেদের ৯ দফা দাবি আদায়ে ২৫ জুলাই দেশব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচি ঘেষণা করে সমন্বয়কদের আরেক পক্ষ।

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং তাদের ওপর হামলা, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এদিন প্রতিক্রিয়া জানায় মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার বলেন, তারা বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নজরে রেখেছে। একইসঙ্গে পেন্টাগন সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানায়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সরকার যত দিন চাইবে, সেনাবাহিনী তত দিন বেসামরিক প্রশাসনের সহযোগিতায় দায়িত্ব পালন করবে।’

জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন সেমিস্টারের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেই পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। চলমান পরিস্থিতির কারণে ৩১ জুলাই পর্যন্ত  বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সব পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। এতে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা, অর্ধবার্ষিক বিভাগীয় পরীক্ষা (জুন-২০২৪), নন-ক্যাডারের স্ট্যান্ডার্ড অ্যাপটিচুড টেস্টসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা স্থগিত থাকে।