বাসস
  ২৬ মে ২০২৫, ১৯:৫৮
আপডেট : ২৬ মে ২০২৫, ২০:০৪

সরকার একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে: ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ 

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবি

ঢাকা, ২৬ মে, ২০২৫ (বাসস): নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকা উন্নত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেছেন, ‘সামগ্রিকভাবে আমরা বাংলাদেশকে এমন একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য লড়াই করছি যেখানে কেউ কেবল  প্রবৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে ভাববে না, পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকা আরও উন্নত হবে।’

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণার আগে নিজ কার্যালয়ে বাসসের সাথে আলাপকালে অর্থ উপদেষ্টা বাজেটে সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ তুলে ধরেন। এটি হবে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক উত্থাপিত প্রথম বাজেট।
বর্তমানে জাতীয় সংসদ না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা আগামী ২ জুন টেলিভিশন ভাষণের মাধ্যমে বাজেট ঘোষণা  করবেন, যা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকর হবে।

বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করতে পারে, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকারের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম হতে পারে।

২০০৭-০৮ অর্থবছরের পর এই প্রথম কোনো অন্তর্বর্তী সরকারের টেলিভিশনে প্রচারিত বাজেট ভাষণ। তৎকালীন সময়ে  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম টেলিভিশন ভাষণের  মাধ্যমে পর পর দুটি বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন।

সাধারণ মানুষের জন্য বাজেটের মূল বার্তা কী হবে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্রথমত, এই বাজেট হবে সাধারণ মানুষের জন্য। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আত্মকর্মসংস্থানে জোর দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি যাতে উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়।

গত বছরের অভ্যুত্থানের পর দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, দেশ এখন মোটামুটি ভাল অবস্থানে আছে।

তিনি বলেন, ‘ গত বছরের আগস্টে আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল ছিল না এবং ব্যাংকিং খাতের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দেশের অর্থনীতিতে সমস্যা ছিল। তবে, আমরা এই তীব্র সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি এবং স্থিতিশীলতা মোটামুটি ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা এখন একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থানে পৌঁছেছি। কিন্তু চারপাশে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ঘিরে রেখেছে এবং তা আরও তীব্র হতে পারে। মার্কিন শুল্ক সমস্যা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতসহ বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

অভ্যন্তরীণ খাত সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, ‘গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথম চার মাসে ব্যবসা-বাণিজ্যে তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি, যদিও সরকারের  বিচক্ষণ পদক্ষেপের কারণে পরে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এখন আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এটি ইতিবাচক।’

জাতীয় সংসদের বাইরে বাজেট ঘোষণার মতো ব্যতিক্রমধর্মী ব্যবস্থাপনার বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা সংখ্যাগত দিক বাদে ইতোমধ্যেই বাজেটের একটি রূপরেখা দিয়েছি, যেটি ঘোষণার আগের রাত পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে পারে।

তিনি বলেন, ২ জুন বাজেট ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া এবং পরামর্শ নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় থাকবে এবং জুনের শেষের দিকে বাজেট চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হবে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধা, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো জানতে, সাধারণ মানুষের জীবনমান, খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত  উভয় ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতির প্রবণতা, ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা বিবেচনায় নিতে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই আমরা বাজেট প্রস্তুত করেছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বাজেট হবে বাস্তব ভিত্তিক।

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন বাজেট চাই না, যেখানে শুধু আশ্বাসের ফুলঝুরি থাকবে। বরং আমাদের সীমিত সম্পদ বিবেচনায় রেখে বাস্তবসম্মত বাজেট দেব। আমাদের লক্ষ্য থাকবে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতির সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ ও সুন্দর করা।’

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, অন্যান্য খাতের পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উপর আরও জোর দেওয়া হবে।