বাসস
  ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৩৮

ডাকারের উপকূলে রাশিয়া থেকে ছেড়ে আসা তেলের ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত

ঢাকা, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সেনেগালের রাজধানী ডাকার উপকূলে গত সপ্তাহে রাশিয়া থেকে ছেড়ে আসা  একটি তেল ট্যাঙ্কার এর বাইরে চারটি বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এই ঘটনায়  ভূ-রাজনীতি জড়িত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। 

তুরস্কের জাহাজ মালিক ও সেনেগালের বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে ডাকার থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

তুর্কি শিপিং কোম্পানি বেসিকটাস পরিচালিত পানামার পতাকাবাহী ট্যাঙ্কার মেরসিনকে স্থিতিশীল করার জন্য ডাকার উপকূল থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ট্যাঙ্কারটি প্রায় ৩৯ হাজার টন জ্বালানি বহন করছিল। 

এএফপি’র সঙ্গে কথা বলা বেশ ক’জন বিশেষজ্ঞ জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত বিস্ফোরণের কারণ জানা যায়নি, তবে জাহাজটির উৎস্যস্থল রাশিয়া, যে কারণে এতে ইউক্রেনীয় হামলার ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

সোমবার বেসিকতাস শিপিং এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সেনেগালের ডাকার উপকূলে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটে নোঙর করার সময়, জাহাজটির বাইরে চারটি বিস্ফোরণ ঘটে ও ইঞ্জিন রুমে সমুদ্রের পানি প্রবেশ করে।

জাহাজের মালিক জানান, বিষ্ফোরণে কেউ হতাহত হয়নি। পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। কোনো দূষণ ঘটেনি এবং জাহাজটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল রয়েছে।

ডাকার বন্দর কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার এএফপিকে জানিয়েছে যে তারা গত বৃহস্পতিবার মেরসিন জাহাজের পাঠানো বিপদ সংকেত পাওয়ার পর প্রধানত তুর্কি নাবিকদের সরিয়ে নেয় ও ক্ষয়ক্ষতির মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সম্পদ মোতায়েন করে।

জাহাজ-নিরীক্ষণকারী ওয়েবসাইট মাইশীপ ট্র্যাকার ডটকম বলেছে, মেরসিন তামান বন্দর থেকে যাত্রা করেছিল। বন্দরটি রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার সংযুক্তকারি কের্চ প্রণালীর কাছে অবস্থিত। ইউক্রেন ভূখণ্ড ক্রিমিয়াকে মস্কোর দখল করে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করেছে।

এএফপি’র সঙ্গে কথা বলা বেশ ক’জন বিশেষজ্ঞ ইঙ্গিত করেছেন যে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে মেরসিন জাহাজটি ইউক্রেনের হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।

তুরস্ক জানায়, সাম্প্রতিক দিনগুলোয় কৃষ্ণসাগরে তুরস্কের উপকূলে রাশিয়ার মালিকানাধীন তিনটি ট্যাঙ্কারের ওপর হামলা হয়েছে। ধারণা করা  হচ্ছে যে একই প্রেক্ষাপটে এসব বিষ্ফোরণ ঘটেছে।

ইউক্রেনের একটি নিরাপত্তা সূত্র এএফপিকে জানায়, তাদের বাহিনী দুটি ট্যাঙ্কারে হামলা চালানোর জন্য নৌ-ড্রোন ব্যবহার করে। দুটি জাহাজেই শুক্রবার আক্রমণ করা হয়। ইউক্রেনের দাবি, দুটি জাহাজই ‘গোপনে রাশিয়ান তেল পরিবহন করছিল।’

পরে মঙ্গলবার, তৃতীয় জাহাজের আক্রমণের খবর জানায় তুরস্ক।

ইওএস মেরিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মার্টিন কেলি এক লিংকেদিন পোস্টে বলেন, মেরসিন ‘বারবার রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল/তেলজাত পণ্য পরিবহন করেছে।’ তিনি আরো উল্লেখ করেন যে ২০২৫ সালে জাহাজটি রাশিয়ার নভোরোসিস্ক, তুয়াপসে ও উস্ত-লুহা বন্দরে নোঙর করেছে।

ডেনমার্কের রিস্ক ইন্টেলিজেন্সের বিশ্লেষক ডার্ক সিবেলস বলেছেন যে বাহ্যিক বিস্ফোরণগুলো  সম্ভবত দুর্ঘটনা ছিল না।

তিনি বলেন, এটি ইউক্রেন সরকার বা ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর দিকেই যায় বলেই ধরে নেওয়া যায়।

তবে ফ্রাঙ্কো-রাশিয়ান অবজারভেটরির উপপরিচালক ইগর দেলানোয়ে একে ইউক্রেনের নিশ্চিত হামলা বলে মনে করেন না বলে মত দেন। তিনি বলেন, ‘যদি ইউক্রেন সরাসরি বা পরোক্ষভাবে এই বিস্ফোরণের জন্য দায়ী হয়ে থাকে, তবে এই ভৌগোলিক এলাকায় এটি হবে এ ধরণের প্রথম ঘটনা।’
 
মেরসিন জাতিসংঘ বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নেই, তবে বেসিকতাস শিপিং কোম্পানির মালিকানাধীন অন্য দুটি জাহাজ ইউক্রেনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রাশিয়ার স্বার্থে ব্যবহৃত জাহাজগুলো লক্ষ্য করে বেশ ক’টি ঘটনা ঘটেছে, যদিও ইউক্রেন সেসব ঘটনার দায় স্বীকার করেনি।

এক বছর আগে, ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় রাশিয়ার কার্গো জাহাজ ইউরসা মেজর ডুবে যাওয়াকে জাহাজটির মালিক ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। জাহাজটির মালিক রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্তর্গত একটি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত। তবে এ সম্পর্কিত কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।

পশ্চিম আফ্রিকার একটি প্রধান বন্দর ডাকার আফ্রিকা ও ইউরোপ, সেইসঙ্গে আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রকে সংযুক্ত করে এমন বেশ ক’টি আটলান্টিক শিপিং রুটের পাশে অবস্থিত বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা জাহাজের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি এবং বিস্ফোরণের পর দূষণ প্রতিরোধে অভিযান চালানোর জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। ডাকার বন্দরের সিনিয়র কমান্ডার ইব্রাহিমা দিয়াও এএফপিকে বলেন, দূষণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তবে গৃহিত পদক্ষেপগুলো সফলভাবে প্রয়োগ করা  হলে তা এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে।