শিরোনাম

ঢাকা, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বহু দশকের যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে ধীরে ধীরে মাথা তুলছে আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের শহর মোগাদিসু। শহরের রাস্তায় এখনও গোলাগুলির ছাপ। অনেক ভবন ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। সেই শহরে এখন ধ্বংস নয়, কানে ভেসে আসে নির্মাণকাজের কোলাহল।
মোগাদিসু থেকে এএফপি এ কবর জানিয়েছে।
১৯৯০-এর দশকে গৃহযুদ্ধ ২০০০-এর দশকে ইসলামপন্থী বিদ্রোহে রূপ নেয়। সেই বিদ্রোহ এখনও দেশের অনেক অংশে হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সোমালিয়ার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ ‘বহুমাত্রিক দারিদ্র’ পরিস্থিতির শিকার। শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রার মান, সেবা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি সবকিছুই এই প্রতিবেদন তৈরির সময় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
দশক পর দশক ধরে চলা যুদ্ধ বিগ্রহরে পর প্রথমবারের মত রাজধানী মোগাদিসুর ৩০ লাখ বাসিন্দা ভবন নির্মাণ বিপ্লবের সাক্ষী হতে যাচ্ছেন। যদিও শহরটির বাইরে চলমান সংঘাত থেকে তারা তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত।
এখন মোগদিসুর রাস্তার পাশে ইটের স্তূপ, লোহার ফ্রেম এবং বালির পাহাড় চোখে পড়বে।
মক্কা আল মুকাররমা অ্যাভিনিউতে একটি নতুন বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ দাঁড়িয়ে দেখছিলেন স্থানীয় হাবিব ফারাহ। তিনি বড় কাঁচের জানালা দেখিয়ে বললেন, এটি শহরে এ এক নতুন অভিজ্ঞতা।
তিনি জানান, কয়েক দশক পর এখন আর ধ্বংস হওয়ার ভয় পাচ্ছি না।
বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা:
নির্মাণখাত মূলত নিয়ন্ত্রণহীন, আর নির্ভরযোগ্য তথ্যও কম পাওয়া যায়। জুনে মোগাদিশুর মেয়র জানিয়েছিলেন, গত পাঁচ বছরে ৬ হাজারের বেশি ভবন নির্মিত হয়েছে।
সরকার বলছে, নিরাপত্তা বেড়েছে নতুন চেকপয়েন্টের মাধ্যমে।
এএফপিকে জানায়, শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের জাজিরা চেকপয়েন্টে প্রতিটি গাড়ি, টুকটুক (স্থানীয় গণপরিবহন) ও ট্রাক তল্লাশি করা হচ্ছে।
যেসব গাড়ি শহরের বাইরে ২০ দিনের বেশি ছিল, সেগুলোকে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয় না। কারণ, নিরাপত্তা বাহিনীর ধারণা, এই সময়ের মধ্যে গাড়িতে গোপনে বিস্ফোরক স্থাপন সম্ভব।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত মোগাদিসুতে বিদ্রোহী হামলা ৮৬ শতাংশ কমেছে।
তবুও কিছু স্থানে এখনও হামলা হচ্ছে। অক্টোবরে আল-শাবাব জেলে হামলা চালানো হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়ির ছদ্মবেশ ব্যবহার করে এ হামলা চালানো হয়। তবে মুক্ত হওয়া বন্দীর সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
এ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও পেশাদার করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কেউ ঘুষ দিতে বাধ্য করলে কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে।
ট্যাক্সিচালক আবদুল্লাহ দহিবলাওয়ে (৩৮) বলেন, আগে সেনারা প্রায় সব চেকপোস্টেই টাকা চাইত এবং বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারত। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আওয়েস হাজি ইউসুফ বলেছেন, মোগাদিসু এখন অনেক বেশি সুরক্ষিত।
তিনি জানান, মোগাদিসুর মানুষ এখন নিজের শহরে বিনিয়োগ করছে। তাই, সেই বিনিয়োগ রক্ষায়ও তারা এগিয়ে আসবে।
প্রবাসী অর্থ ও বাজারে প্রভাব:
সমস্যা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। জঙ্গিগোষ্ঠী আল-শাবাব এবার রাজধানীর আশপাশের প্রায় ২০০ গ্রাম পুনর্দখল করেছে।
এদিকে, পশ্চিমা দাতারা যুদ্ধের তহবিল কমাচ্ছে। এতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অর্থায়নের উৎস কমে গেছে।
তবে সোমালিয়ার প্রবাসীরা এখনও রেমিন্ট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশটির রেমিট্যান্স ছিল জিডিপির প্রায় ১৫ শতাংশ। পরবর্তী বছরে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এটি বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সম্প্রসারণের ইঙ্গিত বহন করে।
প্রবাসীরা মূলধন ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। অন্যদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণের সহায়তায় তা সম্প্রসারণ করছে বলে জানান প্রিমিয়ার ব্যাংকের সিইও মোহামেদ ঘিদি।
নির্মাণ, ফিনটেক (ডিজিটাল অর্থ ও পেমেন্ট সেবা), বাণিজ্য ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ হচ্ছে বে বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হলেও সেবা এখনও সীমিত পর্যায়ে রয়েছে।
নগরায়ণ ও বৈষম্য:
বিশ্বের অনান্য বিকাশমান নগরীর মতই মোগাদিসুতেও ধনী ও গরিবের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে।
সোমালি পাবলিক অ্যাজেন্ডা থিঙ্ক ট্যাঙ্কের মাহাদ ওয়াসুগে বলেন, ধনী কর্মকর্তা ও বিদেশিরা হয়তো বাড়তি নিরাপত্তা এবং উন্নত জীবনযাপনের সুবিধা পাচ্ছে, কিন্তু শহরের অন্য অংশে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন একেবারেই ভিন্ন।
এই বৈষম্যের জেরে উত্তেজনা বেড়ে কখনও কখনও সশস্ত্র সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে। যেমন, গত আগস্টে দক্ষিণ মোগাদিসুতে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে নিরাপত্তা বাহিনী। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিহত হন।
ওয়াসুগে বলেন, সাধারণ মানুষ স্কুল, হাসপাতাল, এমনকি মৌলিক সরকারি সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
তিনি ক্ষোভ নিয়ে জানান, সরকার দেখানোর চেষ্টা করছে যে মোগাদিসুর উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এর মূল্য আসলে কারা দিচ্ছে?