শিরোনাম
ঢাকা, ২২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে নির্ধারিত শীর্ষ বৈঠকের পরিকল্পনা বাতিল করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অর্থহীন বৈঠক করতে চাই না।’
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধে ‘ফলপ্রসূ ফোনালাপ’-এর পর মাত্র কয়েক দিন আগেই ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনি হাঙ্গেরির রাজধানীতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তবে হোয়াইট হাউস মঙ্গলবার জানায়, বুদাপেস্টে বৈঠকের ঘোষণা সত্ত্বেও শিগগিরই ট্রাম্প-পুতিনের মধ্যে বৈঠকের কোনো পরিকল্পনা নেই।
ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি সময় নষ্ট করতে চাই না। দেখি কী হয়।’
এএফপি’র একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, “যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক কিছু ঘটছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে আমরা কী করছি, তা আপনাদের জানিয়ে দেব।’
হোয়াইট হাউস আরও জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের পূর্বনির্ধারিত বৈঠকও বাতিল করা হয়েছে। বুদাপেস্ট বৈঠকের ব্যবস্থার বিষয়ে তারা সোমবার ফোনে কথাও বলেছিলেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু রুশ নেতার আচরণে বারবার হতাশ হয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্ররা ট্রাম্পের অনিশ্চিত অবস্থানে দিশেহারা।
একজন জ্যেষ্ঠ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা জানান, গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক ‘সহজ ছিল না’।
তিনি এএফপিকে জানান, ওই ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ আলোচনায় ট্রাম্প শান্তিচুক্তির বিনিময়ে ইউক্রেনকে তাদের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা বলেন, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা যেন ‘ঘুরপাক খাচ্ছে’ এবং ‘টেনে হিঁচড়ে চলছে।’
ট্রাম্প গত সপ্তাহে মস্কো ও কিয়েভকে যুদ্ধ থামানোর অনুরোধ জানিয়ে বর্তমান যুদ্ধরেখায় অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। তবে তিনি প্রকাশ্যে ইউক্রেনকে কোনো ভূখণ্ড ছাড়ার বিষয়ে কিছু বলেননি।
ওই ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প কি জেলেনস্কিকে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চল ছেড়ে দিতে বলেছিলেন, যা পুতিনের অন্যতম প্রধান দাবি? তখন তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, ঠিক তাই।’
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ‘টমাহক’ দিতে ট্রাম্পকে অনুরোধ করেন জেলেনস্কি। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাতে রাজি হননি উল্টো তাকে একটি চুক্তিতে আসতে চাপ দেন। ফলে, জেলেনস্কিকে বৈঠক থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়।
লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক নিয়ে গঠিত শিল্পাঞ্চল দনবাস ইউক্রেনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই দেশটি রাশিয়ার কাছে এই অঞ্চল ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব বহুবার প্রত্যাখ্যান করেছে।
ক্রেমলিন মঙ্গলবার জানায়, ট্রাম্প-পুতিনের নতুন বৈঠক নিয়ে কোনো ‘নির্দিষ্ট’ তারিখ নেই। আগস্টে আলাস্কায় তাদের বৈঠকে ইউক্রেন ইস্যুতে অগ্রগতি হয়নি।
এদিকে ইউরোপীয় নেতারাও ইউক্রেনের ভূমি ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা চান, যুদ্ধ এখনই থেমে যাক এবং বর্তমান যুদ্ধরেখা থেকেই আলোচনা শুরু হোক।
মঙ্গলবার প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘রাশিয়া শান্তির ব্যাপারে আন্তরিক নয়।’
তারা বলেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থানকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি, যুদ্ধ এখনই থামাতে হবে এবং বর্তমান যুদ্ধরেখা থেকেই আলোচনা শুরু করতে হবে।’
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে মঙ্গলবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন। এছাড়া, বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় নেতারাও ইউক্রেনকে সমর্থন জানিয়ে একত্র হচ্ছেন। পরদিন লন্ডনে ‘ইচ্ছুক জোট’ বৈঠকে ইউক্রেনকে সহায়তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে জোর হামলা চালান পুতিন। তিনি একে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে দাবি করেন, উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ করা ও নেটোর সম্প্রসারণ ঠেকানো।
এখন রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড দখলে রেখেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এসব এলাকায় বহু বেসামরিক নাগরিক ও সেনা নিহত হয়েছেন।