বাসস
  ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:১২

জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি : ‘আয়রন লেডি ২.০’

ঢাকা, ২১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের ভক্ত, কট্টর রক্ষণশীল রাজনীতিক সানায়ে তাকাইচি মঙ্গলবার জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, তার এই উত্থান নারীবাদের কোনো বিজয় নয়, বরং ৬৪ বছর বয়সী এই নেত্রী চলতি মাসে ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতৃত্বে এসেছেন। তিনি নিজেকে প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকেন্দ্রিক কঠোর অবস্থানের রাজনীতিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

টোকিও থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

শেষ মুহূর্তের এক কোয়ালিশন চুক্তির মাধ্যমে তাকাইচিকে মঙ্গলবার পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করা হয়। তিনি গত পাঁচ বছরে জাপানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী।

মুদ্রাস্ফীতি ও সম্প্রতি ঘুষ কেলেঙ্কারির কারণে ভোটাররা এলডিপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অন্যদিকে অভিবাসন বিরোধী দল সানসেইতো জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

এ অবস্থায় হারানো সমর্থন পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় তাকাইচি অভিবাসন ও বিদেশি পর্যটন বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন- যা এলডিপি’র নেতৃত্ব নির্বাচনে বড় বিতর্কের বিষয় ছিল।

সাবেক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রী তাকাইচি পূর্বে চীনের সামরিক উপস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন এবং তাইওয়ানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। গত এপ্রিলে তাইপে সফরে তিনি বলেন, ‘টোকিও ও তাইপের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি।’

তিনি নিয়মিত ইয়াসুকুনি মন্দিরেও যান, যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের পাশাপাশি ২৫ লাখ নিহত সৈন্যের স্মৃতি সংরক্ষিত আছে। এই মন্দির এশীয় দেশগুলোর কাছে জাপানের সামরিক অতীতের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে সম্প্রতি তিনি চীন বিষয়ক বক্তব্যে কিছুটা নরম হয়েছেন এবং গত সপ্তাহে মন্দিরের উৎসবে অংশ নেননি।

একসময় কলেজ জীবনে হেভি মেটাল ব্যান্ডের ড্রামার ছিলেন তাকাইচি। তিনি প্রয়াত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারকে নিজের রাজনৈতিক অনুপ্রেরণা হিসেবে মনে করেন।

টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সদাফুমি কাওয়াতো এএফপি’কে বলেন, ‘তাকাইচির নির্বাচিত হওয়া রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে একধাপ অগ্রগতি হলেও তিনি পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তেমন আগ্রহী নন।’

লিঙ্গ বিষয়ে তাকাইচির মতামত এলডিপি’র রক্ষণশীল ডান ঘরানার সঙ্গে মিলে। তিনি উনিশ শতকের সেই আইন সংশোধনের বিরোধিতা করেন, যা দম্পতিকে একই পদবি ব্যবহার করতে বাধ্য করে। ফলে নারীদের অধিকাংশই স্বামীর পদবি গ্রহণ করেন।

তাকাইচি একই ব্যক্তিকে দুইবার বিয়ে করেছেন। তার স্বামী দেশটির একজন সাবেক সংসদ সদস্য। প্রথম বিবাহে তিনি স্বামীর পদবি নেন। দ্বিতীয়বার স্বামী তার পদবি গ্রহণ করেন।

কাওয়াতোর বলেন, ‘দম্পতিকে একই পদবি ব্যবহারের বিষয়টি তার মেয়াদকালে সমাধান হবে বলে মনে হয় না।’

তবে নির্বাচনী প্রচারে তাকাইচি প্রতিশ্রুতি দেন, তার মন্ত্রিসভায় লিঙ্গ ভারসাম্য ‘নর্ডিক দেশের পর্যায়ে’ উন্নীত করবেন।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০২৫ সালের জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুযায়ী, সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারীর কম উপস্থিতির কারণে জাপানের অবস্থান ১৪৮টি দেশের মধ্যে ১১৮তম; বিপরীতে আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ও নরওয়ে শীর্ষ তিন স্থানে রয়েছে।

তাকাইচি এলডিপি’র রক্ষণশীল অংশ এবং নিহত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়।

তিনি আবের ‘আবেনমিক্স’ নীতির অনুসারী- যেখানে আগ্রাসী মুদ্রানীতি শিথিলকরণ ও বড় সরকারি ব্যয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। বিশ্লেষকদের মতে, এসব নীতি পুনরায় চালু হলে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

তাকাইচি জাপানে বিদেশিদের অর্থনৈতিক প্রভাব ও অপরাধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং কঠোর নিয়ম প্রবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। যা বিশ্লেষকদের মতে, অভিবাসন বিরোধী নতুন জাতীয়তাবাদী দলের দিকে চলে যাওয়া ভোটারদের ফেরানোর কৌশল।

তিনি এ মাসে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি যদি জাপানের জন্য ক্ষতিকর বা অন্যায্য প্রমাণিত হয়, তাহলে তিনি তা পুনরায় আলোচনার উদ্যোগ নেবেন।