শিরোনাম
ঢাকা, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার গাজাবিষয়ক একটি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে মিশরে পৌঁছেছেন। তার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরাইলে এক আলোচিত সফরের পর ট্রাম্প এই শীর্ষ সম্মেলনে সহ-সভাপতিত্ব করবেন।
ট্রাম্প বিশ্ব নেতাদের উপস্থিতিতে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সাথে শীর্ষ সম্মেলনে সহ-সভাপতিত্ব করবেন।
গাজা উপত্যকা থেকে এএফপি একথা জানিয়েছে।
ইসরাইলে ট্রাম্প গাজা থেকে জীবিত ২০ জন জিম্মির প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে সংসদে একটি ভাষণ দেন। সেখানে তিনি ‘একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহাসিক ভোরের’ এবং গাজা যুদ্ধের ‘দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক দুঃস্বপ্নের’ অবসানের প্রশংসা করেন।
হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার জানিয়েছে, ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৬৭,৮৬৯ জনে পৌঁছেছে। তারা যুদ্ধের সময় নিহতদের মৃতদেহ উদ্ধার অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘ তাদের পরিসংখ্যানকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে।
সর্বশেষ ঘটনাবলী এখানে দেওয়া হল:
‘গাজা শীর্ষ সম্মেলন’
ট্রাম্প দুই ডজনেরও বেশি রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার উপস্থিতিতে গাজা বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে মিশরে পৌঁছেছেন।
মিশরের প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুর প্রত্যাশিত উপস্থিতি ঘোষণা করার পর, ইসরাইলি নেতা বলেছেন, তিনি যেতে পারছেন না কারণ শীর্ষ সম্মেলনটি ইহুদি ছুটির সাথে মিলে যায়। একটি তুর্কি কূটনৈতিক সূত্র দাবি করেছে, আঙ্কারার চাপের পর ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
রোববার মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘ঐতিহাসিক’ সমাবেশের সময় ‘গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের অবসানের নথি’ সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনটি কূটনৈতিক সূত্রের মতে, মধ্যস্থতাকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার এবং সম্ভবত তুরস্ক শীর্ষ সম্মেলনের সময় একটি গ্যারান্টি নথিতে সই করবে।
হামাস শীর্ষ সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করবে না, যদিও ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস উপস্থিত থাকবেন।
যাদের মধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং তার তুর্কি সমকক্ষ রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ানও রয়েছেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ইইউ এবং আরব লীগ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, ভারত এবং জার্মানিসহ অন্যান্য দেশ থেকেও প্রতিনিধিত্ব আশা করা হচ্ছে।
‘ট্রাম্পের ভাষণ’
সোমবার ট্রাম্প ইসরাইল সফর করেছেন। নেসেটে প্রবেশের সময় আইন প্রণেতারা তাকে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান এবং নেতানিয়াহু তাকে হোয়াইট হাউসে ইসরাইলের ‘সবচেয়ে বড় বন্ধু’ বলে অভিহিত করেন।
সংসদে দেওয়া তার ভাষণে ট্রাম্প জিম্মিদের মুক্তিকে ‘ইসরাইল এবং বিশ্বের জন্য অবিশ্বাস্য বিজয়’ বলে অভিহিত করেন। তিনি হামাসের ওপর চাপ দেওয়ার জন্য আরব ও মুসলিম বিশ্বের মধ্যস্থতাকারীদের কৃতিত্ব দেন।
তিনি ‘জিহাদিবাদ এবং ইহুদি-বিদ্বেষ’ ব্যর্থতার পর ফিলিস্তিনিদের ‘সন্ত্রাসের পথ থেকে চিরতরে সরে আসার’ আহ্বান জানান এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হামাসের ৭ অক্টোবরের আক্রমণ ‘কখনও ভুলবে না’।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘৭ অক্টোবর থেকে এই সপ্তাহ পর্যন্ত ইসরাইল যুদ্ধে লিপ্ত একটি জাতি, এমন বোঝা বহন করছে যা কেবল একজন গর্বিত এবং বিশ্বস্ত মানুষই সহ্য করতে পারে’।
তিনি বলেছেন, ‘এই ভূখণ্ড জুড়ে এত পরিবারের জন্য, বছরের পর বছর ধরে সত্যিকারের শান্তির একটি দিনও আসেনি’।
‘কিন্তু এখন এটি স্থায়ী, কেবল ইসরাইলিদের জন্য নয়, ফিলিস্তিনিদের জন্যও এবং আরোও অনেকের জন্য। দীর্ঘ এবং বেদনাদায়ক দুঃস্বপ্ন অবশেষে শেষ হয়েছে।’
‘জিম্মি-বন্দী বিনিময়’
শুক্রবার কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে ৭ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে গৃহীত ৪৭ জন জীবিত এবং মৃত ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইল কর্তৃক আটক ২৫০ জন বন্দী এবং ১,৭০০ বন্দী বিনিময়।
হামাস ২০১৪ সালে পূর্ববর্তী গাজা সংঘাতের সময় নিহত একজন সৈন্যের দেহাবশেষও হস্তান্তর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকায় একজন এএফপি সাংবাদিক ইসরাইলের ওফার কারাগার থেকে বেশ কয়েকটি বাস বের হতে দেখেছেন, যখন রামাল্লাহ এবং খান ইউনিসে বন্দীদের স্বাগত জানাতে মানুষের প্রচণ্ড ভিড় হয়েছে।
ইসরাইল নিশ্চিত করেছে, জীবিত ২০ জন জিম্মিকে দেশে ফিরে আনা হয়েছে, এক্স-এ একাধিক পোস্টে লেখা ছিল, ‘বাড়িতে স্বাগতম’।
সোমবার মৃত জিম্মিকে ফেরত পাঠানো হবে বলে ইসরায়েল আশা করে না।
হামাসের সশস্ত্র শাখা চারজন মৃত জিম্মির নাম প্রকাশ করেছে যাদের মৃতদেহ সোমবার ফেরত পাঠানোর কথা ছিল।
পরে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ঘোষণা করে যে, রেড ক্রস দুই মৃত জিম্মির দেহাবশেষ পেয়েছে এবং আরো দুই মৃত বন্দীকে তাদের হেফাজতে হস্তান্তর করার আশা করছে।
কিন্তু জিম্মি পরিবারের একটি দল হামাসকে আরো জিম্মিকে ফেরত না দিয়ে চুক্তি ভঙ্গ করার অভিযোগ করেছে।
হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম বলেছে, ‘এটি হামাসের দ্বারা চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা আশা করি ইসরাইলের সরকার এবং মধ্যস্থতাকারীরা এই গুরুতর অন্যায় সংশোধনের জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে’।
‘যুদ্ধোত্তর হামাসের ভূমিকা’
যদিও যুদ্ধবিরতিকে এবং প্রাথমিক মুক্তিকে ইসরাইলি, ফিলিস্তিনি এবং বিশ্বজুড়ে অন্যান্যরা স্বাগত জানিয়েছে, গাজার জন্য ট্রাম্পের পরিকল্পনার আসন্ন পর্যায়গুলো বাস্তবায়ন করা আরো জটিল প্রমাণিত হতে পারে।
হামাসের আলোচনা কমিটির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রোববার এএফপি’কে জানিয়েছে, তারা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা শাসনে অংশগ্রহণ করবে না।
স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য নাম প্রকাশ না করার অনুরোধকারী সূত্রটি বলেছেন, আন্দোলনটি ‘স্ট্রিপের নিয়ন্ত্রণ ত্যাগ করেছে’, তবে জোর দিয়ে বলেছেন, এটি ‘ফিলিস্তিনি কাঠামোর একটি মৌলিক অংশ’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাসের আরেক কর্মকর্তা এর আগে এএফপি’কে বলেছেন, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ‘প্রশ্নই ওঠে না’।