বাসস
  ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২০:৩০

গাজায় বন্দি বিনিময়ের অপেক্ষা ফুরাচ্ছে সোমবার, শান্তি সম্মেলনে ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতারা

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ১২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : হামাস সোমবার অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেবে এবং গাজায় ভবিষ্যৎ সরকার গঠনে কোনো ভূমিকা রাখবে না বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতারা মিশরে একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি সম্মেলনে যোগদানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়, ট্রাম্প সোমবার ইসরাইলে সংসদে ভাষণ দেবেন এবং বন্দিদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মিশরের শারম আল-শেখ শহরে শান্তি সম্মেলনে যোগ দেবেন। 

কায়রোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সম্মেলনে ‘গাজা উপত্যকার যুদ্ধ অবসানের দলিল’ স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে উদ্বিগ্ন কিন্তু আশাবাদী ইসরাইলি পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনের ফিরে আসার অপেক্ষার প্রহর গুনছে। অন্যদিকে গাজার বাসিন্দারা ধ্বংসস্তূপে নিজেদের ঘরবাড়ির অবশেষ খুঁজছেন। আর ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে সীমান্তে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে।

যুদ্ধবিরতির তৃতীয় দিনে কিছু ট্রাক গাজায় প্রবেশ করলেও দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসে ক্ষুধার্ত লোকজন ত্রাণ লুট করছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

মোহাম্মদ জারাব নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা জঙ্গলে বাস করতে চাই না। আমরা চাই সাহায্য যেন নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে বিতরণ করা হয়। দেখুন, খাবার মাটিতে পড়ে আছে, মানুষ আর গাড়ি তা পদদলিত করছে।’

আরেক  বাসিন্দা মাহমুদ আল-মুজাইন বলেন, ‘ত্রাণ লুটের ঘটনাগুলো প্রমাণ করে  গাজার মানুষ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন শান্তি আলোচনায় আস্থা রাখতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘সবাই ভয় পাচ্ছে যুদ্ধ ফিরে আসবে। তাই মানুষ খাবার মজুত করছে।’

গাজার শেখ রাদওয়ান এলাকায় ফিরে এসে ৩৮ বছর বয়সী ফাতিমা সালেম দেখেন তার বাড়ির কিছুই অক্ষত  নেই। তিনি বলেন, ‘কাঁপতে কাঁপতে আমি ফিরে এলাম, কিন্তু কোনো পরিচিত চিহ্ন খুঁজে পেলাম না—সবকিছু বদলে গেছে।’

তিনি বলেন,  ‘আমরা ধ্বংসস্তূপের পাশে তাঁবু টানিয়ে বসবাস করব এবং পুনর্গঠনের অপেক্ষায় থাকব।’

এদিকে ইসরাইলিরা সোমবারের জন্য অপেক্ষা করছে। এদিন হামাস অবশিষ্ট ৪৮ বন্দিকে জীবিত ও মৃত মুক্তি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শনিবার রাতে তেল আবিবে বিপুল জনসমাবেশে মানুষ বন্দিদের পরিবারের প্রতি সংহতি জানায় এবং ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফকে অভ্যর্থনা জানায়। হাজারো মানুষ ‘হোস্টেজ স্কয়ারে’ সমবেত হয়ে স্লোগান তুলেন, ‘ধন্যবাদ ট্রাম্প!’

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা সব বন্দিকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণের জন্য প্রস্তুত।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরাইলের ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক। ওই সময় হামাস ২৫১ জনকে জিম্মি করেছিল।

হামাস ২০ জন জীবিতসহ মোট প্রায় ২ হাজার  ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে ওই ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তি দেবে বলে জানিয়েছে। হামাস কর্মকর্তা ওসামা হামদান বলেন, ‘স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী বন্দি বিনিময় সোমবার সকালে শুরু হবে।’

ট্রাম্প সোমবার ইসরাইল সফর শেষে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে যৌথভাবে শারম আল-শেখে অনুষ্ঠিতব্য শান্তি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন। ২০টিরও বেশি দেশের নেতা অংশ নেবেন। সম্মেলনের লক্ষ্য ‘গাজার যুদ্ধের অবসান, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার নতুন যুগের সূচনা’ করবে বলে জানিয়েছে মিশরীয় প্রেসিডেন্সি।

এতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। তবে হামাস ও ইসরাইল উভয়ই সম্মেলনে অংশ নেবে না।

হামাসের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ‘যুদ্ধোত্তর গাজা প্রশাসনে তারা অংশ নেবে না। তবে ‘ফিলিস্তিনি সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, হামাস দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে এবং এই সময়ে কোনো অবস্থাতেই অস্ত্র ব্যবহার করবে না, যদি না ইসরাইল গাজায় নতুন করে হামলা চালায়।’

ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরাইল ধাপে ধাপে গাজার শহরগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে এবং সেখানে মিশর, কাতার, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমন্বয়ে গঠিত একটি বহুজাতিক বাহিনী দায়িত্ব নেবে, যার সমন্বয় করবে ইসরাইলে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন একটি কমান্ড সেন্টার।

হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৭ হাজার ৬৮২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। জাতিসংঘ এই তথ্যকে নির্ভরযোগ্য মনে করে।