বাসস
  ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৩৪

ফিলিপাইনের ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ জনে

ঢাকা, ২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বৃহস্পতিবার মধ্য ফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭২ জনে দাঁড়িয়েছে বলে উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন। 

কর্মকর্তারা শত শত আহত ও হাজার হাজার গৃহহীনদের সহায়তার জন্য তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাছেন। 

মঙ্গলবার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। 

বোগো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থলের কাছে বোগো শহরে বুধবার রাতে ধসে পড়া একটি হোটেলের ধ্বংসস্তূপ থেকে এক নারী ও তার শিশুকে উদ্ধার করেছেন দমকলকর্মী ও উদ্ধারকারীরা।

এএফপি’র সাংবাদিকরা দেখেছেন, দিনের শুরুতে ঘটনাস্থল থেকে আরো একজন নারীর মৃতদেহও উদ্ধার করা হয়েছে।

জাতীয় সরকার জানিয়েছে, ২৯৪ জন আহত হয়েছেন এবং প্রায় ২০ হাজার লোক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। চেবু দ্বীপের উত্তরে প্রায় ৬শ’টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং শত শত আফটারশকে (ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পন) এলাকাগুলো কাঁপছে বলে অনেকেই রাস্তায় ঘুমাচ্ছেন।

চেবুর প্রাদেশিক গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো বৃহস্পতিবার সাহায্যের জন্য বেশ কয়েকটি জরুরি আবেদন করেছেন। 

তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষের নিরাপদ পানীয়, খাবার, পোশাক ও অস্থায়ী আবাসন প্রয়োজন। সেইসাথে সাহায্য বাছাই ও বিতরণের জন্য  উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকও প্রয়োজন।

তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অনেক বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং অনেক পরিবারের পুনরুদ্ধারের জন্য সাহায্যের প্রয়োজন। এই অসহায় মানুষগুলোর আমাদের সাহায্য, প্রার্থনা ও সমর্থন প্রয়োজন।’

প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস বৃহস্পতিবার সিনিয়র সহকারীদের সঙ্গে চেবুতে ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন ও ত্রাণ প্রচেষ্টার সমন্বয় সাধন করেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।

১৮ বছর বয়সী বোগোর বাসিন্দা ডায়ান মাদ্রিগাল ও তার ১৪ জন প্রতিবেশীর বাড়ি ধ্বংস হওয়ার পর একটি ছোট গ্রামের চ্যাপেল ভূমিকম্প-পরবর্তী আবাসস্থল হিসেবে কাজ করছে। তাদের পোশাক ও খাবার চ্যাপেলের পিউ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

মাদ্রিগাল এএফপি’কে বলেছেন, ‘আমার বাড়ির পুরো দেয়াল ভেঙে পড়েছে। তাই আমি সত্যিই জানি না কখন এবং কীভাবে আমরা আবার বাড়িতে ফিরে যেতে পারব।’ 

তিনি আরো বলেছেন, ‘এখনো পর্যন্ত ভূমিকম্পের পরবর্তী আফটারশকে ভয়ে আমি ভীত। মনে হচ্ছে, আমাদের ভূমিকম্পের পরবর্তী আফটারশকের আঘাতে আবারো পালাতে হবে।

চার সন্তানের জননী ৪৩ বছর বয়সী লুসিল ইপিল বোগোর একটি রাস্তার ধারে ১০ মিটার (৩০ ফুট) লম্বা একটি লাইনে তার পানির পাত্রটি যুক্ত করেছিলেন। সেখানে বাসিন্দারা নির্ধারিত দমকলের পানির গাড়ির জন্য মরিয়া হয়ে অপেক্ষা করেছিলেন।

তিনি এএফপি’কে বলেছেন, ‘ভূমিকম্প সত্যিই আমাদের জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। পানি সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সঠিকভাবে খেতে, পান করতে বা গোসল করতে পারছি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সত্যিই ভূমিকম্পের আগের আমাদের পুরনো জীবনে ফিরে যেতে চাই, আমাদের বাসায় ফিরতে চাই। কিন্তু আমরা জানি না কখন তা ঘটবে। কারণ, পুনঃনির্মাণে অনেক সময় লাগে।’

ভূমিকম্পের কারণে অনেক এলাকা বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে এবং বোগোর ক্ষতিগ্রস্ত চেবু প্রাদেশিক হাসপাতালের বাইরে বেশ কয়েক রোগী তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন।

২২ বছর বয়সী কাইল মালাইত তার স্থানচ্যুত হাতের হাড়ের চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। 

তিনি বলেছেন, ‘আমি বরং এই তাঁবুর নীচে এখানে থাকতে চাই। এখানে অন্তত আমি আমার হাতের চিকিৎসা পাব।’

আঞ্চলিক নাগরিক প্রতিরক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ৪২টি সম্প্রদায়ের ১ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের বাড়িঘর পুনঃর্নিমাণ এবং তাদের জীবিকা পুনরুদ্ধারের জন্য সহায়তার প্রয়োজন হবে।

বৃহস্পতিবার ভোরে বোগোতে অনুসন্ধান ও উদ্ধার প্রচেষ্টা বন্ধ হয়ে আসছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ, উদ্ধারকারীরা নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন।

চেবু ফায়ার ব্যুরোর কর্মকর্তা লিওয়েলিন লি কুইনো বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত যারা নিখোঁজ বলে জানা গেছে, তাদের সকলকে ইতোমধ্যেই উদ্ধার করা হয়েছে।’ 

তিনটি লাশ উদ্ধারের কয়েক ঘন্টা পরে উদ্ধারকারীদের একটি ধসে পড়া হোটেল পুনরায় পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়েছিল।