শিরোনাম
ঢাক, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার হোয়াইট হাউসে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে একটি অধরা গাজা শান্তি পরিকল্পনায় সম্মত হতে চাপ দেন।
প্রায় দুই বছরের যুদ্ধের অবসান, হামাস কর্তৃক বন্দী জিম্মিদের মুক্ত করা এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের জন্য ট্রাম্প উভয় পক্ষের কাছে ২১ দফা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
মার্কিন নেতা রোববার সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, ‘সবাই প্রথমবারের মতো বিশেষ কিছুর জন্য প্রস্তুত’ এবং গত সপ্তাহে জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ আরব নেতাদের সাথে আলোচনা করেছেন।
কিন্তু নেতানিয়াহু শান্তি পরিকল্পনায় আশাবাদের খুব কম কারণ দেখিয়েছেন। শুক্রবার জাতিসংঘে এক প্রতিবাদী ভাষণে হামাসের বিরুদ্ধে ‘কাজ শেষ’ করার এবং সম্প্রতি বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ কর্তৃক স্বীকৃত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রত্ব প্রত্যাখ্যান করার অঙ্গীকার করেছেন।
হোয়াইট হাউস ঘোষণা করেছে, এই জুটি সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ১৫মিনিটে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়ার কথা, যা স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয় যে ট্রাম্প একটি চুক্তি ঘোষণা করার আশা করছেন।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘তিনি চান এই যুদ্ধের অবসান হোক, তিনি চান সকল জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হোক’।
তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ উভয় পক্ষের কাছে একটি ‘খুব বিস্তারিত ২১-দফা পরিকল্পনা’ পাঠিয়েছেন এবং প্রেসিডেন্ট আশা করেছেন উভয় পক্ষই একমত হবে’।
- ‘অটল থাকুন’-
‘দ্য টাইমস অব ইসরাইল’ এবং মার্কিন সংবাদ সাইট অ্যাক্সিওসের মতে, ট্রাম্পের পরিকল্পনায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, পর্যায়ক্রমে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানানো হয়েছে।
এরপর ইসরাইল ১,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে, যার মধ্যে বেশ কয়েকজন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
সাধারণত নেতানিয়াহুর একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর চতুর্থবার হোয়াইট হাউস সফরের আগে হতাশার ক্রমবর্ধমান লক্ষণ দেখিয়েছেন।
নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার কিছু সদস্য আহ্বান জানিয়েছেন, তিনি গত সপ্তাহে নেতানিয়াহুকে ইসরাইলি-অধিকৃত পশ্চিম তীরকে সংযুক্ত করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র কাতারে হামাস সদস্যদের ওপর ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলারও বিরোধিতা করেছিলেন।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মতে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ইসরাইলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। খান ইউনিসে কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছে।
গাজায় আটক ইসরাইলি জিম্মিদের পরিবার ট্রাম্পকে তার গাজা প্রস্তাব বহাল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম ট্রাম্পকে লেখা একটি খোলা চিঠিতে বলেছে, ‘আপনার আনা চুক্তিকে নাশকতার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আমরা আপনাকে শ্রদ্ধার সাথে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে বলছি।’
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো নাটান স্যাকস বলেছেন, ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার ওপর ফলাফল নির্ভর করতে পারে।
স্যাকস এএফপি’কে বলেছেন, ‘যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং হামাসকে পরাজিত করার ব্যাপারে নেতানিয়াহুর স্পষ্ট পছন্দ আছে। কিন্তু আমি মনে করি না ট্রাম্পের পক্ষে তাকে অন্যথায় রাজি করানো অসম্ভব।’
- গাজা থেকে কণ্ঠস্বর -
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ট্রাম্প তার পরিকল্পনা সম্পর্কে ক্রমবর্ধমানভাবে আশাবাদী বলে মনে হচ্ছে।
মার্কিন প্রস্তাবের অধীনে, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে গাজার জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষের সম্ভাব্য নেতা হিসেবে কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রচার করা হয়েছিল।
কিন্তু নেতানিয়াহু তার জাতিসংঘের ভাষণে রামাল্লা-ভিত্তিক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের গাজা শাসনে ভূমিকা রাখার ধারণাটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যা ২০০৭ সালে হামাস ক্ষমতা দখল না করা পর্যন্ত ছিল।
তিনি ফক্স নিউজকে বলেছেন, ‘একটি সংস্কারকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সম্ভাবনা যা তার সীমানা সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে একটি ইহুদি রাষ্ট্রকে গ্রহণ করে, যা তার সন্তানদের ইহুদি রাষ্ট্রের সাথে সহাবস্থান এবং বন্ধুত্বকে আলিঙ্গন করতে শেখায়।’
হোয়াইট হাউসের বৈঠকের আগে গাজায়, মানুষ আশা, ক্লান্তি এবং অবিশ্বাসের মিশ্রণ প্রকাশ করেছে।
ট্রাম্পের পূর্ববর্তী প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে ৩৪ বছর বয়সী মোহাম্মদ আবু রাবী বলেছেন, ‘আমি ট্রাম্পের কাছ থেকে কিছু আশা করি না, কারণ ট্রাম্প নেতানিয়াহুর গাজা উপত্যকা ধ্বংস এবং রিভেরা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মানুষকে বাস্তুচ্যুত করার পক্ষে সমর্থন করছেন।’ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’-তে পরিণত করার জন্য।
অন্যরা সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
হোসাম আবদ রাব বলেছেন, ‘আমরা আশা করি ট্রাম্পের পরিকল্পনা সফল হবে। আমরা চাই যুদ্ধ এবং হত্যা বন্ধ হোক।’
৫৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি আরো বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী গাজার সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে; গাজা বসবাসের অযোগ্য।
ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যান থেকে এএফপি’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১,২১৯ জন নিহত হওয়ার পর গাজা যুদ্ধ শুরু হয়।
জাতিসংঘের বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করা হয় হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে ইসরাইলের আক্রমণে ৬৬,০৫৫ জন ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।