বাসস
  ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪৩
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:১০

পরমাণু কূটনীতি ভেস্তে গেলেই ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা 

ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : পশ্চিমাদের সাথে পরমাণু আলোচনায় শেষ মুহূর্তের একটি অপ্রত্যাশিত অগ্রগতি ছাড়া আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর গত শনিবার রাতে ইরান এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে চলেছে।

জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা শুক্রবার জানিয়েছে, পরিদর্শকদের ইরানি স্থাপনাগুলোতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে কিন্তু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এক সপ্তাহের শীর্ষ পর্যায়ের কূটনীতির পর পশ্চিমা শক্তিগুলো বিলম্বে সম্মত হওয়ার মতো পর্যাপ্ত অগ্রগতি দেখতে পায়নি।

জাতিসংঘ থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।

ইরানকে তার পরমাণু কর্মসূচিতে স্পষ্টভাবে আসতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে ইউরোপীয় শক্তিগুলো জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার ‘স্ন্যাপব্যাক’ এর জন্য এক মাস আগে সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। এর মধ্যে ইসরাইলি এবং মার্কিন বোমা হামলার প্রতিক্রিয়ায় গৃহীত পাল্টা ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, তিনটি ইউরোপীয় দেশ ইরানের পরমাণু আলোচনার প্রক্রিয়াটি চালু করার পর ইরান শনিবার ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানিতে তার রাষ্ট্রদূতদের পরামর্শের জন্য নিজ দেশে ফিরে আসতে বলেছে। 

নিষেধাজ্ঞাগুলো রোববার (শনিবার নিউইয়র্কে রাত ৮টা) হতে কার্যকর হবে।

তারা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির অভিযোগে অভিযুক্ত কোম্পানি, ব্যক্তি এবং সংস্থার সাথে কাজ করার ওপর বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তার মতে ইসরাইল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন চাপ সৃষ্টি করে ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে উৎখাত করার চেষ্টা করছে, তখন কোনো চুক্তিতে পৌঁছানোর কোনো যুক্তি নেই।

পেজেশকিয়ান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘লক্ষ্য যদি হয় পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগের সমাধান করা, তবে আমরা সহজেই তা করতে পারতাম’। কারণ, তিনি আবারো জোর দিয়ে বলেছেন, ইরান কখনো পরমাণু অস্ত্র তৈরি করবে না।

পেজেশকিয়ান এই সপ্তাহে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাথে দেখা করে বলেছেন, ফ্রান্স প্রস্তাব করেছে  ইরান নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করে নিতে এক মাস বিলম্বের বিনিময়ে তার উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ ত্যাগ করবে।

তিনি বলেছেন, ‘আমরা কেন এমন ফাঁদে নিজেদের ফেলব এবং প্রতি মাসে আমাদের গলায় ফাঁস লাগাব?’।

তিনি অভিযোগ করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয়দের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে যাতে তারা কোনো আপোষে পৌঁছাতে না পারে।

ট্রাম্পের বন্ধু এবং চলমান আলোচক স্টিভ উইটকফ বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে আঘাত করতে চায় না এবং আরো আলোচনার জন্য উন্মুক্ত।

কিন্তু পেজেশকিয়ান অভিযোগ করেছেন, উইটকফের বক্তব্যের মধ্যে গুরুত্বের অভাব রয়েছে। তিনি বলেছেন, তিনি পূর্ববর্তী আলোচনার সময় চুক্তি থেকে সরে এসেছিলেন - যা ইসর্ইালের সামরিক অভিযান শুরু করার পরে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়।

- রাশিয়ার কোনোও প্রয়োগ নেই -

ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের লক্ষ্যে নিষেধাজ্ঞাগুলো করা হয়েছে, তবে সমস্ত দেশ সেগুলো প্রয়োগ করবে কি-না তা এখনো দেখা যাচ্ছে।

রাশিয়ার উপ-রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি শুক্রবার বলেছেন, ইরানের শীর্ষ অংশীদার মস্কো নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহালকে ‘বাতিল’ বলে মনে করেছে।

রাশিয়া এবং চীন শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে এপ্রিল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহাল করার জন্য অনুরোধ করেছিল কিন্তু পর্যাপ্ত ভোট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ইরানের ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং অন্যান্য সমস্ত দেশকে ইরানি তেল কেনা বন্ধ করতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছে, যদিও চীনের কোম্পানিগুলো চাপ উপেক্ষা করেছে।

ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের মাধ্যমে ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অধীনে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণের বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো ২০১৫ সালের চুক্তির অধীনে স্থগিত করা জাতিসংঘের পদক্ষেপগুলোর ‘স্ন্যাপব্যাক’ হিসাবে চিহ্নিত, যা ট্রাম্পের প্রত্যাহারের পর ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি দ্বারা দৃঢ়ভাবে সমর্থন পেয়েছিল। 

সংঘাত সমাধান অধ্যয়নকারী আন্তর্জাতিক সংকট গ্রুপ একটি প্রতিবেদনে বলেছে, ইরান ইতোমধ্যেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো মোকাবেলা করতে শিখেছে বলে স্ন্যাপব্যাককে প্রত্যাখ্যান করেছে।

তবে এটি উল্লেখ করেছে, স্ন্যাপব্যাকটি প্রত্যাহার করা সহজ ছিল না কারণ, এর জন্য নিরাপত্তা পরিষদে ঐকমত্যের প্রয়োজন হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এটি উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, মুদ্রার সংকট এবং গভীরতর অবকাঠামোগত সমস্যার সাথে লড়াই করা অর্থনীতির চারপাশে অস্থিরতা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে’।

শুক্রবার জাতিসংঘে এক প্রতিবাদী ভাষণে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই স্ন্যাপব্যাকে বিলম্ব না করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইসরাইল ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে আবারো আঘাত করতে ইচ্ছুক। জুন মাসে ১২ দিনের বোমা হামলার পর ইরানি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, এতে ১,০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইরান পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি ত্যাগ করে নিষেধাজ্ঞার প্রতিশোধ নেবে না। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, নামহীন শক্তিগুলো ‘এই অঞ্চলে আগুন লাগানোর জন্য একটি ভাসা ভাসা অজুহাত খুঁজছে।’