বাসস
  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:২০

জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রাধান্য পাবে গাজা ও ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা

ঢাকা, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে যোগ দিতে ১৪০ জনেরও বেশি বিশ্বনেতা নিউইয়র্কে যাচ্ছেন। এবারের অধিবেশনের আলোচনায় প্রাধান্য পাবে গাজা ও ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ ইস্যু।

জাতিসংঘ থেকে এএফপি জানায়, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এবারের সম্মেলনে অংশ নিতে পারছেন না। তাকে ও তার কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেয়নি।

দুই বছর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলে আকস্মিক হামলা চালায়। এরপর ইসরাইল গাজায় পাল্টা হামলা চালায়, যা এখনো চলমান। বর্তমানে গাজার মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়টি এবারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে।

আগামী সোমবার এই সম্মেলন শুরু হবে। এতে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবে সৌদি আরব ও ফ্রান্স। সেখানে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে, যার লক্ষ্য হলো উভয় পক্ষ শান্তিতে পাশাপাশি সহাবস্থান করবে।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হয়। প্রস্তাবে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে সমর্থন জানানো হয়। তবে এতে হামাসকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এবারের বৈঠকে আশা করা হচ্ছে, ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক রিচার্ড গোয়ান একে ‘প্রতীকী’ পদক্ষেপ বললেও মনে করছেন।

তিনি বলেন, দেশগুলো যদি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির পর গাজা অভিযান বন্ধের জন্য ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়াতে পারে, তাহলে এর বাস্তব প্রভাব পড়তে পারে।

গোয়ান সতর্ক করে বলেন, ইসরাইল প্রতিশোধ নিতে পারে এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কারণে পরিস্থিতি আরও ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ হতে পারে। 

নেতানিয়াহু সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন এবং স্পষ্ট করে বলেছেন, তার আমলে কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে উঠবে না।

ইসরাইলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির বিপক্ষে। তাই আব্বাসসহ ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদলকে ওয়াশিংটন ভিসা দেয়নি।

তবে আব্বাসকে ভিডিও কলের মাধ্যমে ভাষণের অনুমোদন দেওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে সাধারণ পরিষদে শুক্রবার ভোট হবে।

দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর ট্রাম্প বিদেশি সাহায্য ব্যাপক হারে কমিয়ে দিয়েছেন। যা জাতিসংঘের তহবিলেও বড় আঘাত করেছে, তারপর মানবিক প্রয়োজন বেড়েই চলেছে।

গভীর আর্থিক সংকট এবং চলমান যুদ্ধের মধ্যে জাতিসংঘ নীরবে তার ৮০তম বার্ষিকী উদযাপন করছে। একইসঙ্গে এর কার্যকারিতা নিয়ে সমালোচনারও মুখোমুখি হয়েছে। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাহী পরিচালক ফেদেরিকো বোরেলো বলেন, ‘বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা এখন অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে।’

তিনি  বলেন, যখন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যসহ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো গুরুতর আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ভঙ্গ করছে কিংবা তাতে সহযোগী হচ্ছে, তখন নিয়মগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা গাজা ও ইউক্রেনসহ অন্যান্য স্থানেও দেখা যাচ্ছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজা, ইউক্রেন, সুদান ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, মানুষ জবাবদিহিতা চাচ্ছে, পদক্ষেপ চাচ্ছে,  এমন পদক্ষেপ যা আমাদের বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে মানানসই এবং যা বাইরে থেকে যারা দেখছে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে।

প্রায় ১৪০ জন বিশ্বনেতার মধ্যে এবার নতুন মুখ হিসেবে আসছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাহ। এছাড়াও থাকবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, ব্রাজিলের  প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিও আলোচ্যসূচিতে থাকবে। ১০ বছর আগে তেহরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও আগস্টের শেষ দিকে প্যারিস, লন্ডন এবং বার্লিনের অনুরোধে সেই নিষেধাজ্ঞাগুলো সেপ্টেম্বরের শেষে পুনরায় আরোপ করা হতে পারে।

আগামী বুধবার জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করবেন গুতেরেস ও প্রেসিডেন্ট লুলা। এতে কয়েকটি দেশ নতুন করে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর লক্ষ্য ঘোষণা করতে পারে। ব্রাজিলে আসন্ন কপ-৩০ সম্মেলনের আগে এটিই হবে বড় উদ্যোগ।