শিরোনাম
ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ইসরাইলের হামলা তীব্রতর হওয়ায় প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ গাজা শহর থেকে পালিয়ে গেছে। রোববার নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসরাইলের আর্মি রেডিও একথা জানিয়েছে।
রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মূলত উত্তর গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় গত ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ৬৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৩৪৬ জন আহত হয়েছে।
জেরুজালেম থেকে সিনহুয়া এই খবর জানিয়েছে।
এই হামলায় গাজা সিটিতে কমপক্ষে দু’টি বহুতল ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে, যার মধ্যে একটি ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনও রয়েছে। সেখানে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। এতে দেখা যাচ্ছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় ভবনটি বোমা হামলার শিকার হচ্ছে এবং ধসে পড়ছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে, তারা দু’টি বহুতল ভবনে হামলা চালিয়েছে। ইসরাইল দাবি করেছে, হামাস গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং নজরদারির জন্য এগুলো ব্যবহার করেছে।
ইসরাইল জানিয়েছে, তারা গাজা শহর দখল করার পরিকল্পনা করছে। হামাসকে ভেঙে ফেলা এবং এই গোষ্ঠীর হাতে আটক প্রায় ৫০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে সেখানে আক্রমণ শুরু হওয়ার আগে প্রায় দশ লক্ষ মানুষ বাস করত এবং আশ্রয় নিয়েছিল।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রোববার জেরুজালেমে পৌঁছেছেন এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে পশ্চিম প্রাচীর পরিদর্শন করেছেন। দু’জনের মধ্যে আলোচনার রয়েছে।
নেতানিয়াহু রুবিওকে ‘ইসরাইল রাষ্ট্রের একজন অসাধারণ বন্ধু’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, তার সফর ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের মধ্যে জোটের স্থিতিস্থাপকতা’ প্রদর্শন করেছে।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওর অধীনে এই জোট আগের চেয়েও শক্তিশালী’।
ইসরাইলের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে রুবিও বলেছেন, মঙ্গলবার কাতারে ইসরাইলি হামলায় ট্রাম্প ‘খুশি নন’ তবে এটি ‘ইসরাইলিদের সাথে আমাদের সম্পর্কের প্রকৃতি পরিবর্তন করবে না।’ তিনি আরো বলেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনার উপর কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে দুই দেশকে ‘আলোচনা করতে হবে’।
সোমবার রুবিওর পূর্ব জেরুজালেমের সিলওয়ানের ফিলিস্তিনি পাড়ায় বসতি স্থাপনকারী-পন্থী এলাদ সংগঠন দ্বারা পরিচালিত একটি বসতি খনন স্থান পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযানে ৬৪ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। যার ফলে ছিটমহলের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।
ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, রোববারও ইসরাইল পশ্চিম গাজা শহরের আশপাশের এলাকায় তীব্র বিমান হামলা চালিয়েছে, যাতে কমপক্ষে সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা সিনহুয়া’কে জানিয়েছেন, বিমান হামলায় আল-কাওথার টাওয়ার, মুহান্না টাওয়ারের উপরের তলা এবং বেশ কয়েকটি বহুতল আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা আরো জানান, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য ‘ফালাস্তানা’ শিবিরকেও টার্গেট করেছে, যেখানে কয়েক ডজন তাঁবু, আশেপাশের বাড়ি এবং সুযোগ-সুবিধা, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, তেল আল-হাওয়া পাড়ার কমিউনিটি কলেজ এবং আশেপাশের আবাসিক ব্লক রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সূত্র জানিয়েছে, তেল আল-হাওয়ার বার্সেলোনা পার্কের কাছে একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় সাত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সিভিল ডিফেন্স দল ধ্বংসস্তূপ থেকে লোকজনকে উদ্ধারের জন্য কাজ করার সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলোর ওপর দিয়ে ধোঁয়ার ঘন কুণ্ডলী উড়ে যাচ্ছে।
এক প্রেস বিবৃতিতে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের যুদ্ধবিমানগুলো ‘সামরিক অভিযান এবং গোয়েন্দা উদ্দেশ্যে হামাস দ্বারা ব্যবহৃত স্থানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে’। ইসরাইলের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু হামলার আগে বাসিন্দাদের সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।
গাজায় হামাস-পরিচালিত সরকারি মিডিয়া অফিস ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার’ লক্ষ্যে আবাসিক টাওয়ার, স্কুল এবং বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘পরিকল্পিত বোমাবর্ষণ’করার অভিযোগ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
বন্দি বিনিময় আলোচনা স্থগিত
গত সপ্তাহে কাতারের রাজধানী দোহায় তাদের আলোচক প্রতিনিধিদলকে লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ এনে রোববার হামাস জানিয়েছে, তারা ইসরাইলের সাথে বন্দী বিনিময় আলোচনা স্থগিত করেছে।
হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাহির আল-নোনো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যদি দেশের ভেতরে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিদলের ওপর হামলা করা হয়, তাহলে আলোচনা আর এগোতে পারবে না।’
হামাস জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার দোহার আবাসিক এলাকায় ইসরাইলি বিমান হামলা চালানো হয়, যখন তারা মার্কিন-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন। হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা খলিল আল-হাইয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি বেঁচে গেলেও হামাসের পাঁচ সদস্য এবং একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস।
আল-নোনো নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় উভয় প্রচেষ্টায় বাধা দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, গাজার আবাসিক টাওয়ারগুলোতে ইসরাইলি হামলা তীব্রতর হলে সেখানে বন্দী ইসরাইলিদের বিপদ হতে পারে।
তিনি বলেছেন, ‘একমাত্র যৌক্তিক সমাধান হল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই যুদ্ধ বন্ধের জন্য একটি সিদ্ধান্ত জারি করা এবং তা কার্যকর করা’।
রোববার রুবিওর ইসরাইল সফরের খবরও উড়িয়ে দিয়েছেন আল-নোনো। তিনি বলেছেন, হামাস ইসরাইলের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন আশা করেনি।
কাতার নিউজ এজেন্সি (কিউএনএ) জানিয়েছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল-থানি রোববার দোহায় বলেছেন, দোহায় ইসরাইলের সাম্প্রতিক আক্রমণ কাতার, মিশর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে তাদের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে বাধা দেবে না।
কিউএনএ জানিয়েছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রী আরব ও ইসলামী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে একটি প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে এই মন্তব্য করেন, যা জরুরি আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনের আগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মঙ্গলবার দোহায় ইসরাইলের হামলার বিষয়ে একটি খসড়া বিবৃতি নিয়ে আলোচনা করেন।
আল-থানি তার বক্তৃতায় জোর দিয়ে বলেছেন, ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের বৈধ অধিকার না পেলে এই অঞ্চলটি ব্যাপক শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন করতে পারবে না।
সাহায্যকারী নৌবহর
এদিকে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের অবরোধ ভেঙে মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক কনভয় গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা (জিএসএফ) এর অংশ গ্রীক পালতোলা জাহাজ অক্সিগোনো (অক্সিজেন) রোববার সাইরোস দ্বীপ থেকে যাত্রা শুরু করেছে।
গ্রীক সংবাদপত্র এপোচি (এরা) এর সাংবাদিক এবং গ্রীক মিশনের সদস্য ভ্যাসিলিস রোগাস বলেন, এই মিশনের লক্ষ্য ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং প্রায় দুই বছর আগে শুরু হওয়া সংঘাতের অবসান ঘটাতে সহায়তা করা।
জিএসএফ আয়োজকদের মতে, বিভিন্ন বয়স এবং পেশার গ্রীক কর্মীরা এরমোপোলিস বন্দর থেকে ভূমধ্যসাগরীয় আন্তর্জাতিক জলসীমায় প্রায় ৬০টি জাহাজে চড়ে গাজা অভিমুখে ৪০টিরও বেশি দেশের প্রায় ১,০০০ অন্যান্য কর্মীর সাথে যোগ দিতে রওনা হন।