বাসস
  ১১ আগস্ট ২০২৫, ১১:১২
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৫, ১৩:২৬

গাজায় ইসরাইলি হামলায় আল-জাজিরার ৫ সাংবাদিক নিহত

ঢাকা, ১১ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) :  ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি হামলায় আল-জাজিরার পাঁচ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আল জাজিরা জানিয়েছে, গতকাল রোববার গাজা সিটিতে তাদের তাঁবুতে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় একজন বিশিষ্ট প্রতিবেদক, দুইজন  সংবাদদাতা ও তিনজন ক্যামেরাম্যানসহ মোট পাঁচ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।

গাজা সিটি থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে স্বীকার করেছে যে, হামাসের সাথে যুক্ত প্রতিবেদক আনাস আল-শরীফকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে।

গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজায় ২২ মাস ধরে চলা যুদ্ধে সাংবাদিকদের ওপর রোববারের হামলাটি সর্বশেষ। চলমান এই সংঘাতের সময় প্রায় ২শ’ গণমাধ্যম কর্মী নিহত হয়েছে।

কাতার-ভিত্তিক সম্প্রচারক আল জাজিরা জানিয়েছে, ‘গাজা সিটিতে সাংবাদিকদের আবাসস্থলে ইসরাইলি হামলায় আল জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল-শরীফ এবং তার চার সহকর্মী নিহত হয়েছেন।’ 

রোববার হাসপাতালের প্রধান ফটকের বাইরে সাংবাদিকদের তাঁবুতে হামলার পর ২৮ বছর বয়সী আল-শরীফ নিহত হন। আল জাজিরার সুপরিচিত আরবি সংবাদদাতা উত্তর গাজা থেকে ব্যাপকভাবে প্রতিবেদন পাঠাতেন বলে জানা গেছে।’

চ্যানেলটি জানিয়েছে, নিহত অপর চার সাংবাদিক হচ্ছেন-সংবাদদাতা মোহাম্মদ কুরেইকেহ, ক্যামেরা অপারেটর ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নুফাল ওং মোমেন আলিওয়া।  

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে তারা এই হামলা চালিয়েছে। তারা বলেছে যে, তারা আল জাজিরার আল-শরীফকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে এবং তাকে ‘সাংবাদিকের ছদ্মবেশ ধারণকারী’ একজন ‘সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করেছে।

টেলিগ্রামে সেনাবাহিনীর সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করে বলা হয়েছে, ‘কিছুক্ষণ আগে, গাজা সিটিতে, আইডিএফ সন্ত্রাসী আনাস আল-শরীফকে আঘাত করেছে, যিনি আল জাজিরা নেটওয়ার্কের সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতেন’। 

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী আরো বলেছে, ‘আনাস আল-শরীফ হামাস সন্ত্রাসী সংগঠনের একটি সন্ত্রাসী সেলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন এবং ইসরাইলি বেসামরিক নাগরিক এবং আইডিএফ সৈন্যদের বিরুদ্ধে রকেট হামলার জন্য দায়ী ছিলেন।’

আল-শরীফ গাজায় কাজ করা চ্যানেলের সবচেয়ে পরিচিত মুখদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি নিয়মিত প্রতিদিনের প্রতিবেদন প্রদান করতেন।

রোববার গাজায় নতুন করে আক্রমণের অনুমোদনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর এক সংবাদ সম্মেলনের পর এবং নিহত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে এক্সে আল-শরীফ লিখেছেন, গাজা শহরে তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করেছে ইসরাইল। 

তাঁর শেষ ভিডিওতে গাজা শহরে কাছাকাছি ইসরাইলের ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার একটি ছোট ভিডিও দেখানো হয়েছে।

জুলাই মাসে, কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস তার সুরক্ষার আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতি জারি করে, যেখানে তারা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর আরবি ভাষার মুখপাত্র আভিচায় আদ্রাইকে হামাস সন্ত্রাসী বলে অভিযোগ করে প্রতিবেদকের ওপর অনলাইন আক্রমণ বৃদ্ধির অভিযোগ করে।

হামলার পর, সিপিজে বলেছে, সাংবাদিকদের মৃত্যুর খবর শুনে আমরা ‘আতঙ্কিত’।

সিপিজে-র আঞ্চলিক পরিচালক সারা কুদা বলেন, ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ না দিয়েই সাংবাদিকদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করার ইসরাইলের হামলা তাদের উদ্দেশ্য এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করে,’ সাংবাদিকরা বেসামরিক নাগরিক এবং তাদের কখনই লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের জবাবদিহি করতে হবে।’

ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের সিন্ডিকেট এটিকে ‘রক্তাক্ত অপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করে হত্যার নিন্দা জানিয়েছে।

ইসরাইল ও আল জাজিরার মধ্যে বছরের পর বছর ধরে বিতর্কিত সম্পর্ক রয়েছে, গাজার সর্বশেষ যুদ্ধের পর ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ দেশটিতে চ্যানেলটি নিষিদ্ধ করেছে এবং এর কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়েছে।