বাসস
  ২৫ জুলাই ২০২৫, ১৯:৪৩

যুক্তরাজ্যে শিশুদের অনলাইন সুরক্ষায় নতুন বয়স যাচাই নিয়ম চালু

ঢাকা, ২৫ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ক্ষতিকর কনটেন্টে প্রবেশ ঠেকিয়ে শিশুদের অনলাইন সুরক্ষা দিতে যুক্তরাজ্যে শুক্রবার থেকে নতুন বয়স যাচাই নীতিমালা কার্যকর হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শক্তিশালী অনলাইন নিরাপত্তা আইন দাবি করে আসা অধিকারকর্মীরা একে একটি ‘মাইলফলক’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, নতুন নিয়ম অনুযায়ী, সম্ভাব্য ক্ষতিকর কনটেন্ট হোস্ট করে এমন ওয়েবসাইট ও অ্যাপগুলোকে বয়স যাচাই নিশ্চিত করতে হবে। এই যাচাই পদ্ধতিতে মুখের ছবি বিশ্লেষণ এবং ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকম-এর প্রধান নির্বাহী মেলানি ডজেস জানান, প্রায় ৬,০০০ পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট নতুন বিধিনিষেধ কার্যকর করতে রাজি হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এক্স (সাবেক টুইটার)-এর মতো অন্যান্য প্ল্যাটফর্মকেও শিশুদের অবৈধ পর্নো, ঘৃণামূলক ও সহিংস কনটেন্ট থেকে রক্ষা করতে হবে। বর্তমানে এক্স এই ধরনের আইন নিয়ে আয়ারল্যান্ডে আইনি জটিলতার মুখে রয়েছে।

‘আমরা এমন একটি কাজ করেছি, যা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা করেনি,’ বলেন ডজেস। ‘এই সিস্টেমগুলো কার্যকর, আমরা তা গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি।”

অফকম-এর তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে যুক্তরাজ্যে ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রায় ৫ লাখ শিশু অনলাইনে পর্নোগ্রাফি দেখেছে।

এই নতুন বিধান ২০২৩ সালের অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট থেকে কার্যকর হয়েছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে আত্মহত্যা, আত্ম-ক্ষতি, খাওয়ার সমস্যা এবং পর্নো কনটেন্ট থেকে অপ্রাপ্তবয়স্কদের দূরে রাখা।

এই আইন অনুযায়ী, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর আইনগত দায়বদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে যেন তারা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান আইন লঙ্ঘন করে, তবে তাদের ১৮ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ২৩ মিলিয়ন ডলার) অথবা তাদের সারা বিশ্বের আয়ের ১০ শতাংশ, যেটি বেশি হয়, সেই পরিমাণ জরিমানা করা হতে পারে।

এমনকি, অফকম-এর অনুরোধে তথ্য দিতে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফৌজদারি মামলার মুখোমুখিও হতে পারে।

এই নিয়মগুলো এখন কার্যকর হয়েছে, কারণ প্রযুক্তি খাত এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে প্রস্তুতির জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল।

যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তি বিষয়কমন্ত্রী পিটার কাইল বলেন, ‘শিশুরা এবার প্রথমবারের মতো একটি ভিন্ন ইন্টারনেট অভিজ্ঞতা পাবে।’ তিনি বলেন, তার এই পরিবর্তন নিয়ে ‘উচ্চ আশা’ রয়েছে।

মামসনেট নামে এক জনপ্রিয় প্যারেন্টিং ফোরামের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কাইল বলেন, ‘আমি ১৩ বছরের ঊর্ধ্বে এমন সব শিশুদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি যারা এতদিন কোনো সুরক্ষা পায়নি।’

ন্যাশনাল সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু চিলড্রেন (এনএনপিসিসি)-এর রানি গোভেন্দার একে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘অবশেষে আমরা দেখছি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাধ্য হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, শিশুদের প্রায়ই অজান্তেই ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক কনটেন্টের মুখোমুখি হতে হয়।

যদিও তিনি স্বীকার করেন, ‘এখনও কিছু ফাঁকফোকর থাকবে’, তবে ‘এই কঠোর আইনগুলো চালু করা সময়োচিত ও অত্যন্ত জরুরি।’

প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সরকার আরও একধাপ এগিয়ে শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিন মাত্র দুই ঘণ্টার সময়সীমা চালুর কথাও ভাবছে।

পিটার কাইল বলেন, ‘আমরা শিগগিরই ১৬ বছরের নিচে শিশুদের জন্য প্রযুক্তি খাতে আরও কঠোর বিধি নিয়ে আসবো।’