বাসস
  ২৫ জুলাই ২০২৫, ১৯:৩৪

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান ফ্রান্সের

ঢাকা, ২৫ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : গাজায় চলমান যুদ্ধ ও রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ফ্রান্স। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বৃহস্পতিবার জানান, সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের এক বৈঠকে ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে, যা ইউরোপের প্রভাবশালী কোনো দেশের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রথম ঘোষণা।

প্যারিস  থেকে এএফপি জানায়, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র এই ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করেছে। ইসরাইল একে ‘সন্ত্রাসের পুরস্কার’ বলে আখ্যা দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও একে ‘বেপরোয়া’ সিদ্ধান্ত বলেছেন এবং দাবি করেছেন যে, এতে কেবল হামাসের প্রোপাগান্ডাই জোরদার হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইল দূত মাইক হাকাবি রসিকতা করে বলেন, ‘মাখোঁ কোথায় এই নতুন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে, তা বলেননি। তবে আমি এক্স-এ একতরফাভাবে জানাতে পারি, ফ্রান্স ‘ফরাসি রিভিয়েরা’ অঞ্চলটি নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বরাদ্দ দেবে এবং নাম হবে ‘ফ্রঁ-আন-স্তাইন’।’

অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চোখে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হামাস এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, ‘এটি আমাদের নির্যাতিত ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি ন্যায়ের পথে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।’

তবে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারো শুক্রবার বলেন, মাখোঁর এই উদ্যোগ আসলে হামাসের বিপরীতে অবস্থান নেয়া। ‘হামাস কখনোই দুই-রাষ্ট্র সমাধান মেনে নেয়নি। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়ে ফ্রান্স আসলে সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে গেছে,’ ব্যারো বলেন।

তিনি আরও বলেন, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ফ্রান্স ‘যুদ্ধের বিপরীতে শান্তির পক্ষ নিয়েছে।’

ঘরোয়া রাজনীতিতে বিষয়টি মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। বামপন্থীরা একে সাধুবাদ জানিয়েছে, ডানপন্থীরা কড়া সমালোচনা করেছে, আর সরকারের অনেকেই নীরব থেকেছেন।

চরম ডানপন্থী ন্যাশনাল র‌্যালি (আরএন) দলের নেতা জর্ডান বারডেলা একে ‘আচমকা’ সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন, যা হামাসকে ‘অপ্রত্যাশিত প্রাতিষ্ঠানিক ও আন্তর্জাতিক বৈধতা’ দিয়েছে।

পার্লামেন্টে আরএন নেত্রী মারিন লো পেন বলেন, ফরাসি এই সিদ্ধান্ত ‘হামাস রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া, অর্থাৎ একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া’।

অপরদিকে, বামপন্থী ‘ফ্রান্স আনবাউন্ড’ পার্টির নেতা জ্যাঁ-লুক মেলঁশো বলেন, মাখোঁর ঘোষণা একটি ‘নৈতিক জয়’, যদিও তিনি তাৎক্ষণিক কার্যকর না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের মধ্যে গাজা হয়তো এক বিশাল কবরস্থানে পরিণত হবে।’

ডানপন্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইয়ো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন, জানান যে তিনি ‘ফরাসি পর্যটকদের নিরাপত্তা’ নিয়ে ব্যস্ত আছেন।

‘লে রিপাবলিকান’ পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া-জ্যাভিয়ে বেলামি বলেন, মাখোঁর সিদ্ধান্ত হয় ‘অকার্যকর’ নয়তো ‘ক্ষতিকর’ হতে পারে। তিনি বলেন, এতে ‘ইসরাইলি নাগরিকদের পাশাপাশি হামাসের বর্বরতার শিকার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদেরও বিপদের মুখে ফেলা’ হয়েছে।

বেলামি আরও বলেন, মাখোঁ এর আগে ফিলিস্তিন স্বীকৃতির জন্য যে শর্তগুলো দিয়েছিলেন, যেমন হামাসের অস্ত্রসমর্পণ, তাদের সরকারে না থাকা, ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তি ও ইসরাইলকে আরব রাষ্ট্রগুলোর স্বীকৃতি, সেগুলোর একটিও পূরণ হয়নি।

প্যারিসের রাস্তায় সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াও ছিল মিশ্র। একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার জুলিয়ান দ্যু বলেন, ‘ফ্রান্সের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার এখনই সময়। বছরের পর বছর দুই-রাষ্ট্র সমাধান নিয়ে কথা বলার পর একটির স্বীকৃতি না দেওয়া বাস্তবতা অস্বীকারের সামিল।’

অন্যদিকে ৭৯ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত গিল বলেন, ‘আমি আমার প্রেসিডেন্টের কাছে প্রতারিত বোধ করছি। কাল যদি হামাস ক্ষমতায় আসে, আমি একজন ফরাসি নাগরিক হিসেবে লজ্জিত হবো।’

ফ্রান্স ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, যদিও আরও কিছু দেশও একই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, তিনি শুক্রবার ফ্রান্স ও জার্মানির নেতাদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কথা বলবেন এবং বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি আমাদের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির পথে এগিয়ে দেবে।’

তবে জার্মানি শুক্রবার জানায়, তারা ‘স্বল্পমেয়াদে’ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে না।

নরওয়ে, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, স্লোভেনিয়া ও কয়েকটি অন্যান্য অ-ইউরোপীয় দেশ ইতিমধ্যেই গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ফ্রান্স এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা দাঁড়াবে কমপক্ষে ১৪২টিতে।