শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে শহীদ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাসহ প্রায় ৬০ জনের জন্য শনিবার রাষ্ট্রীয় জানাজা আয়োজন করেছে ইরান। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে নিন্দা জানায় তেহরান।
স্থানীয় সময় সকাল ৮টা (০৪৩০ জিএমটি) থেকে রাজধানী তেহরানে জানাজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এই উপলক্ষে শনিবার সরকারি অফিস ও অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, ‘শহীদদের সম্মান জানাতে অনুষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।’ টেলিভিশনে দেখা যায়, জনগণ শোকের পোশাক পরে ইরানের পতাকা ও শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের ছবি হাতে নিয়ে জানাজায় অংশ নিচ্ছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারাও এই জানাজায় অংশ নেন।
তেহরানের কেন্দ্রস্থলের ইনকিলাব স্কয়ারে শহীদদের কফিন ইরানের পতাকায় মোড়া অবস্থায় রাখা হয়। ছবিতে দেখা যায়, তাদের সবাই সামরিক পোশাকে ছিলেন।
গত সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্র তিনটি ইরানি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়। এর মাধ্যমে তারা মিত্র ইসরাইলের সঙ্গে মিলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর ১৩ জুন শুরু হওয়া ১২ দিনের যুদ্ধে বোমাবর্ষণে অংশ নেয়।
যুদ্ধ শেষে ইসরাইল ও ইরান উভয় পক্ষই নিজেদের বিজয় দাবি করে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনেয়ী যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে তেমন কোনো ‘গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়’ বলে আখ্যায়িত করেন।
এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে এক তিরস্কারমূলক পোস্টে তেহরানের যুদ্ধজয়ের দাবি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি দাবি করেন, তিনি ‘সঠিকভাবে জানতেন খামেনেয়ী কোথায় লুকিয়ে ছিলেন, এবং ইসরাইল বা মার্কিন সেনাবাহিনী যাতে তাকে হত্যা না করে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন’।
ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি তাকে এক জঘন্য ও অপমানজনক মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছি, আর সে আমাকে ধন্যবাদও দেয়নি!’
তিনি আরও লেখেন, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছিলেন, যা তেহরানের প্রধান দাবিগুলোর একটি।
‘কিন্তু না, পরিবর্তে আমি ক্ষোভ, ঘৃণা ও বিরক্তির এক বিবৃতি পাই, এবং সঙ্গে সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার সব কাজ বাতিল করি,’ বলেন ট্রাম্প।
এর জবাবে শনিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এক্স প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্পের মন্তব্যের নিন্দা জানান।
তিনি লেখেন, ‘ট্রাম্প যদি সত্যিই একটি চুক্তি চান, তাহলে তাকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী সম্পর্কে অশ্রদ্ধাশীল ও অগ্রহণযোগ্য ভাষা পরিহার করতে হবে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘ইরানের মহৎ ও শক্তিশালী জনগণ সারা বিশ্বকে দেখিয়েছে যে ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠীর আমাাাদের ক্ষেপণাস্ত্রের মুখোমুখি হয়ে পালিয়ে তাদের ‘বাবার’ কাছে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তারা হুমকি ও অপমান সহ্য করে না।’
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৬২৭ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইরানের হামলায় ইসরাইলে ২৮ জন নিহত হয়েছেন বলে তেল আবিব জানায়।
তেহরানে শহীদদের সম্মান জানিয়ে শুরু হওয়া এই রাষ্ট্রীয় জানাজা শেষ হবে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরের আজাদি স্কয়ারে গিয়ে।
তেহরানের ইসলামি উন্নয়ন সমন্বয় পরিষদের প্রধান মোহসেন মাহমুদি বলেছেন, এই জানাজার দিন ইসলামি ইরান ও বিপ্লবের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন।’
শহীদদের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ বাঘেরি, যিনি ইরানের বিপ্লবী গার্ডের মেজর জেনারেল এবং সর্বোচ্চ নেতার পরে সশস্ত্র বাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
তাকে তার স্ত্রী ও কন্যার পাশে দাফন করা হবে, যারা স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক ছিলেন এবং ইসরাইলি হামলায় নিহত হন।
এছাড়া নিহত পরমাণু বিজ্ঞানী মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচিকেও তার স্ত্রীর পাশে দাফন করা হবে।
যুদ্ধের প্রথম দিন নিহত বিপ্লবী গার্ডসের প্রধান হোসেইন সালামিকেও শনিবারের জানাজার পর দাফন করা হবে। তার সঙ্গে আরও অন্তত ৩০ জন শীর্ষ কমান্ডারকে সম্মান জানানো হবে।
যাদের দাফন করা হবে, তাদের মধ্যে চারজন শিশু।