বাসস
  ২৮ জুন ২০২৫, ১৫:১৮

রুয়ান্ডা ও ডিআরসি’র মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত

ঢাকা, ২৮ জুন, ২০২৫ (বাসস) যুদ্ধ অবসানে রুয়ান্ডা ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআরসি) শুক্রবার ওয়াশিংটনে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। দু’দেশের মধ্যে এই যুদ্ধে কয়েক সহস্র মানুষের প্রাণহানির হয়েছে। 

চুক্তিটিতে গেরিলাদের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দুই দেশ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খনিজ সম্পদ সুরক্ষিত হবে বলে সন্তোষ প্রকাশ করছেন।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এটি একটি চমৎকার দিন।’ ‘আজ, সহিংসতা ও ধ্বংসের অবসান ঘটছে এবং সমগ্র অঞ্চল আশা ও সুযোগের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করছে।’

রুয়ান্ডার সাথে যুক্ত জাতিগত টুটসি বিদ্রোহী বাহিনী এম২৩, এই বছরের শুরুতে ডিআরসি-এর খনিজ সমৃদ্ধ পূর্বে গোমা নগরীসহ বিশাল অঞ্চল দখল করার পর চুক্তিটি হচ্ছে।

ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগে থেকেই কাতারের আলোচনার মাধ্যমে করা এই চুক্তিতে কয়েক দশক ধরে চলমান যুদ্ধে বিধ্বস্ত এলাকায় এম২৩-এর দখলের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি, তবে রুয়ান্ডাকে তাদের গৃহীত ‘প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা’ বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

রুয়ান্ডা এম২৩-কে সরাসরি সমর্থন করার কথা অস্বীকার করেছে। চুক্তিটিতে আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী, ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস ফর দ্য লিবারেশন অফ রুয়ান্ডা (এঢডিএলআর) বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে। এফডিএলআর গোষ্ঠীটি ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় টুটসি গণহত্যার সাথে যুক্ত জাতিগত হুতুরা প্রতিষ্ঠা করে।

চুক্তিতে এডডিএলআর-কে ‘নিরস্ত্রীকরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে, রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলিভিয়ার নদুহুঙ্গিরেহে বলেছেন, হুতু জঙ্গিদের ‘অপরিবর্তনীয় ও যাচাইযোগ্য রাষ্ট্রীয় সমর্থন বন্ধ করা’ ‘প্রথম কাজ’ হওয়া উচিত।

নদুহুঙ্গিরেহে পররাষ্ট্র দপ্তরে এক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলেন, ‘রুয়ান্ডার প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহারের সাথে প্রক্রিয়াটি যুক্ত থাকবে।’ তবে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের স্বীকার করতে হবে যে আমাদের অঞ্চলে এবং তার বাইরেও অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে,  যে কারণে পূর্ববর্তী অনেক চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি।’

কঙ্গোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেস কাইকওয়াম্বা ওয়াগনার, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার লক্ষ্যে চুক্তির আহ্বান বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘শুধু কথার মাধ্যমে নয়, এটি বাস্তব পরিবর্তনের মাধ্যমেও পাতা উল্টানোর একটি বিরল সুযোগ প্রদান করেছে। কিছু ক্ষত সেরে যাবে, কিন্তু সেগুলো কখনই সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হবে না।’

চুক্তিতে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি যৌথ নিরাপত্তা সমন্বয় সংস্থাও গঠন করা হয়েছে এবং তিন মাসের মধ্যে একটি ‘আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একত্রীকরণ কাঠামো’ তৈরির জন্য অস্পষ্ট আহ্বান জানানো হয়েছে।

হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠানের শুরুতে ট্রাম্প এই চুক্তি সম্পর্কিত কূটনীতির প্রশংসা করেছেন । 

শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়, ট্রাম্প বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘কঙ্গোর খনিজ সম্পদের অধিকার’ সুরক্ষিত করতে সক্ষম হবে।

কঙ্গোয় বিশাল খনিজ মজুদ রয়েছে। বিশেষত সেখানে রয়েছে বৈদ্যুতিক যানবাহন ও অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তিতে ব্যবহার্য্য গুরুত্বপূর্ণ লিথিয়াম ও কোবাল্ট। মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বী চীন বর্তমানে সম্পদ সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।

১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যার ভয়াবহতার দিকে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প বলেন  তিনি এই সংঘাতের সাথে অপরিচিত ছিলেন। ওই সংঘাতে মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই টুটসি।

চুক্তিটি ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। তবে, কেউ কেউ এর সমালোচনা করেছে।

ডিআরসিতে জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিনতু কেইতা বলেছেন, এটি ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার দিকে একটি সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ’। জার্মানি এটিকে ‘চমৎকার খবর’ অভিহিত করে স্বাগত জানিয়েছে এবং এটি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে।

ফরাসি  প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ চুক্তিটিকে ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ বলে প্রশংসা করে এটিকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে যুদ্ধে কঙ্গোর যৌন সহিংসতার মহামারী বন্ধে কাজ করার জন্য ২০১৮ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কারপ্রাপ্ত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডেনিস মুকওয়েগে এই চুক্তি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এটি কার্যকরভাবে রুয়ান্ডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উপকৃত করেছে।