বাসস
  ২৫ জুন ২০২৫, ২০:১৭

কল্যাণ ভাতা কমানো নিয়ে এমপিদের বড় বিদ্রোহের মুখে কিয়ার স্টারমার

ঢাকা, ২৫ জুন, ২০২৫ (বাসস): পার্লামেন্ট সদস্যদের বিদ্রোহের মুখে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বুধবার প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ ব্যক্তিদের কল্যাণ ভাতা কমানোর বিতর্কিত পরিকল্পনায় অনড় অবস্থান নিয়েছেন।

গত বছরের জুলাইয়ে বিশাল ব্যবধানে কনজারভেটিভ পার্টিকে পরাজিত করে ক্ষমতায় আসার পর কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টির  জন্য প্রথম বছরটি বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত এই আইন নিয়ে আগামী মঙ্গলবার পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে। 

লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, চলমান অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র‌্যাচেল রিভস সরকারি ব্যয়ের লাগাম টানতে চাচ্ছেন। এ সময় এই বিলটি নিয়ে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে।

স্টারমারের ঘোষণার দিনই দেখা গেছে—পার্লামেন্টে লেবার পাটির ৪০৩ জন সদস্যের মধ্যে অন্তত ১২০ জন এমপি প্রকাশ্যে বিলটি আটকানোর পদক্ষেপে সমর্থন দিয়েছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ডাউনিং স্ট্রিটে স্টারমারের কার্যালয়ের ভেতরে বিদ্রোহের ব্যাপ্তি নিয়ে গভীর উদ্বেগ বিরাজ করছে।

দ্য টাইমস পত্রিকায় এক মন্ত্রী বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন এক রকম আতঙ্কের।’

আর দ্য সান পত্রিকায় লেবার পার্টির ভেতরের এক সূত্র বলেন, ‘অনেক এমপি খুশি হয়েই বিদ্রোহ করছেন। কারণ তারা একের পর এক জরিপে দেখছেন, তাদের আসনগুলো পরের নির্বাচনে রিফর্ম পার্টির হাতে চলে যেতে পারে।’

এদিকে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থানরত স্টারমার বলেন, আমার নির্বাচনের ম্যান্ডেট হলো—যেটা ভেঙে গেছে, সেটাকে বদলানো। আর এই কল্যাণ ভাতা কারো জন্যই উপকারে আসছে না।
তিনি এলবিসি রেডিওকে বলেন, আগামী মঙ্গলবার ভোট হবে, আমরা কল্যাণ খাত সংস্কার করব।

প্রস্তাবিত ইউনিভার্সাল ক্রেডিট ও পার্সোনাল ইনডিপেনডেন্স পেমেন্ট (পিআইপি) বিল কল্যাণভাতা গ্রহণের যোগ্যতা সীমিত করে আরও বেশি মানুষকে কর্মক্ষেত্রে ফেরানোর লক্ষে প্রণয়ন করা হয়েছে।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ২৫ লাখ মানুষ পিআইপি ভাতা পেতেন। বর্তমানে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭ লাখে। এদের মধ্যে কিশোর ও যুবকদের অনুপাত বাড়ছে।

এদিকে কল্যাণ ভাতা কমানোর পরিকল্পনা নিয়ে লেবার পার্টির নেতাদের মধ্যেও বিরোধ দেখা দিয়েছে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেন, মন্ত্রীদের এই পরিকল্পনা ‘অবিলম্বে পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

অপরদিকে ম্যানচেস্টারের মেয়র অ্যান্ডি বার্নহ্যাম বলেন, বিদ্রোহীদের সংখ্যা দেখে স্টারমারকে ওই পরিকল্পনা থেকে বিরত থাকা উচিত।

ওয়েলসের লেবার ফার্স্ট মিনিস্টার এলুনেড মরগানও বিলটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

এই বিতর্ক এমন এক সময় সৃষ্টি হয়েছে, যখন ব্রেক্সিটপন্থী নেতা নাইজেল ফারাজের কট্টর ডানপন্থী দল রিফর্ম ইউকে জনমত জরিপে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে।

চলতি বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে দলটি কয়েকশ’ কাউন্সিলর পদ জিতে নেয়। দলটি বর্তমানে জনসেবার দুরবস্থা, অপরাধ, অভিবাসন ও জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে বিক্ষোভ করছে।

পার্লামেন্টে রিফর্ম পার্টির এমপি মাত্র পাঁচজন হলেও গত সাধারণ নির্বাচনে তারা ১৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে।

ইপসোস জরিপ অনুযায়ী, দলটির এখন ৩৪ শতাংশ সমর্থনে রয়েছে। অন্যদিকে লেবার পার্টির সমর্থন ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ রিফর্ম ৯ শতাংশ এগিয়ে রয়েছে।

পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন এখনও চার বছর বাকি। তবে এই ধারা অব্যাহত থাকলে ডাউনিং স্ট্রিটের নিয়ন্ত্রণ নাইজেল ফারাজের হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।