বাসস
  ১২ জুন ২০২৫, ১৩:৫০

চীনের সঙ্গে বিরল খনিজ চুক্তির চূড়ান্ত ঘোষণা ট্রাম্পের

ঢাকা, ১২ জুন, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার চীনের সঙ্গে ‘চমৎকার’ সম্পর্কের প্রশংসা করেছেন এবং জানিয়েছেন, দুই দিনের আলোচনার পর দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তির মধ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, যার লক্ষ্য বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার প্রচেষ্টা বজায় রাখা।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে জানান, চীন যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ ও চুম্বক সরবরাহ করবে। যা মার্কিন শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর বিনিময়ে ওয়াশিংটন চীনা শিক্ষার্থীদের মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানের অনুমতি দেবে।

মার্কিন ও চীনা শীর্ষ পর্যায়ের আলোচকরা মঙ্গলবার রাতে লন্ডনে টানা দুই দিনের বৈঠকের পর একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি ঘোষণা করেন। তবে এই চুক্তির আওতায় সাম্প্রতিক কিছু শুল্ক বহাল থাকবে এবং বিস্তারিত তথ্য এখনো স্পষ্ট নয়।

ট্রাম্প লিখেছেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের চুক্তি সম্পন্ন। তবে এটি আমার ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের ওপর নির্ভর করছে বলে তিনি জানান।

অপর একটি পৃথক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘আমরা একসঙ্গে কাজ করবো চীনকে আমেরিকান বাণিজ্যের জন্য আরো উন্মুক্ত করতে।

মার্কিন শেয়ার বাজার বুধবার প্রাথমিকভাবে কিছুটা বেড়ে পরে নিম্নমুখী প্রবণতায় শেষ হয়েছে।

‘সঠিক পথে’

প্রায় ২০ ঘণ্টার আলোচনার পর মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক গতকাল বুধবার বলেছেন, আলোচনা সঠিক পথে আছে।

তিনি সিএনবিসি’কে বলেছেন, চুক্তি অনুমোদনের পর চীনের কোম্পানিগুলো অবিলম্বে মার্কিন চুম্বকজাত পণ্যের সব আবেদন অনুমোদন করবে।

তিনি আরো জানান, বেইজিং কার্যকর পদক্ষেপ নিলে ওয়াশিংটন তার পদক্ষেপগুলো তুলে নেবে। তবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের চীনের ওপর যে শুল্ক হার রয়েছে, তা অপরিবর্তিত থাকবে।

তবে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট কংগ্রেসে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেছেন, চীনের সঙ্গে একটি বিস্তৃত চুক্তি অর্জন একটি  ‘দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া।’ চীন  যদি বাণিজ্য আলোচনায় ‘বিশ্বস্ত অংশীদার’ হিসেবে প্রমাণ দিতে পাওে, তবে অর্থনৈতিক ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব।

তিনি আরো বলেছেন, অন্যান্য দেশগুলোর জন্যও উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের বিরতি বাড়ানো হতে পারে, যদি তারা সততার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যায়।

ট্রাম্প এপ্রিলে বেশিরভাগ বাণিজ্য অংশীদারের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেন। তবে কয়েক ডজন অর্থনীতির জন্য এসব শুল্ক জুলাইয়ের শুরু পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।

গত মাসে জেনেভায় আলোচনার সময় চীনের সাথে, ওয়াশিংটন একইভাবে, তিন অঙ্কের শুল্ক কমাতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প বেইজিংকে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করার পর ডিটেন্টে ফাটল দেখা দেয়।

এপ্রিলের শুরুতে বেইজিং দেশীয় রপ্তানিকারকদের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার বাধ্যবাধকতা শুরু করার পর বিরল মৃত্তিকার সরবরাহ ধীরগতিতে ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন ছিল - যা ব্যাপকভাবে মার্কিন শুল্কের প্রতিক্রিয়া হিসাবে দেখা যায়।

বুধবার, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে যে চীন মার্কিন গাড়ি নির্মাতা এবং নির্মাতাদের জন্য বিরল মাটির রপ্তানি লাইসেন্সের ওপর ছয় মাসের সীমা নির্ধারণ করছে।

 ‘ খোলামেলা আলোচনা’

বিরল খনিজ ইলেকট্রিক গাড়ি, হার্ড ড্রাইভ, উইন্ড টারবাইন এবং ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিতে ব্যবহার করা হয়। 

ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প বলেছেন,  অগ্রিমভাবে চীন পূর্ণ চুম্বক ও প্রয়োজনীয় যেকোনো বিরল খনিজ সরবরাহ করবে।

ওয়াশিংটন চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের ঘোষণা দিয়েও বেইজিংয়ের ক্ষোভের মুখে পড়ে। কারণ, ওয়াশিংটন মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়ের একটি প্রধান উৎস।

বুধবার, ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা চীনকে যা সম্মত হয়েছিল তা প্রদান করব, যার মধ্যে আমাদের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবহারকারী চীনা শিক্ষার্থীরাও অন্তর্ভুক্ত আছে।’

তিনি আরো জানান, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে চীনা পণ্যের ওপর ৫৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করছে।  যার মধ্যে রয়েছে এ বছর তার ঘোষিত অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ শুল্ক এবং পূর্ব থেকে চালু গড় ২৫ শতাংশ হারে কর।

চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করছে, যা আগে ঘোষিত সমঝোতার মতোই, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ১৪৫ শতাংশ এবং চীনের ১২৫ শতাংশ থেকে কমানো হয়েছিল।

চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে, বেইজিংয়ের প্রতিনিধিত্বকারী ভাইস প্রিমিয়ার হে লিফেং বলেছেন, ভবিষ্যৎ আলোচনায় উভয় পক্ষের আরো সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।

লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় চীনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রতিনিধি লি চেংগাং বলেন, ‘আমাদের আলোচনা পেশাদার, যুক্তিসঙ্গত, গভীর এবং খোলামেলা হয়েছে’।