শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্য সংস্থা ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ বা ডব্লিউএইচও তাদের বার্ষিক অধিবেশনে ২০২৬-২০২৭ সালের জন্য বাজেট চূড়ান্ত করেছে, তবে আর্থিক ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় সংস্থাটি এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
জেনেভা থেকে এএফপি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান প্রত্যাহারের ধাক্কায় সংস্থাটি তাদের পূর্বঘোষিত ৫.৩ বিলিয়ন ডলারের বাজেট কমিয়ে ৪.২ বিলিয়নে নামিয়ে এনেছে। অথচ এর আগের দুই বছরের বাজেট ছিল ৬.৮ বিলিয়ন ডলার। নতুন বাজেট পরিকল্পনা বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদে অনুমোদন পেলেও এতে এখনো প্রায় ১.৭ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি রয়ে গেছে।
ডব্লিউএইচওর বাজেট দুই বছর মেয়াদি। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর সংস্থাটি মূলত সদস্য দেশগুলোর ‘বাধ্যতামূলক অনুদান’ দিয়ে চলে আসছিল, যা দেশটির আয় ও জনসংখ্যা অনুযায়ী নির্ধারিত হতো। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্থাটি ক্রমশ ‘স্বেচ্ছা অনুদানের’ ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে—যার অর্থ অনুদানদাতা নিজের পছন্দমতো খাতে অর্থ বরাদ্দ করে থাকে।
২০২০-২০২১ মেয়াদে বাধ্যতামূলক অনুদান ছিল মাত্র ১৬ শতাংশ। নির্ভরতা কমাতে ২০২২ সালে সদস্য রাষ্ট্রগুলো একমত হয় যে ২০৩০-৩১ সাল নাগাদ ডব্লিউএইচওর মূল বাজেটের ৫০ শতাংশ আসবে বাধ্যতামূলক অনুদান থেকে। এ লক্ষ্যে ২০২৪-২৫ সালের বাজেটে সদস্য ফি ২০ শতাংশ বাড়ানো হয় এবং এবারের অধিবেশনেও আবার ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, যা বছরে অতিরিক্ত ৯০ মিলিয়ন ডলার রাজস্ব এনে দেবে।
বাজেটের ৬০ শতাংশ নিশ্চিত, তবে ১.৭ বিলিয়ন ঘাটতি
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানোম গেব্রিয়েসুস বলেন, ‘এই বাজেট অনুমোদন ডব্লিউএইচওর প্রতি আপনাদের আস্থার প্রতীক।’
ইস্টার্ন মেডিটেরেনিয়ান অঞ্চলের পরিচালক হানান বালখি জানান, ২০২৬-২৭ বাজেটের ৬০ শতাংশ অর্থ ইতিমধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে, যা বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন।
গত সপ্তাহের প্রতিশ্রুতি সম্মেলনে অতিরিক্ত ২১০ মিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ছিল সুইজারল্যান্ডের ৮০ মিলিয়ন, নোভো নর্ডিস্ক ফাউন্ডেশনের ৫৭ মিলিয়ন, সুইডেনের ১৩.৫ মিলিয়ন এবং কাতারের ৬ মিলিয়ন ডলার।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় ফিরে ডব্লিউএইচও থেকে বেরিয়ে যাওয়ার এক বছর মেয়াদি প্রক্রিয়া শুরু করেন এবং প্রায় সব বিদেশি সহায়তা স্থগিত রাখেন। ২০২৪ ও ২০২৫ সালের সদস্য ফি পরিশোধ না করায় সংস্থাটি ব্যাপক আর্থিক চাপে পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র অংশ না নিলেও মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র ভিডিও বার্তায় ডব্লিউএইচওকে ‘অকার্যকর ও অনুৎপাদনশীল’ বলে অভিহিত করেন এবং অন্যান্য দেশগুলোকে নতুন প্রতিষ্ঠান গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক হওয়ার আহ্বান জানান। তার অভিযোগ, সংস্থাটি চীন, জেন্ডার আদর্শ এবং ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রভাবাধীন।
বাজেট সংকোচনের কারণে ডব্লিউএইচও তাদের নির্বাহী ব্যবস্থাপনা দলকে ১৪ জন থেকে ৭ জনে নামিয়ে আনছে। এছাড়া, ৭৬টি বিভাগের পরিবর্তে ৩৪টি বিভাগ রাখা হবে। এখনো পর্যন্ত অন্য কোনো জাতিসংঘ সংস্থার মতো বড় ধরনের ছাঁটাই ঘোষণা করা হয়নি।