বাসস
  ২৮ মে ২০২৫, ২০:০০

কানাডা ‘শক্তিশালী ও স্বাধীন’: রাজা তৃতীয় চার্লস

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস): যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস কানাডার সংসদ উদ্বোধনকালে দেওয়া 'রাজ ভাষণে' দেশটিকে ‘শক্তিশালী ও স্বাধীন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য করার হুমকি দিচ্ছেন- এমন সময় তিনি একথা বললেন।

অটোয়া থেকে এএফপি জানায়, রাজা চার্লস বলেন, 'গণতন্ত্র, বহুত্ববাদ, আইনশৃঙ্খলা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীনতা—এই মূল্যবোধগুলো কানাডীয়দের অন্তর থেকে উৎসারিত হয় এবং সরকার এগুলো রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।' তিনি আরও উল্লেখ করেন, কানাডা এখন একটি ‘সংকটময় সময়’ পার করছে।

প্রশংসার ভঙ্গিতে তিনি কানাডার জাতীয় সংগীত থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, 'আমাদের উত্তর সত্যিই শক্তিশালী ও স্বাধীন!'

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি ৭৬ বছর বয়সী ব্রিটিশ রাজাকে আমন্ত্রণ জানান। রাজা কানাডার রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে প্রধান আসরে উপস্থিত ছিলেন, যেখানে রানী ক্যামিলাও সঙ্গী ছিলেন।

রাজা চার্লস কখনও ট্রাম্পের বারংবার কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার কথায় সরাসরি মন্তব্য করেননি, তবে তার ভাষণে এ বিষয়ের সুক্ষ্ম ইঙ্গিত রয়েছে।

ভাষণটি রাজা নিজে পড়েছেন। তবে এটি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের তৈরি করা। এতে সরকারের ‘শক্তিশালী কানাডা গড়ার’ অগ্রাধিকার ও পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

ট্রাম্প শুধু কানাডার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার হুমকি দিচ্ছেন না, বিশেষ করে কানাডাকে লক্ষ্য করে বাণিজ্য শুল্ক যুদ্ধও চালাচ্ছেন।

রাজা সতর্কভাষায় বলেন, 'বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা নিখুঁত না হলেও দশকের পর দশক ধরে কানাডার সমৃদ্ধির চালিকা শক্তি ছিল, এখন তা পরিবর্তনের মুখে।'

তিনি যোগ করেন, 'আমাদের চোখ খুলে দেখতে হবে, বিশ্ব এখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও অনিশ্চিত সময় পার করছে।'

ট্রাম্প পাল্টা ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার প্রস্তাব দিয়ে লিখেছেন, 'কানাডা আমাদের অসাধারণ গোল্ডেন ডোম সিস্টেমের অংশ হতে চায়। তারা যদি আলাদা জাতি থাকে, তাহলে খরচ পড়বে ৬১ বিলিয়ন ডলার, আর ৫১তম রাজ্য হলে খরচ শূন্য।'

কানাডার সরকার এখনও এ প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

ঐতিহাসিক ও প্রতীকী মুহূর্ত

চার্লসের ভাষণটি সিনেটে দেওয়া হয়—যা এক সময় রেলস্টেশন ছিল। বর্তমানে সংসদ সংস্কারের কারণে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্ট বিচারক এবং আদিবাসী নেতারা পবিত্র পালক পরিহিত অবস্থায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী কারনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আপনি আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানুষের উৎসাহ দেখতে পাচ্ছেন। আমাদের সার্বভৌমত্ব অটুট।'

রাজা চার্লসের এই ‘রাজ ভাষণ’ প্রায় ৫০ বছর পর কোনো রাজার দেওয়া প্রথম ভাষণ। এর আগে তার মা প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৫৭ ও ১৯৭৭ সালে দুইবার এই ভাষণ দিয়েছিলেন।

কুইবেকের বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ফেলিক্স ম্যাথিউ বলেন, 'প্রতীকী অর্থে এটি অসাধারণ। এ বার্তা ট্রাম্পকে জানানো যে কানাডা এই লড়াইয়ে একা নয়।'

কারনি ঘোষণা দিয়েছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় রূপান্তর ঘটিয়ে তিনি কানাডাকে ‘ট্রাম্পের সামনে দৃঢ়ভাবে দাঁড় করাবেন’।

রাজা বলেন, কানাডা নতুন জোট গড়ে তুলবে, বিশ্বজুড়ে বিশ্বাসযোগ্য বাণিজ্য ও নিরাপত্তা অংশীদার খুঁজবে এবং সামরিক ও আর্কটিক রক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াবে।

তিনি যোগ করেন, “কানাডা তাদের মতো মূল্যবোধ বিশ্বাসী দেশগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও মুক্ত বাণিজ্যের অংশীদারিত্ব গড়তে প্রস্তুত।”

উৎসবমুখর অভ্যর্থনা

হাজার হাজার মানুষ রাজাকে দেখার জন্য রাজকীয় মিছিলের সঙ্গে পথে জমায়েত হয়, এ সময় রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ ঘোড়ায় চড়ে পথচারীদের নিরাপত্তা দেয়।

উৎসবমুখর পরিবেশে কানাডীয় পতাকা ওড়ানো হয়, ২১ বার গান সালুট দেয়া হয় এবং যুদ্ধবিমানের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

রাজা মিছিলের মাঝে নিরাপত্তা বেষ্টনীর পাশে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গেও কথা বলেন।

৪৪ বছর বয়সী কার্সটেন হ্যানসন বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বাড়ছে, তাই রাজার সমর্থন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কানাডার সার্বভৌমত্ব রক্ষার রাজা যা করতে পারেন তা অসাধারণ।'

৮৮ বছর বয়সী মারিওন হ্যান্ড অন্টারিও থেকে এসেছেন। রাজা-রানির সঙ্গে হাত মেলিয়ে তিনি বেশ আনন্দিত।

তিনি বলেন, 'এলবোস আপ! অর্থাৎ ‘লড়াই চালিয়ে যাও।'