শিরোনাম
ঢাকা, ২৫ মে, ২০২৫ (বাসস): ভেনিজুয়েলায় রোববার সংসদ ও প্রাদেশিক গভর্নর নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। তব ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত কম। বিতর্কিতভাবে পুনর্নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বর্জনের ডাক দেওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
এই নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের ২৮৫ সদস্য এবং ২৪ জন গভর্নর নির্বাচিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথমবারের মতো গায়ানার সীমান্তবর্তী বিতর্কিত ও তেলসমৃদ্ধ এসেকুইবো অঞ্চলেও ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মোট প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ ভোটার এই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য হলেও স্বতন্ত্র জরিপ সংস্থা ডেলফোস জানিয়েছে, ভোটার উপস্থিতি মাত্র ১৬ শতাংশ হতে পারে, যা মূলত মাদুরোর সমর্থকদের অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধ থাকবে।
কারাকাসের বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় (জিএমটি সকাল ১০টা)। প্রথম ঘণ্টায় কেন্দ্রগুলো ছিল প্রায় জনশূন্য। গত গ্রীষ্মের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় এটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। সেই নির্বাচন সহিংসতা ও জালিয়াতির অভিযোগে কলুষিত হয়েছিল।
৫২ বছর বয়সী সরকারি কর্মচারী কারলা রোমেরো এএফপিকে বলেন, ‘সকালবেলা বলেই হয়তো এখানে ভিড় নেই।’
৩২ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সামাদি রোমেরো বলেন, ‘এটি নাগরিক অংশগ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া।’ তিনি জানান, মাদুরোর ছেলেসহ শাসকদলের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন তিনি।
তবে সাবেক এমপি ও প্রকৌশলী মারিয়া কোরিনা মাচাদোর নেতৃত্বে বিরোধী দলের প্রভাবশালী অংশ নির্বাচনকে ‘প্রহসন'’ দাবি করে বর্জনের ডাক দিয়েছে। এরই মধ্যে মাচাদোর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান পাবলো গুয়ানিপাকে ‘সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার অভিযোগে শুক্রবার গ্রেপ্তার করেছে কর্তৃপক্ষ।
ভেনিজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়োসদাদো কাবেলো জানান, গুয়ানিপা একটি বিদেশি মদদপুষ্ট ভাড়াটে বাহিনীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণে কলোম্বিয়া সীমান্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে মাদুরোবিরোধী বিরোধী নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হেনরিকে কাপ্রিলেস বর্জনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘ভোট দেওয়া একটি প্রতিরোধের এবং সংগ্রামের কাজ।’ তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
গত গ্রীষ্মে মাদুরোর তৃতীয় মেয়াদের বিজয় দাবির পর বিরোধীরা তাদের নিজস্ব ভোটগণনার ফল প্রকাশ করে, যেখানে এদমুন্দো গনসালেস উরুতিয়ার জয় দেখানো হয়। তবে ফলের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন না করেই মাদুরো নিজের বিজয় ঘোষণা করেন।
এর পরপরই বিক্ষোভ দমন এবং বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ভেনিজুয়েলা আরও বেশি করে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়ে। কেবল রাশিয়া ও কিউবার মতো কয়েকটি মিত্র দেশ মাদুরোকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
নতুন করে সংকটে পড়েছে ভেনেজুয়েলার অর্থনীতিও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেভরনকে দেশটিতে তেল উত্তোলনের অনুমতি বাতিল করেছেন। এতে সরকারের জন্য শেষ অবশিষ্ট আর্থিক ভরসাটুকুও হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ৩ লাখ ৫০ হাজার ভেনেজুয়েলান অভিবাসীর দেশে ফেরত না যাওয়ার সুরক্ষা বাতিল করা হয়েছে এবং শত শত জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে মধ্য আমেরিকার একটি কুখ্যাত কারাগারে।
এসব চাপও মাদুরোকে টলাতে পারেনি। বরং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। বিশেষ নজরে রয়েছে বিতর্কিত এসেকুইবো অঞ্চলের গভর্নর নির্বাচন, যেটি গায়ানা বহুদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ করলেও ভেনেজুয়েলা সেখানে আংশিক দখলের হুমকি দিয়ে আসছে।