বাসস
  ২৫ মে ২০২৫, ১১:১৯

ব্রিটেনে সরকারি মালিকানায় ফিরল প্রথম ট্রেন অপারেটর

ঢাকা, ২৫ মে, ২০২৫ (বাসস): লেবার সরকারের রেলওয়ে পুনঃজাতীয়করণ পরিকল্পনার আওতায় ব্রিটেনের ‘সাউথ ওয়েস্টার্ন রেলওয়েজ’ রোববার থেকে পুনরায় সরকারি মালিকানায় ফিরে গেছে। এটি হবে ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝিতে বেসরকারিকরণের পর কোনো ট্রেন অপারেটরকে পূর্ণাঙ্গভাবে সরকারি মালিকানায় ফেরানোর প্রথম ঘটনা।

লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, গত বছরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৪ বছর পর ক্ষমতায় ফিরে আসা প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সরকারের ঘোষিত মূল নীতিগুলোর একটি ছিল পুরো রেল ব্যবস্থাকে পুনরায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে নেওয়া।

পরিবহনমন্ত্রী হেইডি আলেক্সান্ডার এক বিবৃতিতে বলেন, 'আজকের দিনটি আমাদের জন্য একটি মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত। যাত্রীরা যেন প্রকৃত সেবা পায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।'

ব্রিটেনে দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন যাত্রা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে—ঘনঘন ট্রেন বাতিল, টিকিটের উচ্চমূল্য এবং বিভ্রান্তিকর সেবা বিভাজন সাধারণ অভিযোগগুলোর মধ্যে পড়ে।

ব্রিটেনের রেল অবকাঠামো বরাবরই রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ট্রেন চলাচলের দায়িত্ব ১৯৯০-এর দশকে তৎকালীন কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী জন মেজরের আমলে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হয়।

বর্তমানে ইংল্যান্ডের ১৪টি ট্রেন অপারেটরের মধ্যে চারটি ইতোমধ্যেই সরকার পরিচালনা করছে, যদিও সেগুলোকে মূলত সাময়িকভাবে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে।

নভেম্বরে পাস হওয়া একটি আইনের মাধ্যমে লেবার সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, অপারেটরদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে কিংবা খারাপ ব্যবস্থাপনার প্রেক্ষিতে আগেই—সেগুলোকে ‘গ্রেট ব্রিটিশ রেলওয়েজ’ নামের একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের অধীনে সরকারি মালিকানায় নিয়ে আসা হবে।

আলেক্সান্ডার বলেন, 'আমরা গত ৩০ বছরের বিভাজন অবসানের দিকে এগোচ্ছি।' তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “্প'রিবর্তন একদিনে হবে না।'

‘জনস্বার্থে’ রেল পরিচালনার ঘোষণা

পরিবহনমন্ত্রী আরও বলেন, 'সরকারি মালিকানার মধ্য দিয়ে আমরা একটি আধুনিক রেলব্যবস্থার সূচনা করছি, যেখানে মূল লক্ষ্য হবে জনস্বার্থ, মুনাফা নয়।'

তবে তিনি স্বীকার করেন, যাত্রীরা তাৎক্ষণিকভাবে বড় কোনো পার্থক্য টের নাও পেতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ‘সাউথ ওয়েস্টার্ন’-এর প্রথম সরকারি দিনের যাত্রা ছিল একটি রেল-বিকল্প বাস সার্ভিস।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরে যুক্তরাজ্যের চার শতাংশ ট্রেন চলাচল বাতিল হয়েছে।

ব্যয় সংকোচন ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের কারণে সম্প্রতি রেল শ্রমিক ইউনিয়নগুলো একাধিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এই পুনর্জাতিকরণে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

‘আসলেফ' ইউনিয়নের মহাসচিব মিক হুইলেন বলেন, 'আমরা আনন্দিত যে ব্রিটেনের রেল এখন তার প্রকৃত জায়গায় ফিরেছে—রাষ্ট্রের হাতে। আমরা সবাই জানি, বেসরকারিকরণ কোনো দিনই কাজ করেনি, এখনো করছে না।'

চলতি বছরের শেষ নাগাদ ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলে পরিচালিত আরও দুটি অপারেটর সরকারি নিয়ন্ত্রণে ফিরবে। ২০২৭ সালের মধ্যেই সব চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে।

সরকারের দাবি, রেল পুনর্জাতিকরণের ফলে বছরে ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ড (২০৩ মিলিয়ন ডলার) পর্যন্ত খরচ সাশ্রয় হবে, কারণ আর বেসরকারি অপারেটরদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না।

স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের প্রধান রেল অপারেটরগুলো ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকারের অধীনে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে।