শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : মস্কোর আক্রমণ শুরুর পর থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেন সবচেয়ে বড় বন্দী বিনিময় অব্যাহত থাকা অবস্থায় শনিবার কিয়েভে একটি বিশাল রাশিয়ান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে।
কিয়েভ থেকে এএফপি জানায়, ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া রাতারাতি ১৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ২৫০টি আক্রমণকারী ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। এ ছাড়া তারা ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ২৪৫টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
বিমান বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, কিয়েভ ছিল ‘শত্রু আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক্স-এ বলেছেন, ‘এই ধরনের প্রতিটি আক্রমণের সাথে, বিশ্ব আরও নিশ্চিত হয়ে ওঠে যে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার কারণ মস্কো।’
তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো লক্ষ্য করে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞাই মস্কোকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করবে।’
এএফপির সাংবাদিকরা রাতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পর কিয়েভ নগরীর কর্মকর্তারা ইউক্রেনের রাজধানীর বেশ ক’টি অংশে আগুন লেগে যাওয়া এবং ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকার খবর দিয়েছেন।
কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়ার হামলায় কিয়েভেই ১৫ জন আহত এবং খারকিভ ও দোনেৎস্ক অঞ্চলে পাঁচজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
এদিকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে যে মঙ্গলবার থেকে ইউক্রেন ৭৮৮টি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তাদের লক্ষ্যবস্তু করেছে।
গত সপ্তাহে মস্কোকে লক্ষ্যবস্তু করে নিক্ষিপ্ত কয়েক ডজন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলে আলোচনায় রাশিয়া ও ইউক্রেন বন্দী বিনিময়ের প্রথম ধাপ সম্পন্ন করার কয়েক ঘন্টা পরে এবং শনিবার দ্বিতীয় ধাপের ঠিক আগে কিয়েভে হামলাটি চালানো হয়।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে ক্রেমলিনের মিত্র বেলারুশের মাধ্যমে শনিবার উভয় পক্ষ ৩০৭ জন যুদ্ধবন্দী বিনিময় করেছে।
এতে বলা হয়েছে যে রাশিয়ান যুদ্ধবন্দী রাশিয়ায় যাওয়ার আগে বেলারুশে শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা সহায়তা নিবে।
শুক্রবার প্রথম পর্যায়ে উভয় পক্ষ ৩৯০ জনকে গ্রহণ করেছে এবং মোট ১ হাজার জন করে বিনিময় হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামীকালও এই বিনিময় অব্যাহত থাকবে।’
রাশিয়া এই বিনিময়ের পর শান্তি মীমাংসার জন্য ইউক্রেনের কাছে তাদের শর্তাবলী পাঠানোর ইঙ্গিত দিয়েছে, যা সপ্তাহান্তে অব্যাহত থাকবে। তবে এই শর্তাবলী কী হবে তা জানায়নি।
রাশিয়া ২০২২ সালে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে দুই শত্রু দেশ নিয়মিত বন্দী বিনিময় করেছে। কিন্তু কোনোটিই এত বড় ছিল না।
একজন এএফপি রিপোর্টার উত্তর চেরনিগিভ অঞ্চলের একটি হাসপাতালে কিছু প্রাক্তন বন্দী ইউক্রেনীয় সৈন্যকে আসতে দেখেছেন, তারা ক্ষীণ কিন্তু হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় বাইরে অপেক্ষারত জনতার দিকে হাত নাড়েন। তারা বাস থেকে নামার পর, অশ্রুসিক্ত আত্মীয়স্বজনরা সৈন্যদের আলিঙ্গন করতে ছুটে আসেন, অন্যরা তাদের প্রিয়জনের ছবি ধরে থাকেন, তারা জানতে চান যে তাদের বন্দী অবস্থায় দেখা গেছে কিনা।
অনেক সৈন্য উজ্জ্বল হলুদ ও নীল ইউক্রেনীয় পতাকায় মোড়ানো ছিল।
তিন বছর বন্দী থাকার পর মুক্তি পাওয়া সৈনিক ৩১ বছর বয়সী কনস্টান্টিন স্টেবলভ এএফপিকে বলেন, ‘এটি কেবল পাগলামি। পাগলামির অনুভূতি।’
রাশিয়া জানিয়েছে যে তারা গত কয়েক মাসে কিয়েভের হাতে বন্দী থাকা ২৭০ জন রাশিয়ান সেনা এবং ১২০ জন বেসামরিক নাগরিককে পেয়েছে, যাদের মধ্যে ক’জন কুরস্ক অঞ্চলের কিছু অংশ থেকে এসেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে এই বিনিময়ের জন্য দুই দেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেন, ‘এর ফলে বড় কিছু ঘটতে পারে?’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘাতে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতার জন্য ট্রাম্পের প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে, যদিও তিনি দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
পূর্বে বন্দী থাকা সৈন্য, ৫৮ বছর বয়সী ভিক্টর সিভাক, এএফপিকে বলেন, তার আবেগঘন স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কথা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। ইউক্রেনের বন্দর নগরী মারিউপোলে বন্দী হয়ে তাকে ৩৭ মাস ১২ দিন ধরে আটকে রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আমি এতো বড় অভ্যর্থনা আশা করিনি। এটি বর্ণনা করা অসম্ভব। আমি এটাকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। এটা খুবই আনন্দের।
- কূটনৈতিক চাপ-তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধের পর, উভয় দেশেই হাজার হাজার যুদ্ধবন্দী রয়েছে।
রাশিয়ার হাতে বন্দী থাকা ইউক্রেনীয়দের সংখ্যা বেশি বলে মনে করা হচ্ছে, মস্কোর হাতে আটক ইউক্রেনীয়দের সংখ্যা ৮ থেকে ১০হাজারের মধ্যে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সংঘাতের অবসানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে, কিন্তু ক্রেমলিন যুদ্ধ বন্ধের জন্য তার সর্বোচ্চ শর্ত থেকে সরে আসার কোনও লক্ষণ দেখায়নি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির জন্য ইউরোপীয় চাপকে অগ্রাহ্য করে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। রক্তক্ষয়ী হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।