বাসস
  ২২ মে ২০২৫, ০৯:৫৮

‘কিয়েভ আমাদের হওয়া উচিত’: পুতিন-ট্রাম্প ফোনালাপের পর আত্মবিশ্বাসী রুশ জনগণ

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ২২ মে, ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেন বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টেলিফোনে আলাপের পরদিনই রুশ গৃহিণী আনাস্তাসিয়ার একটিই কামনা—মস্কো যেন ২০২২ সালে শুরু করা অভিযান শেষ করতে পারে।

মস্কো থেকে এএফপি জানায়, চতুর্থ বসন্তে গড়ানো রাশিয়ার ধ্বংসাত্মক আগ্রাসন এখন পর্যন্ত লক্ষাধিক প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক তৎপরতায় অনেক রুশ নাগরিকের মধ্যে বিজয়ের আশা জেগেছে—যে বিজয় হয়তো কোনো না কোনো রূপে এগিয়ে আসছে।

সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে পুতিন আবারও ইউক্রেনে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির পশ্চিমা ও কিয়েভের দাবি উড়িয়ে দেন।

তবু মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আলোচনার ‘টোন’ ছিল ‘চমৎকার’।

বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

মস্কোর উপশহরে বসবাসরত ৪০ বছর বয়সী আনাস্তাসিয়া বলেন, “আমি আমাদের দেশের পক্ষে, আমি একে খুব ভালোবাসি। আমি শুধু চাই ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ (পুতিন) অবশেষে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করুন।”

নিজের নামের পুরোটা প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নারী বলেন, কীভাবে কিংবা কবে তা হবে জানেন না, তবে তিনি অধৈর্য হয়ে পড়েছেন। “আমি চাই না আমার সন্তানদের এই সমস্যার সমাধান করতে হোক। এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।”

তবে ট্রাম্পের ওপর তার আস্থা নেই—তিনি বলেন, “ট্রাম্প কেবল একজন ব্যবসায়ী, কেবল টাকাই যার চাওয়া।” তার আশঙ্কা, ‘অ্যাংলো-স্যাক্সনরা’ রাশিয়াকে ঠকাতে পারে।

ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে পুতিন তার সর্বোচ্চ দাবিসমূহ থেকে সরার ইঙ্গিত দেননি। তিনি কিয়েভের কাছ থেকে কার্যত আত্মসমর্পণই চান।

- ‘চূড়ান্ত অভিযান’ -

গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আলোচনায় রুশ প্রতিনিধিরা দাবি করেছে, ইউক্রেনকে পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে হবে।

তারা আরও চায় ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ না দিক এবং পশ্চিমা সামরিক সহায়তা বন্ধ করা হোক।

পুতিন বহুবার বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে অপসারণ করতে হবে।

ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের পর মস্কোয় কিছুটা আত্মবিশ্বাস এলেও একধরনের অনিশ্চয়তাও বিরাজ করছে। ওই ফোনালাপে পুতিন একটি অস্পষ্ট ‘স্মারকলিপি’র কথা বলেন, যেখানে শান্তিচুক্তির শর্তাবলি তুলে ধরা হবে। ট্রাম্প বলেন, কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে দ্রুত আলোচনা শুরু হবে।

তবে অনেকেই জানেন না, এই কথাবার্তার মানে কী।

৭২ বছর বয়সী পেনশনার সোফিয়া বলেন, “আমার মূল অনুভূতিটা কী? অনিশ্চয়তা।” “আমাদের—শুধু পরিবার নয়, পুরো দেশের—পরিণতি কী হবে তা জানতে ইচ্ছা হচ্ছে,” বলেন তিনি।

তিন বছর পর এই প্রথমবারের মতো সরাসরি আলোচনায় বসেছে দুই পক্ষ, তবে সোফিয়া এতে কোনো অগ্রগতি দেখছেন না। “আমি বোঝাতে পারছি না, তবে আমি শান্তি চাই, স্থিরতা চাই,” বলেন তিনি।

ইউক্রেন আক্রমণ শুরুর পর রাশিয়ায় সেন্সরশিপ ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে; যুদ্ধবিরোধী মত প্রকাশে কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।

জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া শান্তি আলোচনায় আন্তরিক নয়, বরং সময় কিনে নিচ্ছে নতুন হামলার জন্য।

রুশ বিশ্লেষক কনস্টান্টিন কালাচেভ বলেন, পুতিন আশা করছেন, সামারে আবার আগ্রাসন জোরদার করা যাবে। তিনি বলেন, ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ পুতিনের জন্য ‘কৌশলগত বিজয়’।

“রাশিয়া এই গ্রীষ্মেই ইউক্রেনীয় সেনাদের পেছনে ঠেলতে চায়,” বলেন কালাচেভ। “চূড়ান্ত অভিযান না হওয়া পর্যন্ত শান্তি সম্ভব নয়,” যোগ করেন তিনি।

- ‘আর কোনো পথ নেই’ -

পুতিন বললেও যে দুই পক্ষকে আপসের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, বাস্তবে ক্রেমলিন বা মস্কোর জনগণের তরফে তেমন কোনো নমনীয়তা দেখা যায়নি।

৭০ বছর বয়সী পেনশনার মারিনা বলেন, “আমি মনে করি ওডেসা, খারকিভ, নিকোলায়েভ (মাইকোলাইভ), কিয়েভ—সবই আমাদের হওয়া উচিত।”

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়, ইস্তাম্বুলে রুশ প্রতিনিধিরা ইউক্রেনকে হুমকি দিয়েছে—ডনেস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চল থেকে সৈন্য না সরালে আরও অঞ্চল দখল করা হবে।

উপস্থাপক ইয়েভগেনি পোপভ বলেন, “যদি এই চার অঞ্চলকে দ্রুত স্বীকৃতি না দেওয়া হয়, তাহলে পরেরবার ছয়টি অঞ্চল হয়ে যাবে।”

রাশিয়ার প্রধান আলোচক ভ্লাদিমির মেদিনস্কি পরে ১৮ শতকে সুইডেনের সঙ্গে রাশিয়ার ২১ বছরের যুদ্ধের উদাহরণ টেনে বলেন, রাশিয়া দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।

মারিনা বলেন, হাজার হাজার রুশ সৈন্য নিহত হলেও তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেই।
“হ্যাঁ, এটা দুঃখজনক যে আমাদের মানুষও মরছে,” বলেন তিনি। “তবে আর কোনো উপায় নেই।”