বাসস
  ১৬ মে ২০২৫, ১১:৪৯

গাজায় হামলায় নিহত ১২০, হামাস বলছে—আলোচনার জন্য সহায়তা প্রবেশ ‘ন্যূনতম শর্ত’

ঢাকা, ১৬ মে, ২০২৫ (বাসস) : অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি হামলায় বৃহস্পতিবার ১২০ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি উদ্ধারকর্মীরা। একই দিনে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সংস্থা জানিয়েছে, তারা এ মাসের শেষ নাগাদ সেখানে মানবিক সহায়তা বিতরণ শুরু করতে চায়।

ফিলিস্তিন থেকে এএফপি জানায়, গত ২ মার্চ থেকে গাজায় সহায়তা প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। ইসরাইল বলেছে, হামাসকে চাপ দিতে এই কৌশল নিয়েছে তারা। কিন্তু হামাস বৃহস্পতিবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ডে মানবিক সহায়তা পুনর্বহাল করাই ‘আলোচনার ন্যূনতম শর্ত’।

তারা আরও সতর্ক করে বলেছে, ‘গাজা বিক্রির জন্য নয়।' যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও গাজা দখল করে একে ‘স্বাধীনতার অঞ্চল’ হিসেবে রূপান্তরের প্রস্তাব করার কয়েক ঘণ্টা পরই এই মন্তব্য আসে।

গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ইসরাইলি বোমা হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০-তে।

ইসরাইল ১৮ মার্চ থেকে সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করে, যার মাধ্যমে জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে চলা যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা কয়েক সপ্তাহ ধরে সতর্ক করে আসছিল, গাজায় খাবার, পরিষ্কার পানি, জ্বালানি ও ওষুধের সরবরাহ চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে ঠেকেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় ক্যানসার ও হৃদ্‌রোগ চিকিৎসা প্রদানকারী শেষ হাসপাতালটি মঙ্গলবার ইসরাইলি হামলায় ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও অচল’ হয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনি অঞ্চলের জাতিসংঘ বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রানচেস্কা আলবানিজ বলেন, ‘ইসরাইল মানবতার শেষ চিহ্নটুকুও নিকেশ করছে।’

দেইর আল-বালাহ এলাকায় এক হামলার পর এএফপিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ভবন ও কংক্রিটের স্তূপ।

স্থানীয় বাসিন্দা মাহের গানেম, যার হাতে স্লিং বাঁধা ছিল, বলেন, ‘আমরা প্রার্থনা করি এই যুদ্ধ শেষ হোক। আমরা সব আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আহ্বান জানাই, যুদ্ধ থামান। যথেষ্ট হয়েছে।’

‘গাজা বিক্রির জন্য নয়’

সর্বশেষ হতাহতের ঘটনায় হামাস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন এই ‘বর্বরোচিত তীব্রতা’র জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে।

ইসরাইল বলেছে, তারা গাজায় সহায়তা বন্ধ ও সামরিক চাপের মাধ্যমে হামাসকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে সংঘটিত হামলায় অপহৃতদের মুক্ত করতে বাধ্য করতে চায়।

তবে হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেন, ‘গাজায় সহায়তা প্রবেশ একটি অনুকূল ও গঠনমূলক আলোচনার পরিবেশের জন্য সর্বনিম্ন শর্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘খাবার, পানি ও ওষুধ পাওয়ার অধিকার একটি মৌলিক মানবাধিকার—এটি আলোচনার বিষয় হতে পারে না।’

যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত এনজিও ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ জানায়, তারা এ মাসেই গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণ শুরু করবে—ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে জাতিসংঘ বৃহস্পতিবার জানিয়ে দেয়, তারা এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হবে না।

জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হাক বলেন, ‘আমরা বহুবার বলেছি—এই বিতরণ পরিকল্পনা আমাদের মৌলিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যার মধ্যে নিরপেক্ষতা, পক্ষপাতহীনতা ও স্বাধীনতার নীতি রয়েছে। সুতরাং আমরা এতে অংশ নিচ্ছি না।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই পরিকল্পনার সমালোচনার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং বলেন, ‘কারও কাছে যদি আরও ভালো পরিকল্পনা থাকে, আমরা তা নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।’

ট্রাম্প বলেন, তিনি চান যুক্তরাষ্ট্র ‘গাজায় যুক্ত হোক’।

তিনি বলেন, ‘গাজা নিয়ে আমার কিছু ধারণা আছে যেগুলো খুবই ভালো... যুক্তরাষ্ট্র এতে যুক্ত হোক এবং এটিকে একটা স্বাধীনতার অঞ্চল বানাক।’

তিনি কাতার সফরের সময় এসব বলেন এবং যোগ করেন, ‘আমি গর্বিত হব যদি যুক্তরাষ্ট্র এটি নেয়, এটিকে গড়ে তোলে, এটিকে স্বাধীনতার অঞ্চল বানায়।’

এই মন্তব্য তার ফেব্রুয়ারির একটি বিতর্কিত প্রস্তাবের প্রতিধ্বনি—তখন তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেন এই ধ্বংসপ্রাপ্ত অঞ্চলটি ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ হিসেবে গড়ে তোলে।

হামাস কর্মকর্তা নাইম বলেন, ‘গাজা ফিলিস্তিনি ভূমির অবিচ্ছেদ্য অংশ—এটি কোনো খোলা বাজারে বিক্রির জন্য জমি নয়।’

জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, গাজার ৭০ শতাংশ এখন হয় ইসরাইল ঘোষিত নিষিদ্ধ অঞ্চল বা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশাধীন।

হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছে ২,৮৭৬ জন। এতে করে মোট যুদ্ধে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩,০১০ জনে।

হামাসের ওই হামলায় ইসরাইলি পক্ষের ১,২১৮ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক। এএফপির হিসাব অনুযায়ী, সেই হামলায় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়, যাদের মধ্যে ৫৭ জন এখনো গাজায় রয়েছেন—যার মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যুর কথা ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে।

পশ্চিম তীরে অভিযান

এদিকে, দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বাহিনী বৃহস্পতিবারও অভিযান চালায় এবং বেশ কিছু সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখে। সম্প্রতি এক গর্ভবতী ইসরাইলি নারী হত্যার ঘটনায় দোষীদের খুঁজে বের করার অঙ্গীকার করেছিলেন ইসরাইলের সেনাপ্রধান।

পশ্চিম তীরের তাম্মুন গ্রামে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানে পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। সেনাবাহিনীর ভাষ্য, তারা সেখানে ‘সন্দেহভাজন হামলার পরিকল্পনার’ জন্য ব্যবহৃত ভবন লক্ষ্য করে অভিযান চালায়।