শিরোনাম
ঢাকা, ১৫ মে, ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেন ও রাশিয়া বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার তুরস্কে সরাসরি শান্তি আলোচনায় বসতে যাচ্ছে—গত তিন বছরের মধ্যে এটাই প্রথম মুখোমুখি আলোচনা।
ইস্তাম্বুল থেকে এএফপি জানায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইতোমধ্যে তুরস্ক সফরে গেছেন, তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মুখোমুখি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তিনি আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দশক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং রুশ সেনারা ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড দখলে রেখেছে।
নিচে আলোচনার সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে—
- আলোচনা কবে হবে? -
আলোচনার তারিখ শুরুতে বৃহস্পতিবার নির্ধারিত ছিল, তবে জেলেনস্কি বলেন, 'আজও হতে পারে, কালও হতে পারে।'
গত সপ্তাহান্তে পুতিন বৃহস্পতিবার আলোচনার প্রস্তাব দিলেও এরপর কয়েকদিন ধরে ক্রেমলিন চুপ ছিল—কে আলোচনায় যাবে বা কী আলোচনা হবে তা জানায়নি।
বৃহস্পতিবার সকালে রুশ প্রতিনিধিদল ইস্তাম্বুলে পৌঁছেছে। ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল রাতের দিকে রাজধানী আঙ্কারা থেকে রওনা হওয়ার কথা।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে আঙ্কারায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলেনস্কি।
- কারা অংশ নিচ্ছেন? -
রুশ পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পুতিনের ঘনিষ্ঠ কট্টরপন্থী সহকারী ও সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী ভ্লাদিমির মেদিনস্কি, যিনি ২০২২ সালের আলোচনাতেও ছিলেন।
ক্রেমলিন আরও তিন আলোচকের নাম জানিয়েছে: উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল গালুজিন, উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেক্সান্দার ফোমিন এবং রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউ প্রধান ইগর কস্তিউকভ।
জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার বলেন, রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের মান দেখে বোঝা যায়, মস্কো যুদ্ধ শেষ করার আলোচনায় ‘আন্তরিক নয়’।
পূর্ববর্তী যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া আলোচনায় অংশ নেওয়া রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ কিংবা ক্রেমলিনের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইউরি উশাকভের মতো শীর্ষ কূটনীতিকরা এই আলোচনায় নেই।
পুতিন আলোচনায় অংশ না নেওয়ায় জেলেনস্কিও যাবেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি নিজে না গিয়ে আলোচনায় পাঠিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভের নেতৃত্বে একটি দল।
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে আলোচনা করতে শুক্রবার ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইস্তাম্বুলে আসছেন।
তবে তুরস্কের পক্ষ থেকে সরাসরি কেউ আলোচনায় অংশ নেবেন কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
- অবস্থানগত পার্থক্য কোথায়? -
জেলেনস্কি বলেছেন, তার দল একটি ‘শর্তহীন অস্ত্রবিরতি’ নিয়ে আলোচনা করার মেন্ডেট নিয়ে এসেছে—যা ইউক্রেন, তার মিত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দাবি।
তবে রাশিয়া এ প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলছে, অস্ত্রবিরতির আগে অনেক বিষয় সমাধান করতে হবে।
মূলত, কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে মৌলিক মতপার্থক্য এখনও বহাল রয়েছে।
রাশিয়া চায় আলোচনায় ‘সংঘাতের মূল কারণ’ আলোচিত হোক—যার মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের ‘ডিনাজিফিকেশন’ ও ‘অসামরিকীকরণ’, যেগুলো হামলার ন্যায্যতা দিতে মস্কো ব্যবহার করে আসছে।
রাশিয়া বারবার বলছে, ইউক্রেনকে তাদের দখল করা অঞ্চল ছাড় দিতে হবে।
জেলেনস্কি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কিয়েভ ওই অঞ্চলগুলোকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, এসব অঞ্চল হয়তো কেবল কূটনৈতিক উপায়ে ফিরে পাওয়া সম্ভব।
- প্রত্যাশা কী? -
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তুরস্কে আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আশা করা যাচ্ছে না, কারণ তার সঙ্গে পুতিনের সাক্ষাৎ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ হওয়ার দিকে কোনো অগ্রগতি হবে না।
তবে আয়োজক তুরস্ক আশাবাদী রয়েছে এবং রুশ প্রধান আলোচক মেদিনস্কি বলেছেন, মস্কো ‘সম্ভাব্য সমঝোতা’ নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।
জেলেনস্কি বলেছেন, 'দুঃখজনকভাবে, তারা (রাশিয়া) প্রকৃত আলোচনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না'—এরদোগানের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এমন মন্তব্য করেন।
- কেন তুরস্ক? -
ন্যাটো সদস্য তুরস্ক ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কৃষ্ণসাগরীয় উভয় প্রতিবেশী—রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করেছে এবং এর আগে দুবার শান্তি আলোচনার আয়োজন করেছে।
২০২২ সালের মার্চে ইস্তাম্বুলে যুদ্ধ অবসান নিয়ে একটি চুক্তির খসড়া নিয়েও আলোচনা হয়েছিল।
তবে এরপর কিয়েভের উপকণ্ঠ বুচা থেকে রুশ সেনারা পিছু হটলে, সেখানকার গণহত্যার প্রমাণ মেলার পর আলোচনা ভেঙে পড়ে।
রাশিয়া বলছে, এই আলোচনা ওই ভেঙে যাওয়া প্রক্রিয়ার ‘ধারাবাহিকতা’।
এর পর থেকে মূলত যুদ্ধবন্দী বিনিময় ও মৃত সৈন্যদের মরদেহ ফেরত দেওয়ার মতো মানবিক বিষয়েই যোগাযোগ সীমিত ছিল।