শিরোনাম
ঢাকা, ১৫ মে, ২০২৫ (বাসস) : লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে সহিংসতা বৃদ্ধির ঘটনায় বৃহস্পতিবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, এই সংঘর্ষের ফলে গণবাস্তুচ্যুতি ঘটতে পারে এবং বেসামরিক নাগরিকদের মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।
ত্রিপোলি থেকে এএফপি সরকারি সূত্রের বরাতে জানায়, সোমবার রাত থেকে ভারী গোলাবর্ষণ ও বিস্ফোরণের মাধ্যমে সংঘর্ষ শুরু হয়, যাতে অন্তত ছয়জন নিহত হয়। সংঘর্ষ সাময়িকভাবে থেমে গেলেও বুধবার ফের সংঘর্ষ শুরু হয়, যার মধ্যে ত্রিপোলির একমাত্র বন্দর এলাকাও রয়েছে। এক নিরাপত্তা সূত্র একে ‘নগর-যুদ্ধ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) অবিলম্বে সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
জাতিসংঘ বলেছে, তারা সাম্প্রতিক সহিংসতা বৃদ্ধি নিয়ে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’ এবং এ পরিস্থিতিতে গণবাস্তুচ্যুতি ও বেসামরিক প্রাণহানির ‘গুরুতর ঝুঁকি’ রয়েছে।
ত্রিপোলিভিত্তিক সরকার সমর্থিত শক্তিশালী একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ও প্রতিদ্বন্দ্বী মিলিশিয়াদের মধ্যে এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সহিংসতার সূত্রপাত হয় ‘সাপোর্ট অ্যান্ড স্ট্যাবিলিটি অ্যাপারেটাস’ (এসএসএ)-এর প্রধান আবদেলগানি আল-কিকলির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। তিনি ত্রিপোলির দক্ষিণাঞ্চলীয় আবু সালিম জেলার নিয়ন্ত্রণে ছিলেন।
তাঁকে হত্যার জন্য দায়ী করা হচ্ছে ৪৪৪ ব্রিগেডকে, যারা দেইবাহ সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। এরপর সংঘর্ষে যুক্ত হয় পূর্ব ত্রিপোলি নিয়ন্ত্রণকারী রাদা ফোর্স, যারা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনারও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এসএসএ সমর্থকেরা ঘোষণা দিয়েছে, কিকলির মৃত্যুর বদলা তারা যেকোনোভাবে নেবে। তাঁর পরিবার জানায়, ৪৪৪ ব্রিগেডের এক আলোচনাকেন্দ্রে ‘চক্রান্তমূলকভাবে’ কিকলিকে হত্যা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী আবদেলহামিদ দেইবাহ মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়েছেন, 'ত্রিপোলিতে আর কোনো অপ্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠীর জায়গা নেই—শুধু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকবে সব কিছু।'
লিবিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জালেল হারশাউই মনে করেন, এ সংঘর্ষ একটি ‘অঞ্চলগত পুনর্বিন্যাস’-এর চিত্র হলেও, রাদা ফোর্সের মতো জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান সহজ নয়।
বুধবার রাতে রাদা-সমর্থিত সুক আল-জুমা এলাকায় দেইবাহ সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় ৫০০ মানুষ বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ছোড়া হয়।
দেইবাহ সরকার রাদাকে বিলুপ্ত করে দেওয়ার নির্দেশনা দিলেও ৪৪৪ ব্রিগেডকে রেখেছে, যা রাজনৈতিক পক্ষপাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন।
রাদা একটি বিতর্কিত গোষ্ঠী হলেও জনসমর্থন কিছুটা রয়েছে। অপরদিকে এসএসএ-এর বিরুদ্ধে আফ্রিকার সাব-সাহারান অভিবাসীদের ওপর নির্যাতন, শ্রমশোষণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংকট গবেষণা সংস্থার ক্লদিয়া গাজ্জিনি লিখেছেন, 'এই সংঘর্ষ দেইবাহর কর্তৃত্বকে দুর্বল করে না শক্তিশালী করে—তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ত্রিপোলির মানুষ আবারও এমন এক সহিংসতার শিকার, যার ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।:
জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ইতালির দূতাবাস বুধবার রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে ত্রিপোলির সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে লিবীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।