বাসস
  ১৫ মে ২০২৫, ১৯:৩৫
আপডেট : ১৫ মে ২০২৫, ২২:০৯

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত শতাধিক, পশ্চিম তীরে চলছে চিরুনি অভিযান

ঢাকা, ১৫ মে, ২০২৫ (বাসস) : অবরুদ্ধ গাজায় বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত ১০৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি উদ্ধারকর্মীরা। এদিকে, পশ্চিম তীরে এক গর্ভবতী ইসরাইলি নারী নিহত হওয়ার ঘটনায় চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।

ফিলিস্তিন থেকে এএফপি জানায়, গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ১০৩-এ পৌঁছেছে।

গাজায় চলমান মানবিক সংকটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত এনজিও ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ জানিয়েছে, তারা মাসের শেষ দিকে গাজায় ত্রাণ বিতরণ শুরু করবে।

১৮ মার্চ তা আংশিকভাবে পুনরায় চালু করার আগে ২ মার্চ থেকে ইসরাইল গাজায় সকল ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেয় এবং এর ফলে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরাইলের অবরোধ এখন আর কেবলমাত্র সামরিক কৌশল নয়, বরং একে গণনিধনের অস্ত্রে পরিণত করা হয়েছে।’

এইচআরডব্লিউ-এর অন্তর্বর্তী নির্বাহী পরিচালক ফেদেরিকো বোরেল্লো বলেন, ‘গাজার বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করে এবং ফিলিস্তিনিদের ছোট একটি ভূখণ্ডে কেন্দ্রীভূত করার পরিকল্পনা জাতিগত নিধন, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার ভয়াবহ রূপ।’

উত্তর গাজার বাসিন্দা ৪৩ বছর বয়সী আমির সেলহা জানান, ‘সারারাত ভয়াবহ গোলাবর্ষণ হয়েছে। ট্যাংকের গোলা চারপাশে পড়ছে, আর চারদিকে শুধু মানুষ আর তাঁবু।’

তিনি বলেন, ভোরে ইসরাইলি ড্রোন থেকে তাদের এলাকায় লিফলেট ছড়ানো হয়, যাতে দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

গাজায় ১৯ মাস ধরে চলমান যুদ্ধে প্রায় প্রতিটি পরিবারই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ইসরাইল বলছে, হামাসের হাতে থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্ত করতে এই চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার পর শুরু হয় এই যুদ্ধ।

ইসরাইলি আলোচনার পর গাজায় ত্রাণ বিতরণের ঘোষণা দিয়েছে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’। তবে মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ ইউরোপীয় সদস্য এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরাইলের ওই পরিকল্পনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

-    নতুন অভিযান ও মৃতের সংখ্যা -

হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইলি হামলায় ২,৮৭৬ জন নিহত হয়েছে। আর পুরো যুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট নিহত ৫৩,০১০ জনে দাঁড়িয়েছে।

হামাসের হামলায় ইসরাইলের পক্ষে নিহত হয়েছেন ১,২১৮ জন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। জিম্মি করা ২৫১ জনের মধ্যে এখনো ৫৭ জন গাজায় আটক রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৪ জনকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী মৃত বলে জানিয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্য মতে, গাজার প্রায় ৭০ শতাংশ অঞ্চল এখন হয় ইসরাইল ঘোষিত ‘নো গো জোন’ নয়তো সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশাধীন এলাকা।

গাজার সিভিল ডিফেন্স মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, ‘ইসরাইল একটি সুসংগঠিত নীতির মাধ্যমে জনবহুল এলাকা খালি করে নিরীহ নাগরিকদের আতঙ্কিত করছে।’

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সোমবার বলেন, সেনাবাহিনী শিগগিরই গাজায় ‘সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে’ প্রবেশ করবে।

এদিকে, বোমাবর্ষণের মধ্যেও নতুন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময়ের আলোচনা চলমান রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফরে থাকাকালে তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বুধবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে জিম্মিদের বিষয়ে বৈঠক করেন।

হামাস অভিযোগ করেছে, নেতানিয়াহু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সামরিক উত্তেজনা বাড়িয়ে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিমুক্তির প্রচেষ্টা নস্যাৎ করছেন এবং জিম্মিদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছেন।

-    পশ্চিম তীরে উত্তেজনা ও প্রতিশোধের ডাক -

উত্তর পশ্চিম তীরে এক ইসরাইলি গর্ভবতী নারী নিহত হওয়ার ঘটনায় চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।

সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আইয়াল জামির বলেন, ‘আমরা আমাদের সমস্ত শক্তি ব্যবহার করে খুনিদের খুঁজে বের করব ও জবাবদিহির আওতায় আনব।’

পশ্চিম তীরের নানা স্থান থেকে রাস্তা বন্ধের খবর দিচ্ছে ফিলিস্তিনি টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলো।

ইসরাইলি বসতকারীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে হামলার প্রতিশোধে ‘সন্ত্রাসী গ্রামগুলো মুছে ফেলার’ আহ্বান জানানো হচ্ছে।

উত্তরের গ্রাম তাম্মুনে ইসরাইলি সেনাদের অভিযানে পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হন।

তাম্মুনের মেয়র সামির কুতেইশাত এএফপিকে বলেন, ‘দখলদার বাহিনী গ্রামের একটি বাড়ি ঘিরে রেখে পাঁচ তরুণকে গুলি করে হত্যা করেছে।’

ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ‘অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের’ শনাক্ত করে, যারা একটি ভবনে অবস্থান করছিল। গুলিবিনিময়ের পর পাঁচজন নিহত এবং একজন আটক হয়েছে।

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরেও সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।