শিরোনাম
ঢাকা, ১৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : কলম্বিয়া বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের বৃহৎ অবকাঠামোগত প্রকল্প ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ বা বিআরআই-তে যোগ দিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবেলায় লাতিন আমেরিকাকে কাছে টানার ক্ষেত্রে বেইজিংয়ের এক বড় পদক্ষেপ।
বেইজিং থেকে এএফপি জানায়, লাতিন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে চীনের সঙ্গে বেড়ে চলা বৈরিতার একটি মুখ্য মঞ্চ হয়ে উঠেছে। অঞ্চলটির দেশগুলোকে এখন ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে ‘এক পক্ষ বেছে নেওয়ার’ জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
চীন এরই মধ্যে ব্রাজিল, পেরু, চিলি ও অন্যান্য লাতিন আমেরিকান দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে। এ অঞ্চলের দুই-তৃতীয়াংশ দেশই প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিআরআই প্রকল্পে স্বাক্ষর করেছে।
বেইজিংয়ে আয়োজিত একটি আঞ্চলিক সম্মেলনের ফাঁকে বুধবার কলম্বিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্পে যোগ দেয়।
কলম্বিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, ‘এই চুক্তি বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও টেকসই উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে উভয় দেশের জন্য।’
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোর সঙ্গে বৈঠকের পর শি জিনপিং জানান, কলম্বিয়ার ‘বিআরআই পরিবারে’ আনুষ্ঠানিক যোগদানের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উভয় দেশকে সহযোগিতা আরও নিবিড় করতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ চুক্তি স্বাক্ষরের ভিডিও প্রকাশ করে পেত্রো লেখেন, ‘আমাদের বৈদেশিক সম্পর্কের ইতিহাস বদলে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন থেকে কলম্বিয়া সমতার ভিত্তিতে ও স্বাধীনভাবে সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে।’
বিআরআই হলো চীনা নেতার বৈদেশিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার।
গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই উদ্যোগের মাধ্যমে অবকাঠামোসহ বিভিন্ন বৃহৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে চীন, যার বিনিময়ে তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছে।
গত বছর পেরুর চানকাই শহরে লাতিন আমেরিকার প্রথম চীন-অর্থায়িত বন্দর উদ্বোধন করেন শি, যা মহাদেশটিতে চীনা প্রভাবের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
‘মুক্ত বাণিজ্যের রক্ষক’
এই সপ্তাহে বেইজিংয়ে চীন-সেলাক ফোরামের বৈঠকে নিজেদের বহু-পক্ষীয় আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার রক্ষক এবং ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর পক্ষে দাঁড়ানো শক্তি হিসেবে তুলে ধরছে বেইজিং।
সোমবার শি জিনপিং ঘোষণা দেন, উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে ৯২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে চীন।
এই প্রতিশ্রুতি অবকাঠামো ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারসহ একগুচ্ছ উদ্যোগের অংশ।
শি বলেন, চীন সন্ত্রাসবাদ দমন ও আন্তঃসীমান্ত সংগঠিত অপরাধ মোকাবেলাতেও সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি বৃত্তি ও প্রশিক্ষণ বিনিময় কর্মসূচি আরও জোরদার করা হবে।
চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিচের সঙ্গে বৈঠকে শি বলেন, ‘একতরফা মনোভাব ও সুরক্ষা-নীতি পুনরুত্থানের ফলে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও বাণিজ্যব্যবস্থা গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্ত বাণিজ্য ও বহু-পক্ষীয়তাবাদের দৃঢ় রক্ষক হিসেবে চীন ও চিলিকে যৌথভাবে গ্লোবাল সাউথ-এর স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।’
এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তিনি শনিবার বেইজিং পৌঁছান পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে।
সম্মেলনে ভাষণে লুলা বলেন, ‘আমরা ইতিহাস পুনরাবৃত্তি করে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ শুরু করতে চাই না।’
তিনি যোগ করেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে—বহু-পক্ষীয় ব্যবস্থার জন্য একটি ইতিবাচক শক্তি হয়ে ওঠা।’
মঙ্গলবার শির সঙ্গে আলোচনায় লুলা বলেন, উভয় দেশকে ‘সহযোগিতা জোরদার’ করতে হবে এবং একত্রে ‘একতরফা আধিপত্যের’ বিরোধিতা করতে হবে।
লাতিন আমেরিকায় দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন মুখোমুখি অবস্থানে। এর মধ্যে পানামা খাল নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। এই অঞ্চলে চীনা প্রভাব নির্মূলের ঘোষণা বহুদিন ধরে দিয়ে আসছেন ট্রাম্প।
ওয়াশিংটন মনে করে, হংকংভিত্তিক একটি কোম্পানির খালটির উভয় প্রান্তের বন্দরের পরিচালনা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে বেইজিং তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে চীনের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হংকংয়ের বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সিকেএ হাচিসনের ২৩টি দেশের পানামা খালের দুইটিসহ ৪৩টি বন্দর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একটি কনসোর্টিয়ামের কাছে বিক্রির প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন—উভয়ই পানামা খালের অন্যতম বৃহৎ ব্যবহারকারী, যার মধ্য দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যের পাঁচ শতাংশ পণ্য পরিবাহিত হয়।