বাসস
  ২৫ মে ২০২৫, ২০:০২

এইচপিভি স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আসবে দেশের ৩০ লাখ নারী

ছবি : বাসস

ঢাকা, ২৫ মে ২০২৫ (বাসস) : দেশের ৩০ লাখ নারী এইচপিভি স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আসবে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী। আজ রোববার দুপুরে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) শহীদ আবু সাইদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এ সংক্রান্ত এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কথা বলেন। এ গবেষণার ফলাফল দেশের জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের কার্যকর উন্নয়ন এবং নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী গবেষকগণ।   

এ সময় ডা. মো. সারোয়ার বারী বলেন, মানুষের স্বাস্থ্যসেবাকে সহজলভ্য করতে ও চিকিৎসাসেবাকে মানুষের সামর্থ্যরে মধ্যে রাখতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। চিকিৎসা ব্যয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমাদের রোগ প্রতিরোধে মনোযোগ দিতে হবে। যারা ঝুঁকিতে আছেন, তাদের আগাম চিকিৎসা নিতে হবে। দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার নারী জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অথচ আগেভাগে স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে এই মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমানো সম্ভব। এ বাস্তবতা মাথায় রেখেই দেশের ৩০ লাখ নারীকে এইচপিভি স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। স্ক্রিনিং ও প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যয় অনেকটা কমানো সম্ভব।

তিনি বলেন, নারীদের মৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ জরায়ুমুখ ক্যান্সার। প্রতিবছর ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় ৭ হাজারের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন প্রায় ৮ হাজার নারী, মারা যান ৫ হাজার। অথচ এই দুই ধরনের ক্যান্সারই স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে আগেভাগেই শনাক্ত ও প্রতিরোধ করা সম্ভব। অনেক নারী ক্যান্সারের জটিল পর্যায়ে পৌঁছে চিকিৎসা নিতে আসেন। তখন রোগ অনেক ছড়িয়ে পড়ে এবং চিকিৎসা কঠিন হয়ে যায়। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সব পর্যায়ের হাসপাতালে ইপিসিবিসিএসপি প্রকল্পের মাধ্যমে স্ক্রিনিং কাঠামো গড়ে উঠেছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৬০০ হাসপাতাল ও ক্লিনিকে স্ক্রিনিং করা যাচ্ছে। ৫২টি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সারের আগাম চিকিৎসা ও রোগ শনাক্ত করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৬ লাখ নারীকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য ৩০ লাখ নারীকে এই কর্মসূচির আওতায় আনা। এজন্য কীভাবে ৩০-৬০ বছর বয়সি সব নারীকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা যায়, সে পদ্ধতি নির্ধারণ করা দরকার। এটি দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ হলেও আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, অপ্রতুল বাজেট ও প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প বাজেট দিয়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে। ইলেকট্রনিক ডাটা ট্রাকিংসহ  জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচির আজকের অনুষ্ঠানটিও অসাধারণ। যেখানে স্বাস্থ্যখাতের তৃণমূল পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ রয়েছেন। কমিউনিটি পর্যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অপূর্ব মেলবন্ধন আজকের আয়োজন। জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ, চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণ ও নারী স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটিকে ইনস্টিটিউটে উন্নীত করা হবে। বিশেষ করে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ ব্লকের ৬ষ্ঠ, ১০ম ও ১১ তলা নিয়ে স্তন ক্যান্সার ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার নির্ণয়ে স্ক্রিনিং কার্যক্রম, চিকিৎসাসেবাসহ এ ধরনের রোগীদের সামগ্রিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে একটি আলাদা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হবে। 

আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বে গবেষণা সমূহের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন বিএমইউর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।

দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএমইউর ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএমআরসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা. নূরে আলম সিদ্দিকী। 

অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিএমইউর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএমইউর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ।

 বাংলাদেশে জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং ও প্রতিরোধ কার্যক্রম বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক (ইপিসিবিসিএসপি) অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা।