বাসস
  ২৫ মে ২০২৫, ১৯:৩৬

জরায়ুমুখ ক্যান্সারে সর্বাধিক আক্রান্ত ৩৫-৩৯ বছর বয়সী নারীরা : গবেষণা প্রতিবেদন

ছবি : বাসস

ঢাকা, ২৫ মে, ২০২৫ (বাসস) : ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সার সংক্রমণের হার সর্বাধিক। এ ক্যান্সারের প্রধান কারণ উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচআর-এইচপিভি)। 

আজ রোববার দুপুরে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) শহীদ আবু সাইদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ গবেষণার ফলাফল দেশের জরামুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের কার্যকর উন্নয়ন এবং নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী গবেষকরা।

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, শহর বনাম গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে পরিচালিত ৩ হাজার ৮৫৬ জন মহিলার উপর একটি বিশ্লেষণাত্মক গবেষণা চালানো হয় বিএমইউ’র অধ্যাপক ডা. শিরিন আক্তার বেগমের নেতৃত্বে। এ গবেষণায় সামগ্রিকভাবে এইচআর-এইচপিভি সংক্রমণের হার ছিল ৩ দশমিক ৬ শতাংশ যা সংখ্যায় ১ শত ৩৮ জন। সর্বোচ্চ সংক্রমণ ছিল সিলেটে (৬ দশমিক ৪ শতাংশ) এবং সর্বনিম্ন রাজশাহীতে (১ দশমিক ৭ শতাংশ)। সিলেটের গ্রামীণ অঞ্চলে সংক্রমণ ছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ, যা শহরাঞ্চলের তুলনায় বেশি। গবেষণায় ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে সংক্রমণের হার সর্বাধিক পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের তিনটি জেলায় গবেষণা চালানো হয়েছে বিএমইউ’র সহযোগী অধ্যাপক ডা. নূর-ই-ফেরদৌসের নেতৃত্বে। ঝালকাঠি, কক্সবাজার, বাগেরহাটে বিবাহিত ৯০০ জন মহিলার মধ্যে চালানো গবেষণায় এইচআর-এইচপিভি সংক্রমণের হার ছিল ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ যা সংখ্যায় ২৬ জন। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ পাওয়া গেছে ঝালকাঠিতে যা তিন শতাংশ। গবেষণাটি এই অঞ্চলে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে জিনো টাইপিং-ভিত্তিক স্ক্রিনিং প্রবর্তনের সুপারিশ করে।

মুগদা মা ও শিশু হাসপাতালের ডা. জাকাত ফাইকার স্ক্রিনিং পদ্ধতির তুলনা বিষয়ক গবেষণায়, ৪ হাজার ৭৯২ জন মহিলাকে দুটি গ্রুপে ভাগ করে ভায়া + এইচপিভি এবং শুধু এইচপিভি স্ক্রিনিং’র কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা হয়। ভায়া + এইচপিভি পদ্ধতিতে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ পজিটিভ পাওয়া গেলেও শুধু এইচপিভি-তে এই হার ছিল ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। একত্রিত পদ্ধতিতে রোগ শনাক্তকরণ ও ফলো-আপের হার বেশি ছিল, যা স্ক্রিনিং কার্যক্রমের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের দুটি উপজেলায় জরায়ুমুখ ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ এইচপিভি পরীক্ষা বিষয়ক একটি পাইলট গবেষণা পরিচালনা করেন ডা. আসমা আক্তার সোনিয়া। বাংলাদেশে জরায়ুমুখ ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ে জিনোটাইপসহ উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ এইচপিভি পরীক্ষার ভূমিকা চিহ্নিত করাই এর উদ্দেশ্য। প্রতিটি গবেষণা এলাকা থেকে ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী দশ হাজার মহিলাদের নিয়ে এই গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণার ফলাফলে ৩ দশমিক ২ শতাংশ যা সংখ্যায় ৩ শত ১৮ জন মহিলার এইচআর-এইচপিভি সংক্রমণ রয়েছে। সমস্ত মহিলাদের মধ্যে ১ শতাংশ যা সংখ্যায় ৯৭ জন মহিলার এইচপিভি ধরণ ১৬ এবং ০ দশমিক ২ শতাংশ, সংখ্যায় ২০ জন মহিলার এইচপিভি ধরণ ১৮ ছিল। এই গবেষণায় এইচআর-এইচপিভির প্রাদুর্ভাব তুলনামূলকভাবে কম (৩ দশমিক ২ শতাংশ)। ভায়া এর তুলনায় এইচআর-এইচপিভি পরীক্ষা উচ্চ সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করে বলে প্রমাণিত।

স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং বিষয়ে ডা. সাদিয়া রসুলের গবেষণায় ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশন (সিবিই) এবং ম্যামোগ্রাফির সংমিশ্রণে স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণে উচ্চ সংবেদনশীলতা (৯৩ দশমিক ৩ শতাংশ) এবং নির্দিষ্টতা (৯৭ দশমিক ৬ শতাংশ) দেখা যায়, যা প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্তকরণের সিবিই-এর গুরুত্ব নির্দেশ করে।
জাতীয় পর্যায়ে স্ক্রিনিং ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিএমইউ’র অধ্যাপক আশরাফুন্নেসার নেতৃত্বে রাজশাহী বিভাগে ডিএইচআইএস২ ভিত্তিক একটি ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থার ই-এইচআইএস এর মাধ্যমে স্ক্রিনিং কার্যক্রম পরিচালনা ও মূল্যায়ন করা হয়েছে। এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত, দেশের ১৪ হাজার ২১৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছে। এর মাধ্যমে স্ক্রিনিং, কলপোস্কোপি এবং ট্র্যাকিং-এর মধ্যে কার্যকর সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। তবে, দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে এসেছে। জরায়ু ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য ৬০ লক্ষ ৯৩ হাজার ২ শত ২৪ জন মহিলার ভায়া পরীক্ষা করে ২,০৫,৩৫৮ জনের পজেটিভ পাওয়া যায় শতকরা হিসেবে এ হার ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বাংলাদেশে লক্ষ্য মাত্রার ২১ শতাংশ মহিলাকে স্ক্রিনিং কর্মসূচির আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।

আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বে গবেষণা সমূহের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন বিএমইউর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। এতে সহ-সভাপতিত্ব করেন বিএমইউ এর রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম। 

দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএমইউর ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএমআরসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা. নূরে আলম সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএমইউর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ। বাংলাদেশে জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং ও প্রতিরোধ কার্যক্রম বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক (ইপিসিবিসিএসপি) অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা।