বাসস
  ১০ মে ২০২৫, ২০:৩২

রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় কমাতে ডাক্তারদের ভূমিকা রাখতে হবে : বিএমইউ উপাচার্য

শনিবার বিএমইউ এ বিশ্ব লুপাস দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে রিউমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। ছবি: বাসস

ঢাকা, ১০ মে, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেছেন, রোগীর ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাস্থ্যখাতের মোট ব্যয় দিনে দিনে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রায় ৭৩ শতাংশে পৌঁছেছে। অথচ ২০৩০ সালের মধ্যে চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ বহন করবে সরকার এবং ৩০ শতাংশ ব্যয় রোগী বহন করবে এমন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। 

তিনি বলেন. কিন্তু রোগীর নিজস্ব ব্যয় কমার পরিবর্তে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থায় চিকিৎসার জন্য রোগীর নিজস্ব ব্যয় কমিয়ে আনা এখন সময়েরই দাবি। তাই রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় কমাতে ডাক্তারদের ভূমিকা রাখতে হবে।

আজ শনিবার বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) এর শহীদ ডা. মিল্টন হলে বিশ্ব লুপাস দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে রিউমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উপাচার্য বলেন, রোগীরা চিকিৎসার জন্য বেশিরভাগ অর্থ ব্যয় করেন ওষুধ ক্রয়ে। গাইডলাইন অনুসরণ ও প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা চালু করতে পারলে রোগীর ব্যক্তি পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব। চিকিৎসকরা রোগীদের প্রেসক্রিপশনে এমন ওষুধ লিখবেন যা রোগীর জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় ও সুলভমূল্যে পাওয়া যায়। আন রেজিস্ট্রার্ড ওষুধ বা প্রোডাক্ট কোনোভাবেই প্রেসক্রিপশনে লেখা যাবে না। বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগের চিকিৎসকগণ প্রেসক্রিপশনে এমন ওষুধ লিখেন যা রোগীর জন্য অতি প্রয়োজনীয় এবং খরচও কম। তাই এটা হতে পারে সকল চিকিৎসকদের জন্য দৃষ্টান্ত। তাহলেই চিকিৎসার খরচ কমে আসবে। রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় কমাতে ডাক্তারদের ভূমিকা রাখতে হবে।

এসময় তিনি আরো বলেন, বিএমইউ’র রিউমাটোলজি বিভাগে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের ফ্যাকাল্টি ও গবেষক। তারা চিকিৎসার জন্য গাইডলাইন তৈরি করেছেন। পাবলিকেশন্সের  দিক থেকেও তারা এগিয়ে রয়েছেন। বিএমইউ’র রিউমাটোলজি বিভাগ চিকিৎসা শিক্ষা, গবেষণা ও সেবাসহ অনেক ক্ষেত্রেই রোল মডেল।

উপাচার্য তার বক্তব্যে বিএমইউ’র রেসিডেন্টদের বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে অধিকতর সম্পৃক্ত হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়াও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে রিউমাটোলজি বিভাগের রোগী দেখার কার্যক্রম শুরু করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকদের আহ্বান জানান।

সেমিনারের পূর্বে রিউমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের উদ্যোগে বি ব্লকের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয় এবং উক্ত বিভাগের উদ্যোগে সি ব্লকে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘লুপাস কর দৃশ্যমান’।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, লুপাস হলো বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় এক রোগ, যা মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি সাধন করতে পারে। এটি সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিই রোগীদের সঠিক সহায়তা করতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। লুপাস একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ নেকড়ে। যেহেতু এই রোগের আক্রমণ অনেকটা নেকড়ের আক্রমণের মতো আকস্মিক, তাই একে লুপাস বলা হয়। আজ পর্যন্ত এই রোগের সঠিক কোনও কারণ সম্পূর্ণ জানা যায়নি। বিশ্বে ৫০ লাখ লুপাস আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। এ রোগ প্রতি এক লাখে ২০ থেকে ১৫০ জনের হতে পারে। শতকরা ৯০ ভাগ লুপাস রোগী কম বয়সী নারী। ছেলেদের এই রোগের প্রকোপ মেয়েদের চেয়ে অনেক কম। লুপাসের সাধারণ উপসর্গগুলো হলো-চুল পড়া, মাথা ব্যথা, নাক ও গালের ওপর প্রজাপতির পাখার মত লাল চাকা, চরম ক্লান্তি বা অবসাদ, জ্বর, মুখে বা নাকে ঘা, গিরায় ব্যথা বা ফোলা, অস্বাভাবিক রক্ত জমাট, রক্তশূন্যতা, বুকের বা গভীর নিশ্বাসের সময় ব্যথা, রোদ বা আলোয় শরীরের চামড়ায় প্রভাব বা জ্বালাপোড়া, ঠাণ্ডায় আঙুল সাদা বা নীলাভ হয়ে যাওয়া এবং হাত, পা ও চোখের চারপাশে ফোলা ইত্যাদি। এই রোগ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ আক্রান্ত হয়। এমনকি ব্রেন, হার্ট, কিডনি, চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

অনুষ্ঠানে বিএমইউ’র প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. শামীম আহমেদ, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক  ডা. মো. আবু শাহীন, অধ্যাপক ডা. মিনহাজ রহিম চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, শিশু বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মানিক কুমার তালুকদার, অধ্যাপক ডা. মো. ইমনুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল ইসলাম প্রমুখসহ উক্ত বিভাগ দ্বয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্ট ও সংশ্লিষ্ট রোগীরা উপস্থিত ছিলেন।