বাসস
  ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:৪৭
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:১৪

সবার আগে শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে 

ছবি: ইউনিসেফ

ঢাকা,  ১২ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : দেশে পাঁচ বছরের নীচে শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে। এই বয়সী শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করা গেলে তাদের গ্রোথ ভালো হবে ও সুস্থ থাকবে, তারা পড়ালেখা ভালো করবে। খর্বাকৃতি ও ওজনস্বল্পতার মতো শারীরিক জটিলতাও কমে আসবে। 

এদেশে অপুষ্টির প্রধান কারণ হচ্ছে- অধিক জনসংখ্যা, দারিদ্র, পুষ্টি সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অসচেতনতা। এ ছাড়া অধিক জনসংখ্যার কারণে খাদ্যদ্রব্যের সহজলভ্যতাও কমে যায়। ফলে শিশু, কিশোর-কিশোরীরা স্বাভাবিক পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। 

আর্থিক কারণে প্রয়োজনীয় খাবার খেতে না পারায় অপুষ্টির শিকার হয় অনেকে। আবার যে পরিবারে অর্থের সমস্যা নেই, সেই পরিবারের ছেলেমেয়েরাও অতিরিক্ত পরিমাণে জাঙ্কফুড খাওয়ায় অপুষ্টির শিকার হতে পারে। 

প্রতিটি শিশুর জীবনের প্রথম ২৪ মাসে পুষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশু প্রথমত মাতৃদুগ্ধের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে পুষ্টি পায়। শিশুর বয়স ছয়মাস হলে মাতৃদুগ্ধের পাশাপাশি পরিপুরক খাবার দিতে হয়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় অপুষ্টির কারণে অনেক শিশু খর্বকায় ও কৃশকায় হচ্ছে। এ ধরনের শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অপেক্ষকৃত কম থাকে। ফলে মৃত্যুঝুকি বেশী থাকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবার আগে মা ও শিশুর পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। বিশুদ্ধ পানি ও উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন নিশ্চিত করতে হবে। মাতৃদুগ্ধ পানে জোর দিতে হবে। শিশু ও মায়ের এসব খাবারের বিষযে সমাজের সবাইকে সচেতন করতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবদেহের সবকয়টি উপাদান সচল রাখার জন্য পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন রয়েছে। দুধ হলো তাদের মধ্যে অন্যতম একটি খাবার, যার কোন বিকল্প নেই। দেহ গঠনের প্রয়োজনীয় সকল প্রোটিন দুধে পাওয়া যায়। শিশু, বাড়ন্ত বয়সী, অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য প্রতিদিন দুধ অপরিহার্য। শিশু ও বাড়ন্ত বয়সে হাড়, দাঁতের গঠন ও মজবুতের জন্য এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধ করার জন্য দুধ খুবই প্রয়োজন। 

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) অন্যতম একটি লক্ষ্য হচ্ছে পুষ্টি। শিশুর জন্মের পর থেকে তিন মাসের মধ্যে খর্বাকৃতির প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশী। আমাদের দেশের শিশুদের খর্বাকৃতি ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে কৃশকায় হওয়ার হার ৫ শতাংশের কম হতে হবে। বর্তমান এ হার ১১ শতাংশ। আর ১৫ শতাংশ হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি অবস্থার কথা বলেছে। 

দেশের মানুষের পুষ্টি ও খাদ্য নিয়ে জ্ঞানের অভাবই মুলত দায়ী, অর্থনৈতিক কারণ নয়। অনেকেরই ধারণা বেশী বেশী দুধ ও মাংস খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কিন্তু ধারণাটি সঠিক নয়। প্রতিটি মানুষেরই সুষম খাবার অর্থাৎ খাদ্যের সব কয়টি উপাদানের উপস্থিতি খাবারে থাকতে হবে, এমন সব খাবার খাওয়া উচিত। সে জন্য মাংস ও দুধের পাশাপাশি মাছ, ডিম, ডাল, ভাত, রুটি, সবজি, ফলমুল সবই খেতে হবে। এ ছাড়া বিশেষ কোনো একটি খাবার বেশী বেশী খাওয়া ভালো নয়। কিশোরী মায়েদের মাতৃত্ব সম্পর্কে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা না থাকার ফলে তারা গর্ভধারণ করলে শিশুটির অপুষ্টি হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। 

সার্বিকভাবে দেশে শিশু, কিশোর-কিশোরীদের অপুষ্টি দূর করতে ব্যাপক উদ্যোগ এখন থেকেই গ্রহণ করা প্রয়োজন। শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো, উপযুক্ত সম্পুরক খাবার খাওয়ানো, ছয় মাস অন্তর অন্তর ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানো-এই কার্যক্রম বাড়াতে হবে। শিশু বয়স থেকেই এটা করতে হবে। তাহলে শিশুদের অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। কিশোর বয়সে অপুষ্টির শিকার কম হবে। ভাতের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাল, শাক-সবজি, দেশীয় ফল খেতে হবে। দেশে এসব খাবারের আবাদও বাড়াতে হবে। সমাজ থেকে অপুষ্টি দূরীকরণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সকল স্তরের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করতে হলে বেশী বেশী প্রচার প্রচারণামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। তবেই এদেশের হাজারো শিশুকে অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।