শিরোনাম
ঢাকা, ২৫ মে ২০২৫ (বাসস) : ৩৭তম জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় ১০টি ইভেন্টে অংশ নিয়ে ৯টিতে সোনা জেতা নেত্রকোনার ছেলে তন্ময় একটিতে গড়েছেন নতুন জাতীয় রেকর্ড। তারই স্বীকৃতিতে হয়েছেন সেরা সাঁতারু।
নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামের এই সন্তান নিজ জেলাকে করেছেন গর্বিত। বৈশ্বিক আয়োজনে দেশকে নিয়ে যেতে চান অনন্য উচ্চতায়।
স্কুল শিক্ষক কামাল উদ্দিন খান এবং রুমা বেগমের সন্তান ছোটবেলা থেকে ছিলেন সাহসী আর ডানপিটে৷
শৈশবে বেশিরভাগ সময় পুকুরে, বাড়ির পাশের নদীতে সাঁতরাতে দিনের অধিকাংশ সময় পার করেছেন। তন্ময়ের বাবা ছেলের সাঁতারে আগ্রহের বিষয়টি নজড়ে নেন। সাঁতারের পাশাপাশি ফুটবল খেলায় ভীষণ নেশা ছিলো তার। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো তার প্রিয় ফুটবলার।
রোনাল্ডো ভক্ত এই কিশোর ছোটবেলায় ফুটবলার হতে চেয়েছিলেন। বিকেএসপিতে ভর্তি হতে এসে ট্রায়াল দিয়েছিলেন ফুটবলে। বিকেএসপির সুইমিং পুলের সৌন্দর্য দেখে সাঁতারেও দেন ট্রায়াল। কিন্তু ফুটবলে তার সুযোগ হয়নি, সাঁতারে উত্তীর্ণ হওয়ায় তাতেই বাবার পরামর্শে ভর্তি হন বিকেএসপির সাঁতার বিভাগে। গ্রামের পুকুরে মধ্যদুপুরে সাঁতার কাটা এ বালক জীবনের প্রথম সুইমিং পুল দেখতে পান বিকেএসপিতে এসে। সেখানেই তিনি দেখতে পান দেশসেরা সাঁতারু আসিফ রেজার ছবি। এ ছবি দেখে তন্ময়ের মধ্যে আসে স্পৃহা, তিনিও স্বপ্ন দেখেন তাঁর ছবিও একদিন এভাবে টাঙানো থাকবে। আর সেই আকাঙ্খা থেকেই শুরু করেন অনুশীলন, কাউকে জানাননি, নিজেকে প্রস্তুত করেন আগামীর জন্যে।
অদম্য সাহস, শক্তি আর অধ্যবসায়ের সংমিশ্রণে নিজেকে গড়ে তুলেন, শক্তি সঞ্চার করেন, ফলশ্রুতিতে তন্ময় জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় যুব ১৮-২০ গ্রুপে গড়লেন নতুন জাতীয় রেকর্ড। ১০টি ইভেন্টে অংশ নিয়ে ৯টিতে সোনা জেতা তন্ময় একটিতে গড়েছেন নতুন জাতীয় রেকর্ড।
১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে ৫৫.২১ সেকেন্ডে তিনি সাঁতার শেষ করেন। ভেঙে ফেলেন ২০২১ সালে গড়া গোপালগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের সাঁতারু মো. ইসলামের ৫৫.৩৪ সেকেন্ডের আগের রেকর্ডটি। ৪০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে অংশ নিয়েছিলেন। যে ইভেন্টে ২০১৫ সালে বিকেএসপিরই আরেক সাঁতারু আরিফুল ইসলাম ৪ মিনিট ২৮ সেকেন্ডে শেষ করে রেকর্ড গড়েছিলেন। তার সামনে সুযোগ ছিল সেই রেকর্ডও ভাঙার। স্বর্ণপদক জিতলেও তন্ময় ১৩ সেকেন্ড বেশি সময় নিয়ে শেষ করেছেন নিজের হিট।
বারহাট্টা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সাঁতারে প্রথম হয়েছিলেন, জিতেছেন বেশ কয়েকটি পুরস্কার। গ্রামের পুকুরে সাঁতার কাটা এ ছেলে বিকেএসপিতে আসার আগে জানতেন না সাঁতারেরও বিভিন্ন ধরন আছে। সুইমিংপুলেও সাঁতার কাটা যায়।
আর এখন সাঁতার প্রতিযোগিতায় ঝাপ দিচ্ছেন পুলে। সাঁতারে নিজেকে উজার করে দিয়ে এবার হলেন দেশসেরা। ৩৭তম জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতারে সবার সেরা হলেন হাওরাঞ্চলে বেড়ে ওঠা তন্ময়।
এতোগুলো ইভেন্টে সোনার মেডেল জিতে ক্লান্ত শরীরে যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন ফোনে কথা বলেছেন বাসস প্রতিনিধির সঙ্গে।
তিনি বাসসকে জানান, প্রবল ইচ্ছাশক্তি, অধ্যবসায় আর নিজের কৌশলকে কাজে লাগিয়ে মানুষ অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে, অধরাকে ধরতে পারে।
প্রতিযোগিতা শুরুর আগে তিনি অতিরিক্ত অনুশীলন করেছেন, নিজেই নিজের সাথে প্রতিযোগিতা করেছেন। তার পুরস্কারও পেয়ে গেছেন।
তাঁর এ সাফল্যে রয়েছে বেশ কয়েকজনের বিশেষ অবদান। নিজের পরিবারের সহযোগিতার পাশাপাশি বিকেএসপিতে এসে যে সহযোগিতা পেয়েছেন তা প্রকাশ করেছেন কৃতজ্ঞতার সাথে।
সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পাশাপাশি সব কিছুর জন্য বিকেএসপিকে ও তাঁর কোচদেরকে এ অসাধারণ সাফল্যের অবদানের কথা স্মরণ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিকেএসপিতে ভর্তি হই, শুরুতে কোচরা সন্তুষ্ট ছিলেন না। কারণ আমি যে সাঁতারের কোনো ব্যাকরণই জানতাম না। তারপর আমার কোচ সাঈদ স্যার, মনিরুজ্জামান স্যার আমাকে সব শিখিয়েছেন। দেড় বছর পর আমি কোনো জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। আর আজ এখানে। বিকেএসপির ডিজি স্যারের কাছেও কৃতজ্ঞ, তিনি অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন আমাদের।’
দেশের গন্ডি পেরিয়ে তন্ময়ের দৃষ্টি এখন বৈশ্বিক আয়োজনে, লাল সবুজের বাংলাদেশের পতাকাকে বিশ্ব দরবারে উঁচিয়ে দেখাতে চান। নিজেকে বৈশ্বিক আয়োজনে প্রমাণ করতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি।
ফ্রান্সের অলিম্পিক সাঁতারু মেনান্ডে তার প্রিয় একজন সাঁতারু।
তাঁর এবারের লক্ষ্য ২০২৬ সালে জাপানে আসন্ন এশিয়ান গেমসে সোনা জয়। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পেলে এই আয়োজনে সোনা জিততে পারবেন বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন তন্ময়। স্বপ্ন দেখছেন অলিম্পিকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার।