বাসস
  ২৬ মে ২০২২, ১১:৪৫

ফুলের মেলায় বর্ণিল ঢাকা-চট্টগ্রাম ও গাজীপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক

ঢাকা, ২৬ মে, ২০২২ (বাসস) : ফুল ভালোবাসেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। প্রতিটি মানুষেরই রয়েছে কোনো না কোনো ফুলের প্রতি দুর্বলতা। ফুল মানুষের মনে আনন্দের দোলা দেয়, মনকে করে সুরভিত। এক কথায় বলতে গেলে, ফুল সবারই ভালো লাগে। বর্ষার বহুমাত্রিক উজ্জ্বল্য ছড়িয়ে লাল, গোলাপী, নীল, হলুদ, বেগুনি ও সাদাসহ বিভিন্ন রঙের বাহারী ফুলের মেলায় বর্ণিল নিজেকে সাজিয়েছে ঢাকা-চট্রগ্রাম ও গাজীপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দুটি।
বাসসের কুমিল্লা (দ.) সংবাদদাতা কামাল আতাতুর্ক মিসেলের পাঠানো খবরে জানা যায়- 
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে যেখানেই চোখ পড়বে সেখানেই ফুলের সমারোহ। মহাসড়কের ফোরলেনের আইল্যান্ডে কুমিল্লাসহ ফেনী, চট্টগ্রাম অংশে বর্ণিল ফুলের মেলা বসেছে। লাল, হলুদ নানা রঙের ফুলের গাছ। মনোরম দেখতে দেখতে যাতায়াত করছেন যাত্রীরা। এই দৃশ্য দেখে খুশি যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। 
কুমিল্লা সড়ক ও জনপদ অফিস সূত্র জানায়, এক পাশের আলো যেন অন্য পাশে এসে দুর্ঘটনা না ঘটায় তাই এই কম উচ্চতার ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং আইল্যান্ড দখলমুক্ত রাখতেও এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। 
ফোর লেনের প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম সারোয়ার বাসসকে জানায়, কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার মহাসড়ক। এই মহাসড়কে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে হৈমন্তী, কুর্চি, টগর, রাঁধাচূড়া, কাঞ্চন, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কদম, বকুল, পলাশ, কবরী, ক্যাসিয়া ও জারুল প্রভৃতি। এরকম ৫৪ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এগুলোর উচ্চতা ২ মিটার থেকে ৫ মিটার। এ ছাড়া সড়ক স্লোপে জলপাই, অর্জুন, কাঁঠাল, মেহগনি, শিশু, আকাশমণি, চালতা, নিম, একাশিয়া, হরিতকীসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৪২ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। 
মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা পালকি সিনেমা হল থেকে হাড়িখোলা পর্যন্ত ও আলেখারচর এলাকায় সারি-সারি সোনালু গাছে ফুটেছে হলুদ ফুল। গ্রীষ্মের এই সময়ে সোনালু ফুলের সোনাঝড়া রূপে মাতোয়ারা গাড়ি চালক-যাত্রী ও পথচারীরা। অনেক পথচারী ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য প্রাণ খুলে উপভোগ করতে দেখা গেছে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাছুম মিল্লাত মজুমদার বাসসকে জানান, গ্রামের বাড়ি ফেনী থেকে প্রায় এই মহাসড়কে কুমিল্লায় আসি। নানা রঙের ফুলে মহাসড়ক বর্ণিল হয়ে উঠেছে, দেখতে ভালোই লাগে। এগুলোর পরিচর্যা করলে মহাসড়কের এই সৌন্দর্য অটুট থাকবে। 
সড়ক ও জনপদ অধিদফতর কুমিল্লা কার্যলয়ের কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বাসসকে  বলেন, ফোর লেন প্রকল্পের আওতায় ১৪ টি বাইপাস, সেতু ও কালভার্ট ছাড়া মহাসড়কের মিডিয়ানে (আইল্যান্ড) এসব গাছ লাগানো হয়েছে। গাছের সুরক্ষায় আমরা নজরদারি করছি।
বাসসের গাজীপুর সংবাদদাতা আলহাজ্ব শেখ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর পাঠানো খবরে জানা যায়- 
বাহারি নানা ফুলে সেজেছে গাজীপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। কৃষ্ণচূড়া, কামিনী, বেলী,গন্ধরাজের মাতাল করা গন্ধে ও নান্দনিক সৌন্দর্যে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করছে সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী মানুষদের। ছড়াচ্ছে অন্যরকম এক ভালবাসার ছোঁয়া।
আওয়ামী লীগ সরকারের বড় মেগাপ্রকল্প হিসেবে প্রথম দফার মেয়াদে ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর ৮৭ দশমিক ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেন বিশিষ্ট মহাসড়কের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ১ হাজার ৮১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। চারটি প্যাকেজে এই প্রকল্পটি সর্বশেষ দায়িত্ব পান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ ইসিবি। নির্মাণকাজ শেষে ২০১৬ সালের ২ জুলাই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচলের উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উত্তরের জেলাগুলোতে যানবাহন চলাচল নির্বিঘেœ করতে আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ফোর লেনে উন্নীত করা। মহাসড়কটি দৃষ্টিনন্দন ও তাতে দুর্ঘটনা রুখতে সড়ক ডিভাইডারের উপর রোপণ করা হয়েছিল ৩০টি প্রজাতির লক্ষাধিক গাছ। এর মধ্যে রয়েছে স্বদেশি নীম, কৃষ্ণচুড়া, রাধাঁচুড়া, কামিনী, বেলী, গন্ধরাজ, কনকচাঁপা, রক্ত করবি, চেরি, নীল কাঞ্চন, লাল কাঞ্চন, জোগাটগর, অগ্নিস্বর, পলাশ, গৌরিচুড়া, ছাতিম, জারুলসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির গাছ। ঢাকাগামী এক বাস চালক রবিন বলেন, এই সড়কটিতে গাড়ি চালিয়ে অন্যরকম এক প্রশান্তি পাই। বিভিন্ন রঙের দৃষ্টিনন্দন ফুলের সমারোহ ও গন্ধে গাড়ি চালানোর সময় এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করে।
ময়মনসিংহগামী মোটরসাইকেল আরোহী শফিক বলেন, এই রাস্তা দিয়ে আমি সাপ্তাহে দুইদিন ঢাকা যাই, আমি মহাসড়ক দিয়ে যাই নাকি বিদেশের কোন রাস্তা দিয়ে যাই বুঝতে পারি না, রাস্তার মাঝখানের লাল, নীল,হলুদ ফুলগুলোর ঘ্রানে মুগ্ধ করে দেয়, যে প্রকৃতি তার সুবাস জানান দিচ্ছে, 
গাজীপুর সড়ক জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন জানান,পরিবেশ বান্ধব মহাসড়ক ও নিরাপদ,আনন্দদায়ক যাত্রার নিশ্চয়তা দিতে সড়ক ডিভাইডারের উপর রোপিত উদ্ভিদগুলোকে সারাবছর জুড়েই পরিচর্যা করা হয়। বিশেষ করে বর্ষায় ফুলের সুবাস ছড়িয়ে পরে আশপাশে। সবুজের সমারোহে ফুলের ঘ্রানে মুখরিত হয়ে পড়ে এই মহাসড়ক ব্যবহার করা যাত্রীরা।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়