বাসস
  ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১২:৩৯

সাপাহার জবই বিল পরিযায়ী পাখির কলকাকলীতে মুখরিত

নওগাঁ, ২২ জানুয়ারি, ২০২২ (বাসস) : শীত মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে নওগাঁ জেলার  সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা সাপাহারের ঐতিহ্যবাহী জবই বিল পরিযায়ী পাখির আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে। পুরো বিল এলাকা এখন নানারকম পাখির কলকাকলীতে মুখর। প্রতিদিন শত শত প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ বিলের অপার সৌন্দর্য আর পাখি দেখতে  এখানে ভিড় করছেন। 
প্রতিবছরের মত এবারেও শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে অতিথি পাখির আগমন বেড়েই চলেছে। বিলের রুপালী জলের উপর এসব পাখির সার্বক্ষণিক ওড়াওড়ি আর তাদের কিচিরমিচির শব্দ আগত দর্শনার্থীদের মন ভরিয়ে তুলছে। সারাদিন কেটে যাচ্ছে পাখি দেখে  আর তাদের ক্যামেরায় এসব মনোরম চিত্র ধারন করে।  
অতীতে কচুরিপানায় সারা বিল ঢেকে থাকার কারণে  সুদুর সইবেরিয়াসহ বিভিন্ন জায়গা হতে প্রায় সারা বছর অতিথি পাখিসহ বিভিন্ন জাতের পাখ পাখালিতে ভরপুর থাকত এ বিল। কালের প্রবাহে এক সময় এ বিল নিজস্ব ঐতিহ্য হারাতে বসেছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের জলাশয়নীতির কারণে বিলটি আবার যথাযথ সংরক্ষিত হওয়ায় আবারো পাখিদের আবাসভূমিতে পরিণত হয়েছে। এর পর বিল পাড়ের কিছু শিক্ষিত বেকার যুবক জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা তৈরী করে বিলে পাখি সংরক্ষণের কাজ শুরু করে। জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজকল্যাণ সংস্থ্রা সভাপতি মোঃ সোহানুর রহমান বলেছেন ২০১৯ সাল হতে এ বিলে অবস্থানকারী বিভিন্ন প্রজাতির পাখির জরিপ শুরু করে। বাংলাদেশ জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ফেডারেশণের সভাপতি বগুড়া আজিজুল হক ব্শ্বিবিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এস এম ইকবাল বলেছেন বন বিভাগের বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এ জরিপ পরিচালনায় লজিষ্টিক সাপোর্ট প্রদান করেছে।  তাদের জরিপ মতে ২০১৯ সালে ৫হাজার ৫শ’ ৯৩টি, ২০২০সালে ৭হাজার ৬শ’ ৮৩টি এবং ২০২১সালে ৯হাজার ৭শ’১২টি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি অবস্থান করে এ বিলে। 
জরিপ মতে ২১সালে পরিযায়ী পাখির মধ্যে পাতি-সরালি ৪ হাজর, লালঝুটি-ভুতিহাঁস ২শ’, গিরিয়া হাঁস ১হাজার ২শ’, পিয়াং হাঁস ১হাজার,পাতি-তিলি হাঁস ২শ, টিকি-হাঁস ৫০,কালাপাখ ঠেঙ্গি২০,গেওয়া-বাটান ৫০,প্রশান্ত সোনাগিরিয়া ২শ’, পাতি ভুতি হাঁস ৭শ’৫০, কালা মাথা গাংচিল ৪, পশ্চিমা কানা কাপাসি ২টি, চখাচখি ১শটি।
দেশী প্রজাতির চা-পাখি ৪শ’ বেগুনি বক ২, কানি বক ৫০,বাজলা বক ৫০, গো-বক ৪২,শামুখ খোল ১হাজার,পানকৌড়ী ২শ’, খাটো কান পেঁচা ২, বড় বক ১৫, মাছ মুরাল ২, সাপ পাখি ৩, ধুপনি ১শ’ কালা মাথা গাংচিল ৪,পশ্চিমা কানা কাপাসি ২, পাতি মাছরাঙ্গা ৫০, সাদা বুক মাছরাঙ্গা ১০টিসহ প্রায় ২৮প্রজাতির পাখি জরিপে পাওয়া গেছে বলে জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির পক্ষে বলা হয়েছে।
এসব পাখি যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির পক্ষ থেকে বিলের একটি অংশে বিশেষ সংরক্ষিত অঞ্চল গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়েছে।  তাদের দাবি এ বিলে সরকারীভাবে বিলের নির্দিষ্ট একটি অংশে অভয়াশ্রম ঘোষণা বা গড়ে তুললে সারা বছর সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ, জীববৈচিত্রের হরেক রকম প্রাণি নিরাপদে বসবাস করতে পারবে। 
এ ব্যপারে সাপাহার উপজেলা নির্বাহী  অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন ,এ উপজেলার জবই বিল একটি ঐতিহ্যবাহী বিশাল জলাশয় পর্যাপ্ত মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি প্রতি বছর শীত মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে। এসব পাখি সংরক্ষণে উপজেলা প্রশাসন থেকে যথাযথ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়। এ ছাড়াও স্থানীয় একটি পাখি সংরক্ষণে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। উপজেল প্রশাসন এ সংগঠনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে থাকে।
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়