বাসস
  ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:২০

‘ডিডিএলজে’-র প্রেমের জ্বরে এখনও কাঁপছে বলিউড

ঢাকা, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বলিউডের এক অনন্য প্রেম কাহিনী ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ বা সংক্ষেপে ‘ডিডিএলজে’। সিনেমাটি ৩০ বছর পার করছে। আগামীকাল ‘ডিডিএলজে’ মুক্তির তিন দশক পূর্ণ হবে।

ভারতে দীর্ঘতম সময় ধরে চলা এই রোমান্টিক চলচ্চিত্রটি এখনও দর্শকদের হৃদয় কাড়ে।

সিনেমাটির প্রথম মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালের ২০ অক্টোবর। মুম্বাইয়ের মারাঠা মন্দির হলে তখন থেকে প্রতিদিনই এই ছবিটির প্রদর্শনী চলছে।

মোহাম্মদ শাকির নামে এক দর্শক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানান, ‘আমি প্রায় ৩০ বার সিনেমাটি দেখেছি এবং দেখতেই থাকব।’ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় ৬০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ৪০ রুপি দিয়ে আবারও টিকিট কিনছিলেন।

ছবিটি শাহরুখ খানকে সুপারস্টার বানিয়েছে আর হিন্দি সিনেমায় আধুনিক প্রেমকে নতুন রূপে উপস্থাপন করেছে। 

আজও সেই জাদুতে মোহিত সবাই। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টায় দর্শকরা নস্টালজিয়ায় ডুবে যায়। যেখানে প্রথা ভাঙ্গা এক তরুন যুগলের প্রেমের গল্পটি পুনরায় জীবন্ত হয়ে ধরা দেয়।

‘সাপ্তাহিক ছুটির দিনের দর্শক সাধারণত কলেজের শিক্ষার্থী ও কম বয়সী যুগলরা,’ জানালেন সিনেমা হলের পরিচালক মনোজ দেশাই।

তিনি বলেন, ‘৩০ বছর পর এখনও রোববারে প্রায় ৫শ’ দর্শক আসে।’

এখন পর্যন্ত সিনেমাটি দেড় হাজার সপ্তাহের বেশি চলেছে। এটি মুম্বাইয়ের অন্য সিনেমা হলে অ্যাকশন থ্রিলার ‘শোলে’ এর চেয়ে অনেক বেশি। এই সিনেমাটিও টানা পাঁচ বছর ধরে চলে। 

‘রোমাঞ্চকর মুহূর্ত’

ছবিটি নতুন প্রজন্মের ভারতীয়দের মুক্ত চিন্তাভাবনা এবং তাদের পিতামাতার রক্ষণশীল মূল্যবোধের সংঘাত তুলে ধরা হয়েছে। 

শেষ দৃশ্যে নায়িকা যখন চলন্ত ট্রেনের পাশে দৌড়াতে দৌড়াতে নায়কের হাত ধরে ফেলে- এখনও উল্লাস, তালি এবং হুইসেলের রোমাঞ্চে হল মাতিয়ে তোলে দর্শকরা।

‘এটাই নড়েচড়ে বসার মুহূর্ত,’ বলে মন্তব্য করেন দেশাই। ‘বাবা মেয়ের হাত ছেড়ে বলছেন, সে (নায়িকা) তার জীবনসঙ্গী হিসেবে এর (নায়কের) চেয়ে ভালো কাউকে পাবে না।’

কিছু ভক্ত ‘ডিডিএলজে’-কে নিজের জীবনের অংশ বানিয়ে ফেলেছেন। এক নারী গত ২০ বছর ধরে নিয়মিত দেখতে আসছেন।

মারাঠা মন্দির হলের পরিচালক দেশাই বলেন, ‘আমরা তার কাছ থেকে টিকিটের দাম নেই না।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘এমন ভক্ত কোথায় পাবেন?’

এখনও মুগ্ধ যুব সমাজ

ছবিটি মুক্তির সময় জন্ম হয়নি ২৩ বছর বয়সী অমকার সারায়। তারপরও তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রজন্মে সম্পর্ক অনেকটাই লেনদেনের মত হয়ে গেছে। কিন্তু এই ছবিতে ভালবাসাকে জয় করতে নায়ক সব বাঁধা পেরিয়ে যায়, কোনো শর্ত ছাড়াই। আমরা টেলিভিশন বা মোবাইলে দেখেছি, কিন্তু বড় পর্দায় দেখার রোমাঞ্চ আরও বেশি।’

‘ডিডিএলজে’ কিছু মানুষের বাস্তব জীবনের প্রেমকাহিনীকেও প্রভাবিত করেছে। এক দম্পতি প্রেম করার সময় ছবিটি দেখেছিলেন। পরে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে দেশাইকে নিমন্ত্রণ জানান।

‘হানিমুনে বিদেশে থেকে ফিরে আবারও তারা ছবি দেখতে এসেছিলেন,’ জানালেন দেশাই।

‘সাংস্কৃতিক স্মারক’

২০১৫ সালে ছবিটির প্রদর্শনী বন্ধ করার কথা ওঠে। কিন্তু ভক্তদের প্রতিবাদে ‘ডিডিএলজে’ এর দৈনিক শিডিউল রাখতে বাধ্য হয় মারাঠা মন্দির হল কর্তৃপক্ষ। হলের পরিবেশও অনেকটাই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সেখানে গরম চায়ের সঙ্গে সিঙ্গারার পুরনো জুটি আজও সবার প্রিয় ।

বোম্বে সেন্ট্রাল স্টেশনের কাছাকাছি হওয়ায় হলের দর্শক আরও বেড়েছে। যাত্রীরা অনেকসময়ই গন্তব্যে রওনা দেওয়ার আগে শো দেখেন। আসেন বিদেশি দর্শকরাও।

স্পেনের পর্যটক কেলি ফেরান্দেজ বললেন, ‘ছবিটি রোমিও-জুলিয়েটের মত, কিন্তু সমাপ্তিটা সুখের। ভাষা না বুঝলেও সঙ্গীত, নৃত্য ও পোশাকের নান্দনিকতা উপভোগ করেছি।’

চলচ্চিত্র সমালোচক বরদ্বাজ রাঙ্গন বলেন, ‘এই সিনেমা ভারতের পুরনো ও নতুন মূল্যবোধের মধ্যে থাকা টানাপোড়েনকে দেখানোর জন্য আজও এতটা জনপ্রিয়।’

তিনি এএফপিকে আরও জানান, সিনেমাটি ভারতের সংস্কৃতির এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে, তাই মানুষ এখনও পছন্দ করে।

রাঙ্গন আরও যোগ করলেন, ‘সিনেমাটি যেন সংস্কৃতির স¥ৃতিস্মারক হয়ে উঠেছে। আমার মনে হয়, এটি চিরকাল হলে চলতে থাকবে।’