বাসস
  ১৯ জুলাই ২০২৫, ২৩:৫৬

শিল্পকলায় জার্মান নাট্যকার ব্রেখটের 'ব্যতিক্রম এবং নিয়ম'-এর দ্বিতীয় সফল মঞ্চায়ন

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ১৯ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে উপজীব্য করে জার্মান নাট্যকার বার্টোল্ট ব্রেখটের 'দি এক্সেপশন এন্ড দি রুল'এর নতুন অনুবাদ ও ব্যখ্যায় 'ব্যতিক্রম এবং নিয়ম' দ্বিতীয়বার সফলভাবে মঞ্চায়ন হয়েছে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল হল ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। দ্বিতীয় দিনে এ নাটকটি মঞ্চস্থ  হলেও উপচে পড়া দর্শকদের নাটক দেখা দেখে বলা যেতে পারে নাটকের ঘটনা বাস্তবিক ও সত্য। এমন কথা বলছিলেন নাটক দেখতে আসা দর্শকরা।

তারা বলেন, নতুন বাংলাদেশের এই সময়ে ব্যতিক্রম এবং নিয়ম এ নাটকের মত আরো নাটক হওয়া প্রয়োজন। এটা সময়ের দাবি।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে নতুন নাট্যপ্রযোজনা নির্মাণের অংশ হিসেবে আজ সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে প্রাচ্যনাটের উদ্যোগে এ নাটক  মঞ্চায়ন হয়।

'ব্যতিক্রম ও নিয়ম' ব্রেখটের শিক্ষামূলক নাট্যগুলোর অন্তর্ভুক্ত। এই শিক্ষা ন্যায়, বৈষম্যহীন সমাজের আহ্বান, ক্ষমতার চেহারা উন্মোচন এবং নাটকের কারিগর আর দর্শকের কাছে সমাজ বিশ্লেষণে বিবেক জাগ্রত করতে উসকে দেন নাট্যকার।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জনদাবি, যা দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতিতে রক্তের রঙে আঁকা আছে তা যেন 'ব্যতিক্রম ও নিয়ম' নাটকেরই বিষয়। অপেক্ষাকৃত নবীন নাট্যজনদের এই প্রয়াস বাংলাদেশে ব্রেখট চর্চায় এক অকিঞ্চিত পদক্ষেপ হয়ে থাকবে। 'এমন উপলব্ধির কথা বলেছিলেন নাটকটির নির্দেশক আজাদ আবুল কালাম।

নাটকটি মূলত জার্মানির নাট্যকার বার্টোল্ট ব্রেখটের রচনাকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন শহিদুল মামুন।

আজাদ আবুল কালাম বলেন, বার্টোল্ট ব্রেখট চর্চা বাংলাদেশে নাট্যআন্দোলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের নাটকে যে প্রতিবাদের ভাষ্য আর সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান, তা ব্রেখট চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করে। নির্দেশক হিসেবে ব্রেখটের নাটক প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে যে অনুপ্রেরণা জন্ম হয়েছিল অভিনেতা হিসেবে তারই ধারাবাহিকতা 'ব্যতিক্রম ও নিয়ম' প্রযোজনায় উজ্জীবিত করে।

ফ্রিৎজ বেনেভিটস আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের আয়োজনে নির্দেশনা দিয়েছিল 'লোক সমান লোক' নব্বই দশকে। সেই প্রযোজনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ এবং জার্মান নির্দেশকের ব্রেখট বিশ্লেষণ এবং দর্শনগত জায়গায় তার উপলব্ধি এক নতুন চিন্তার জন্ম দিয়েছিল। ব্রেখট সম্পর্কে অধিত জ্ঞান প্রায়োগিক স্তরে উপস্থাপনের সূত্রপাত তখন থেকে।

নাটকটির কলাকুশলীর মধ্যে ছিলেন সহকারী নির্দেশনায় শাহীন সাইদুর, মঞ্চ ও আলো পরিকল্পনায় মো: সাইফুল ইসলাম,  মঞ্চ পরিকল্পনা সহকারি তানজি কুন, আলো পরিকল্পনা ও প্রক্ষেপণ সহকারি মো: মোখলেছুর রহমান ও মো. শওকত হোসেন, সঙ্গীতে নীল কামরুল, কোরিওগ্রাফিতে স্নাতা শাহরিন, কোরিওগ্রাফি সহযোগী হিসেবে ডায়না ম্যারেলিন, পোশাক পরিকল্পনায় বিলকিস জাহান জবা, দ্রব্যসামগ্রীতে নূরে জান্নাত ওরিশা ও ঝুমকা মণ্ডল, পোস্টার সব্যসাচী হাজরা, প্রকাশনা অলঙ্করণে শশাংক কুমার সাহা, মঞ্চ নির্মাণ দলে তাপস সরকার, তাপস সরকার রুদ্র, অনসূয়া চক্রবর্তী অপালা, আনান, তৌফিকুর রহমান রেইন, সিফাত মাহমুদ, তাসনুভা কবির আদিতা ও মো: কাউসার, সঙ্গীত প্রয়োগে আন্দোলন মিঠুন, ফুয়াদ বিন ইদ্রিস, চার্লস নিলয় চৌধুরী, প্রিয়ম মজুমদার, অনসূয়া চক্রবর্তী অপালা, শাহীন, রকি, সাকি, সিফাত মাহমুদ, প্রযোজনা অধিকর্তা ফয়সাল কবির সাদি, প্রযোজনা অধিকর্তা সহকারি তাসফিয়া ফাইরোজ আনান এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা ছিলেন শতাব্দী ওয়াদুদ।

নাটকটিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে সওদাগর এবং তার  সঙ্গী মজুরের দীর্ঘ পথ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে। বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের মধ্য দিয়ে রুক্ষ ও মনুময় অঞ্চল পাড়ি দেবার সময় তাদের কথোপকথন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নাটকের একপর্যায়ে দেখা যায় মনিব অবিশ্বাসের কারণে তার মজুরকে হত্যা করে। পরবর্তীতে বিচার চাইতে গেলে আইন ব্যবস্থার অচলাবস্থা এবং বিচারহীনতার কারণে খুনি কিভাবে পার পেয়ে যায় সেই বিষয়গুলো এখানে ফুটে উঠেছে। নাটকে ধনী ও গরিবের বৈষম্য, শ্রম ও মজুরির বৈষম্য-ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।

আইন কাদের জন্য? ন্যায় বিচার বলতে আমরা কি বুঝি?  এবং ন্যায় বিচারের প্রকৃত ফল ভোগী কারা-এসব প্রশ্ন তুলে নাটকটি শেষ হয়।

প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাখাওয়াত হোসেন রেজভী, আহম্মেদ সাকী, শতাব্দী ওয়াদুদ, শাহীন সাইদুর, ইয়াদ খোরশিদ ঈশান, রকি খান, মো: রফিকুল ইসলাম, জগন্ময় পাল, অদ্রী জা আমিন, অনসূয়া চক্রবর্তী অপালা, ডায়না ম্যারেলিন, নূরে জান্নাত ওরিশা, পরশ লোদী, তাপস সরকার রুদ্র, ফয়সাল কবির সাদি, তৌফিকুর রহমান রেইন, তাসনুভা কবির আদিতা, তাসফিয়া ফাইরোজ আনান, ঝুমকা মণ্ডল, ফুয়াদ বিন ইদ্রিস, আল আমিন খন্দকার, শ্রাবণ শামীম, তাপস সরকার, ডায়না ম্যারেলিন ও অদ্রী জা আমিন।