শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের দুই ছেলে, ব্যাংক কর্মকর্তা ও সাবেক কর কমিশনারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে পে-অর্ডার জালিয়াতির মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এতে অভিযোগ করা হয়েছে, এস আলমের দুই ছেলে কালো টাকা সাদা করার সুযোগের অপব্যবহার করে ৫০ কোটি টাকার ভুয়া পে-অর্ডারের তথ্য দিয়ে তাদের আয়কর নথি দাখিল করেন।
আয়কর নথি পর্যালোচনায় জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পর দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক নিজাম উদ্দিন বাদি হয়ে মামলাটি করেছেন।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম ১ এ দণ্ডবিধির ১০৯, ৪০৯, ৪৬৭, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে বলে আজ জানিয়েছেন জানান উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ।
মামলায় এস আলমের দুই ছেলে আসাদুল আলম মাহির ও আশরাফুল আলম ছাড়া অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর সাবেক উপ-কর কমিশনার আমিনুল ইসলাম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন, মুহাম্মদ আমির হোসাইন, আহসানুল হক, মোহাম্মদ রুহুল আমিন, শামীমা আক্তার, আনিস উদ্দিন ও গাজী মুহাম্মদ ইয়াকুব।
দুদক কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। অভিযুক্ত দু’জন সেই সুযোগ নিয়ে ওই অর্থবছরে ২৫ কোটি করে মোট ৫০ কোটি টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে কর পরিশোধ করেছেন বলে আয়কর নথিতে উল্লেখ করেন। কিন্তু আয়কর নথি ও ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এ সময়ের মধ্যে তাদের নামে কোনো পে-অর্ডার হয়নি। এমনকি তাদের হিসেবে এ পরিমাণ টাকাও জমা হয়নি। অথচ তারা আয়কর নথিতে ভুয়া পে-অর্ডার সংযুক্ত করেন।’
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসাদুল আলম মাহির ২০২০-২০২১ সালের প্রদর্শিত আয়কর রিটার্নে ২০২১ সালের ২৯ জুন তারিখের পে অর্ডারের মাধ্যমে কর প্রদর্শনের তথ্য দেয়। একইসঙ্গে ব্যাংক হিসেবে ওইদিন ২৫ কোটি টাকা জমা এবং উত্তোলন দেখানো হয়। কিন্তু দুদকের তদন্তে দেখা যায় যে, ব্যাংক হিসেবের মাধ্যমে পে অর্ডার ও হিসাব বিবরণী দাখিল করা হয়, সেই ব্যাংক হিসাবটি খোলা হয়েছে হিসাব বিবরণী ও পে অর্ডার দাখিলের আরো ৫ মাস ২০ দিন পর অর্থাৎ একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর। এছাড়াও, টাকা জমার কোনো রশিদও পাওয়া যায়নি।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ২০ ডিসেম্বর ব্যাংকে কোনো লেনদেনের তথ্য পাওয়া না গেলেও সে তারিখে ব্যাংক জমার রসিদ পাওয়া গেছে।
একইভাবে সাইফুল আলমের আরেক সন্তান আশরাফুল আলমের ব্যাংক হিসাবের মধ্য ২০২১ সালের ২৯ জুন পে অর্ডার ইস্যু করা হলেও ওইদিন সেই হিসাবে কোনো টাকা ছিল না এবং পে অর্ডারের টাকা জমা দেওয়ার কোনো রসিদও পাওয়া যায়নি। তা ছাড়াও ২৯ জুন তারিখে ২৫ কোটি টাকা জমা এবং লেনদেনের তথ্য হিসাব বিবরণীতে থাকলেও ২০ ডিসেম্বর তারিখে ব্যাংক জমার রসিদ পাওয়া যায়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আয়কর বিভাগ ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের পরস্পর যোগসাজশে আসামিরা জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া পে-অর্ডার তৈরি করে দণ্ডবিধির ১০৯, ৪০৯, ৪৬৭, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।