বাসস
  ১৪ অক্টোবর ২০২১, ১০:৪৪

কুমিল্লায় পদুয়ার মাছের হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম

॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ১৪ অক্টোবর, ২০২১ (বাসস) : শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লার পদুয়ার বাজার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সংযোগস্থলে অবস্থিত বাজারটির কাঁচাবাজার ও মাছবাজার অংশ প্রায় সোয়া এক কিলোমিটার দীর্ঘ। এ বাজারের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাছবাজার। সপ্তাহের রোব ও বৃহস্পতিবারে বসে এটি।
বাজারে গিয়ে দেখা যায়, তিন সারিতে বসেছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। তাজা মাছ লাফাচ্ছে বিক্রেতার ঢালার ওপরে। বড় সাইজের মাছ দেখতে ও কিনতে বেশি ভিড় দেখা যায়। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে মুখর চারপাশ। কুমিল্লার শাকতলা, জাঙ্গালিয়া, কচুয়া চৌমুহনী, রাজাপাড়া, দিশাবন্দ, নোয়াগাঁও, মোস্তফাপুর, বেলতলি, কোটবাড়ি,  সুয়াগাজী, মিয়াবাজার, চৌয়ারা, কালিকাপুর, লালমাই, বাগমারা, বিজয়পুর, বিজরা, মুদাফফরগঞ্জ, পিপুলিয়া গ্রাম ও এর আশেপাশের সৌখিন ক্রেতারা মাছ কিনতে আসেন এখানে। সড়কের পাশে গাড়ি রেখে মাছ কিনেন অনেকে। বিয়ে, জন্মদিনসহ বড় অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার ও জেলার অভিজাত রেস্তোরাঁগুলো পাইকারিতে মাছ সংগ্রহ করেন পদুয়ার বাজার থেকে।
ব্যবসায়ীদের সূত্র জানায়, এখানে প্রতিদিন আড়াই শ' দোকান বসে। দৈনিক ১০০ মেট্রিক টন মাছ বিক্রি হয় পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে। টাকার অংকে যা আড়াই কোটি টাকার বেশি। সপ্তাহে দুদিন করে মাসে আট থেকে দশটি বাজার বসে পদুয়ায়। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, মৃগেল, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, বিগহেড ও কমনকার্প মাছ। বিক্রি হওয়া মাছের ৫০ শতাংশই এগুলো। অন্যান্য মাছের মধ্যে ২০ শতাংশ ইলিশ, ১০ শতাংশ দেশি ও ২০ শতাংশ সামুদ্রিক মাছ। রুই, কাতলা, মৃগেল ও কার্প জাতীয় মাছগুলো সংগ্রহ করা হয় কুমিল্লার দাউদকান্দি, মেঘনা ও তিতাস উপজেলার প্লাবন ভূমিখ্যাত জলাশয় থেকে। ইলিশ আসে চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে। সামুদ্রিক মাছের বেশিরভাগ সংগ্রহ করা হয় চট্টগ্রাম থেকে। কিছুসংখ্যক মাছ আনা হয় কক্সবাজার থেকে।
সামুদ্রিক মাছের মধ্যে রয়েছে চাপিলা, লইট্যা, সুরমা, কোরাল, টুনা, রূপচাঁদা, বাটা, বাইলা ও চিংড়ি। সামুদ্রিক কাঁকড়াও বিক্রি হয় এখানে। দেশি মাছ আসে কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলা থেকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শিং, মাগুর, কৈ, টাকি, শোল, টেংরা, পাবদা, পুঁটি, কাচকি, বোয়াল, আইড়, বাইন, গজার প্রভৃতি। মাছ বিক্রেতাদের মধ্যে বেশিরভাগের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি ও চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, ঢাকার কারওয়ান বাজারের মৌসুমী ব্যবসায়ী, পদুয়ার বাজারের নিকটবর্তী অঞ্চল, বৃহত্তর কুমিল্লার বেশিরভাগ উপজেলার মাছ ব্যবসায়ীরা মাছ বিক্রি করতে আসেন এ বাজারে।  ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম খুব সহজ হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, সপ্তাহের দুইদিন বাজার বসে।  দ্রুত সব মাছ বিক্রি হয়ে যায়। তাছাড়া আড়তদারের কোনো ঝামেলা নেই। ব্যবসা যা-ই হয়, তাতে লোকসানের মুখে পড়ার ঝুঁকি থাকে না। ক্রেতারাও বেশ খুশি। যাতায়াত সহজ, হাতের নাগালে পাওয়া যায় সব রকমের মাছ। দাউদকান্দির সুমন বিক্রি করেন রুই-কাতলাসহ কার্প জাতীয় মাছ। তিনি জানান, দাউদকান্দির প্লাবনভূমি থেকে মাছ সংগ্রহ করি। প্রতি বাজারে দুই লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। দাউদকান্দির রায়পুর থেকে আসা কবির নামে এক বিক্রেতা জানান, দৈনিক গড়ে দেড় লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয় তার। চাঁদপুরের শাহরাস্তি থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ী তসলিম মিয়া জানান, ২০ বছর ধরে চাঁদপুর থেকে ইলিশ সংগ্রহ করে এ বাজারে বিক্রি করছেন তিনি। প্রতিদিন গড়ে ৫৫-৬০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি হয় তার। বরুড়ার সুমন জানান, দেশি শিং ও চিংড়ি মাছ বিক্রি করি। গড়ে ৪০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি হয়। ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে আসা ব্যবসায়ী আরমান জানান, ঢাকায় মাছ বিক্রির পাশাপাশি সপ্তাহে দুইদিন কুমিল্লায় চলে আসি। এখানে মাছ বিক্রি করা লাভজনক, বিক্রি অনেক বেশি। আলী আকবর নামের এক ক্রেতা জানান, চৌদ্দগ্রামের মিয়া বাজার থেকে অনেক সময় মাছ কিনতে আসি। বাড়ি ২০ কিলোমিটার দূরে হলেও মহাসড়ক দিয়ে আসতে বেশি সময় লাগে না। পছন্দের সব তাজা মাছ পাওয়া যায়। ফারুক আহমেদ নামের অপর এক ক্রেতা জানান, আমাদের বাড়ি পদুয়ার বাজার এলাকাতেই। বাবা-চাচারা মাছ কিনতেন এ বাজার থেকে। আমরাও কিনছি। ঘরের কাছে এমন মাছের মেলা দেখতে বেশ লাগে।
বাজার কমিটির সভাপতি রোটারিয়ান আব্দুল মালেক ভূঁইয়া বাসসকে বলেন, ফুট ওভারব্রিজ থেকে শুরু করে বিএডিসি ভবন পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাছবাজারটি বসত। এখন আঞ্চলিক মহাসড়কে ফোরলেনের কাজ চলায় বাজারটি কিছুটা সংকীর্ণ করা হয়েছে। মাছবাজারটি কুমিল্লার সর্ববৃহৎ। আড়তদারের কোনো ঝামেলা নেই বলে ব্যবসায়ীরা খুব স্বাচ্ছন্দ্যে মাছ বিক্রি করেন। কুমিল্লার ব্যবসায়ীরা ছাড়াও চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকার ব্যবসায়ীরা এখানে মাছ বিক্রি করেন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়