বাসস
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:১১

ভোলার লালমোহনে কৃষকের অভিনব সেচযন্ত্রের উদ্ভাবন

॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ (বাসস) : জেলার লালমোহন উপজেলায় জোয়ার ভাটার পানির  স্রোতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ ও তেলবিহীন অভিনব এক সেচযন্ত্রের উদ্ভাবন করেছেন অলিউল্যাহ নামের এক কৃষক। উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পেশকার হাওলা গ্রামের ওই কৃষক স্থানীয় একটি খালে সেচযন্ত্রটি বসিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পানি উত্তোলণ করে সফল হয়েছেন। বর্তমানে ঘন্টায় প্রায় ৩ হাজার লিটার পানি উত্তোলণ সম্ভব হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষক অলিউল্যাহর এ উদ্ভাবন স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অনেকেই ক্ষেতে বা মাছের ঘেরে পানি দেওয়ার জন্য অলিউল্যাহর কাছে এমন যন্ত্র তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন। এটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে উৎসুক জনতা।
কৃষক অলিউল্যাহ বাসস’কে জানান, আমরা যখন খাল বা নদীতে নামি, তখন দেখি পানির স্রোতের অনেক শক্তি। এর মধ্যে সইকেলের চাকা রাখলে দেখা যায়, চাকা ঘুরছে। এ ভাবনা থেকে সেচযন্ত্রটি উদ্ভাবনের ধারনা পাই। পরে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচে লোহার এঙ্গেল, প্লেন সিট ও প্লাস্টিক পাইপের সাহায্যে তৈরি করি সেচযন্ত্রটি। যেখানে ৮টি পাখা লাগানো রয়েছে, যা পানির স্রোতের সাহায্যে অনবরত ঘুরতে থাকে। প্রতিটি পাখার উপরে ইফপিবিসি ক্লাস ডি পাইপ লাগানো হয়েছে এবং ওইসব পাইপের ভিতরে কয়েল পাইপ লাগিয়ে তা একটি কন্টেইনারে সন্নেবেশিত করা হয়েছে। 
তিনি জানান, এতে করে স্রোতের প্রভাবে যখন পাখাগুলো ঘুরতে থাকে, তখন ইফপিবিসি ক্লাস ডি পাইপগুলো পানি ভর্তি হয়ে কয়েল পাইপের মাধ্যমে কন্টেইনারে যায়। আর কন্টেইনার থেকে আরেকটি পাইপের সাহায্যে জমিতে অনবরত পানি নির্গত হতে থাকে। যন্ত্রটিকে আরও আধুনিকায়ন করা হলে কৃষকদের সেচকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, এমনটা দাবি কৃষক অলিউল্যাহ’র।
সেচযন্ত্রটি দেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে স্থানীয় কৃষক লোকমান আলী, জাবেদ মুন্সি, ও ফয়েজ হোসেন বলেন, আমরা সাধারণত বৈদ্যুতিক মোটর বা ইঞ্জিনের সাহায্যে জমিতে সেচ দেই। তাতে ব্যাপক পরিমাণ খরচ হয়, তবে এটা দেখে মনে হচ্ছে এখন খরচ অনেকটাই কমে যাবে। তার এমন উদ্ভাবন সকল কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ব করবে।
কৃষক অলিউল্যাহ আরো বলেন, বিদ্যুৎ ও ইঞ্জিনের সাহায্যে সেচ ব্যবহার করে প্রতি ৮শতাংশ জমি চাষাবাদে কৃষকদেরকে প্রায় সাড়ে ৬শত টাকা খরচ গুণতে হয়। তবে স্রোতের সাহায্যে চলা এ সেচযন্ত্র ব্যবহারে ৮শতাংশ জমিতে খরচ পড়বে সর্বোচ্চ ১০০টাকা। এতে বিদ্যুৎ খরচ, তেল-মবিল খরচ বহন করা লাগবেনা। তাঁর দাবি, অভিনব এ সেচযন্ত্রটি পরিবেশ বান্ধব। এতে ইঞ্জিন বা বৈদ্যুতিক মোটরের মত কোনও শব্দ নেই। খালে পানির স্রোত যত বাড়বে, এ সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পানিও তত বেশি উত্তোলণ হবে। পানি উত্তোলণ করা সম্ভব হবে রাতদিন ২৪ ঘণ্টা। তাই এ সেচযন্ত্রটি আরও আধুনিকায়ন করতে সরকারি বে-সরকারি অনুদানের দাবি জানিয়েছেন কৃষক অলিউল্যাহ।
এব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবু মো: এনায়েতউল্লাহ বাসস’কে বলেন, এটা কৃষক অলিউল্যাহ’র অনেক ভালো একটা উদ্যোগ। আমরা সাধুবাদ জানাই। কৃষি অফিসের একটি প্রকৌশলী দল সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য পাঠানো হবে। এর কার্যকারিতা ও সম্ভাবতা যাচাই করে প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো কিভাবে আরো ইমপ্রুভ করা যায়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়