বাসস
  ১৫ জুন ২০২২, ০৯:৪৬

স্বপ্নের পদ্মা সেতু: চুয়াডাঙ্গার প্রায় ১৩ লাখ মানুষ আনন্দে মাতোয়ারা

// রাশেদিন আমিন //
চুয়াডাঙ্গা, ১৫ জুন, ২০২২ (বাসস) : পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কথা শোনার পর থেকেই জেলার প্রায় ১৩ লাখ মানুষ আনন্দে মাতোয়ারা। সবখানেই উৎসব দেখা যাচ্ছে। এ সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে নিরলস ভাবে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। বদলে যাবে চুয়াডাঙ্গার জনপদের দৃশ্যপট।
পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন। সকালে ঢাকা গিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আবার রাতেই বাড়ি ফেরা যাবে। এখন সময় ব্যয় হবে না অর্থ সাশ্রয়ী হবে। বিড়ম্বনা আর হয়রানি মুক্ত থাকা সম্ভব হবে শুধু পদ্মা সেতু দিয়ে আসা যাওয়ার কারণে। ফেরিঘাটে অপেক্ষা আর ফেরি না পাওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে ঢাকাসহ অন্য জেলায় চলাচল করতে হতো। সে থেকেই চুয়াডাঙ্গার মানুষ অল্প দিনেই মুক্ত হতে যাচ্ছে। যা সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকারের আন্তরিক চেষ্টায়। 
সব পেশার মানুষ ঝামেলা ছাড়াই দেশের যে কোন প্রান্তে ছুটে যেতে পারবেন পদ্মা সেতুর কারণে। 
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পলাশপাড়ার নারী উদ্যোক্তা টগর খাতুন জানান, আমি হস্তশিল্পের কাজ করি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অর্ডার পায়। যোগযোগ ব্যবস্থার কারণে সঠিক সময়ে পণ্য ডেলিভারি সম্ভব হয় না। অনেকে অর্ডার বাতিল করেন। পদ্মা সেতু দিয়ে পরিবহন চলাচল শুরু হলে এ ভোগান্তি লাগব হবে। ব্যবসার প্রসার ঘটবে।
চুয়াডাঙ্গা জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মো. আহসান আলী বলেন, ঢাকাতে পেশার কাজ, চিকিৎসাসহ অন্য প্রয়োজনীয় কাজে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয়। এক বুক হতাশা নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিতাম। কারণ কোন নিশ্চয়তা ছিল না কখন ঢাকা পৌঁছাবো। আর দিনের কাজ দিনে শেষ করা সম্ভব হবে কি ভাবে হবে। নানা হতাশা ছিল। এখন পদ্মা সেতু নতুন করে কর্ম উদ্দীপনা বাড়িয়ে দিয়েছে। মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্ট ও দেশের অন্য আদালতে যাওয়া লাগে। আগে ইচ্ছা থাকলেও মন সাই দিত না। এখন মামলার কাজে আগ্রাহ নিয়েই সকালে যাবো আর কাজ সেরে রাতেই বাড়ি ফিরে পরিবারের সাথে থাকতে পারবো। ভাল লাগার জায়গা তৈরি হয়েছে পদ্মা সেতু ঘিরে। 
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান জানান, ব্যাক্তিগত কাজে পরিবহনে করে আমি আজ চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা যাচ্ছি। আগের মতই ভয় কাজ করছে নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকা পৌঁছাতে পারবো কিনা। ফেরিঘাটে কি অবস্থা হবে। কত সময় ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় যেতে পারলে অল্প সময়ে পৌছে যাব। আজকের যাওয়া পদ্মা সেতু দিয়ে যেতে পারলে অনেক ভাল লাগেতো। এ জেলার মানুষ শিক্ষা ক্ষেত্রে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে সামনের দিকে অগ্রগামী হচ্ছে। আমরা যখন ঢাকায় যেতাম তখন হাতে সময় ও দিন নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতাম। যাওয়া-আসা নির্ভর করতো রাস্তা ও ফেরিঘাটের উপর। পারিবারিক ও কলেজের কাজে এক সময় নিয়মিত ঢাকামুখি হতে হতো। এখন বয়স হয়েছে, ইচ্ছা থাকলেই যেতে পারি না নানা সমস্যার কারণে। এখন সুন্দর পদ্মা সেতু হয়েছে। উদ্বোধনের পরে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে গাড়িতে চড়ে আয়েশ করে ঢাকা যেতে পারবো। মনের মধ্যে আর ভয় কাজ করবে না।
জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি আফরোজা পারভীন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। পদ্মা সেতু চুয়াডাঙ্গার মানুষের জীবনমান বদলে দিয়েছে। দেশের জন্য প্রধানমন্ত্রী দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। যা কারও পক্ষে কখনও সম্ভব হয়নি। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। রাজনৈতিক ও ব্যাক্তিগত কাজে আমরা ফেরি পার হয়ে ঢাকায় যেতাম। কখন পৌঁছাবো বলা কঠিন ছিল। পদ্মা সেতুর কারণে কয়েক ঘন্টায় ঢাকায় পৌঁছাতে পারবো। গাড়িতে চড়তে-চড়তে গল্প শেষ না হতেই ঢাকা আসবো। দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হল। ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নিয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, বাঙালি জাতির জন্য একটা অবিশ্বাস্য অর্জন। প্রধানমন্ত্রীর সততার কারণে সম্ভব হয়েছে। অনেক চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র হয়েছে পদ্মা সেতু নিয়ে। বিশ্ব ব্যাংক, জাইকা ও এশিয়ান ব্যাংক অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেয়। মিথ্যা দূর্ণীতির অভিযোগ তুলে সারা বিশ্বে একটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সমস্ত চক্রান্ত প্রতিহত করে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করেছেন। পদ্মা সেতু জিডিপিতে ভূমিকা রাখবে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ জেলার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করছেন। যা বলে শেষ করা যাবে না। পদ্মা সেতু নির্মাণ করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ঢাকা যাওয়ার ইচ্ছা আছে আমার।
চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ রাওহা বলেন, অফিসের কাজে প্রতি মাসে ঢাকায় যেতে হয়। ভোরে চুয়াডাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় গেলে অফিস টাইমে পৌছে যাব। কাজে বাড়তি সুবিধা পাব।
মাগুরা মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শফিউজ্জামান সুমন বলেন, মাগুরাতে চাকরি করি। ঢাকাতে পরিবার থাকে। চুয়াডাঙ্গায় ছুটির দিনে আসি। ঢাকায় যেতে হয় দুরপাল্লার পরিবহনে। অনেক কষ্ট হয় ফেরিঘাটে অপেক্ষার সময়। সেই অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। ঢাকা যেতে কোন সমস্যা হবে না। পদ্মা সেতু দিয়েই ঢাকা যাবো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়